কলা খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
পোস্ট সূচিপত্রঃ কলা খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা।
- কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
- কলা কয় প্রকার ও কি কি ?
- কলাতে কি কি ভিটামিন আছে ?
- কলা খেলে কি মোটা হয়ে যায় ?
- সূর্যমুখী কলা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল।
- কলা গাছের উপকারিতাঃ শুধু ফল নয়, গোটা গাছই উপকারি।
- প্রতিদিন কলা খেলে কি উপকার হয় ?
- কলা দিয়ে কি কি খাবার তৈরি করা যায় ?
- কখন কলা খাওয়া উচিত নয় ?
- লেখকের শেষ বক্তব্য।কলা খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা।
কলা খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা
- পটাশিয়ামের ভান্ডারঃ কলা হলো পটাশিয়ামের ভান্ডার কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পেশির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- এনার্জি বুস্টারঃ কলাতে থাকা শর্করা শরীরে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই ক্লান্তি দূর করতে কলা খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরে তৎক্ষনাৎ শক্তি বৃদ্ধি করে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে।
- হজমে সহায়তাঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে হজমের স্বাভাবিক প্রকৃয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই হজমের সমস্যার সমাধান হিসেবে নিয়মিত কলা খান।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ কলাতে আয়রন থাকায় এটি শরীরে রক্ত স্বল্পতা দূর করতে বিশেষভাবে সহায়ক। শরীরে রক্ত বাড়াতে কাজ করে কলা।
- মন মেজাজ ভালো রাখেঃ কলাতে রয়েছে 'ট্রিপ্টোফ্যান' নামক একটি অ্যামিনো এসিড, যা সেরোটনিন হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। আর সেরোটোনিন হরমোন মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বকের যত্নেঃ কলাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং কোষগুলো উজ্জীবীত করতে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ নিয়মিত কলা খেলে আপনার অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কেননা কলাতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, যার ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ঠান্ডা লাগাঃ যাদের কলা খেলে ঠান্ডা লেগে যায় তারা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কলা খেলে ঠান্ডা লাগার সমস্যা হতে পারে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিঃ যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অতিরিক্ত কলা খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেননা কলা শরীরে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- ওজন বৃদ্ধিঃ অতিরিক্ত কলা খেলে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ওজন বাড়ে।
- কিডনি সমস্যাঃ কিডনি রোগীদের অবশ্যই কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।
- অ্যালার্জিঃ কলাতে এলার্জি হয় এমন খুব কম মানুষেরই দেখা যায়। তবে অ্যালার্জি হলে কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
কলা কয় প্রকার ও কি কি ?
কলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি ফল। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকায় কলা একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। কলা যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফলো, এজন্য এই ফল সবার অনেক পছন্দের। তবে আপনি জানেন কি কলা একপ্রকার নয়, বরং এই কলা হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির। চলুন তাহলে জেনে নিন কলার বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে-
কলার প্রধান প্রকারভেদঃ
কলা বিভিন্ন প্রজাতির হলেও, এই ফলকে সাধারণত ২টি প্রধান গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
- ক্যাভেনডিশ গোষ্ঠী
- প্ল্যাটেন গোষ্ঠী
1. ক্যাভেনডিশ গোষ্ঠীঃ কলার ২টি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি গোষ্ঠী হচ্ছে ক্যাভেনডিশ গোষ্ঠী।
- বৈশিষ্ট্যঃ ক্যাভেনডিশ গোষ্ঠীর কলাগুলো সাধারণত আকারে ছোট, হলুদ রঙের এ মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে।
- উদাহরণঃ এই গোষ্ঠীর কলার উদাহরণ হলো- কেলা, মোজাফেরী, রোবাস্টা ইত্যাদি।
2. প্ল্যাটেন গোষ্ঠীঃ প্ল্যাটেন গোষ্ঠী হচ্ছে কলার একটি গোষ্ঠী।
- বৈশিষ্ট্যঃ এই গোষ্ঠীর কলাগুলো সাধারণত আকারে বড় হয়। এরা সবুজ রঙের এবং স্টার্চি হয়। এই কলাগুলো সাধারণত রান্না বা ভর্তা করে খাওয়া হয়।
- উদাহরণঃ প্ল্যাটেন গোষ্ঠীর কলার উদাহরণ হলো- মুসা পারাদিসিয়া, মুসা অ্যাকুমিনাটা ইত্যাদি।
কলার অন্যান্য প্রকার ও তাদের বৈশিষ্ট্য
উপরে কলার যেসব গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা করা হলো সেগুলোর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের কলা পাওয়া যায়। যেমন-
- লাল কলাঃ এই কলাগুলোর রং লাল হয়ে থাকে। এই কলা অনেক সুস্বাদু কারণ এর স্বাদ অনেকটা কমলালেবুর মতো।
- বিশ্ব বাণিজ্যিক কলাঃ বিশ্ব বাণিজ্যিক কলা ক্যাভেনডিশ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বব্যাপী চাষ করা হয় বলে এই কলাকে বিশ্ব বাণিজ্যিক কলা বলে।
- আফ্রিকান হর্ন কলাঃ এই কলা অত্যন্ত সুস্বাদু। মিষ্টি স্বাদের এই কলার আকার ছোট হয়ে থাকে।
- বন্য কলাঃ এই কলা গুলো খাবারের উপযোগী নয়। তবে এর পাতা ও কাণ্ড বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। এরা ছোট আকারের ও বীজযুক্ত হয়ে থাকে।
এই হলো কলার প্রকারভেদ। নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় এই ফল রাখতে হলে কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সবার জানা উচিত।
কলাতে কি কি ভিটামিন আছে
কলা অসংখ্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। পুষ্টিগুণের কারণে কলা আমাদের শরীরের জন্য এতো উপকারি। এই ফল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। কারণ কলাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন। কলাতে বিদ্যমান প্রধান ভিটামিনগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
- ভিটামিন বি৬ঃ স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এই ভিটামিন। আপনার শরীরের শর্করা ও প্রোটিনের পরিপাকে ব্যাপক সহায়তা করে এই ভিটামিন বি৬।
- ভিটামিন সিঃ কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি হচ্ছে একটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আপনার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং কোলাজেন তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ফোলেটঃ আপনার শরীরে কোষ গঠনে এবং রক্ত তৈরিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে ফোলেট। এজন্য ফোলেট আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান, যেটা কলাতে পেয়ে যাচ্ছেন।
- ভিটামিন ইঃ কলাতে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন ই। আর এই ভিটামিন আপনার শরীরের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, কারন ভিটামিন ই হচ্ছে একটি উন্নত মানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
এছাড়াও, কলাতে মিনারেল হিসেবে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি আপনার শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহয়তা করে এবং আপনার হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে কলা বাদ দিবেন না।
কলা খেলে কি মোটা হয়ে যায় ?
কলা খাওয়ার ব্যাপারে একটি প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে সেটা হচ্ছে কলা খেলে কি মোটা হয়ে যায় ? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, কলা খেলে যে আপনি মোটা হয়ে যাবেন এমন কোন কথা নেই। কলা খাওয়া ও ওজন বাড়ার সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলে আপনি ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। চলুন তাহলে আলোচনায় যাওয়া যাক-
কেন অনেকে মনে করেন কলা খেলে মোটা হয়ে যায় ?
কলা খেলে মোটা হয়ে যায় এমন ধারণা অনেকের মনে কেন জাগে চলুন আগে সেটা জেনে নিনঃ
- ক্যালোরিঃ কিছু পরিমাণ ক্যালোরি কলাতে আছে।এই কারণে মানুষ ধারনা করে যে কলা খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে।
- শর্করাঃ শর্করা ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত শর্করা আপনার শরীরে জমা হলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। কলাতে এই শর্করা রয়েছে। কিন্তু শর্করা শরীরে শক্তি প্রদানও করে থাকে।
কলা খেলে আসলে কি হয় ?
- পুষ্টিগুণঃ কলাতে বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। কলাতে শুধু ক্যালরি আছে এমন নয়, ক্যালরির পাশাপাশি আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি। ফাইবার আপনার খাবার হজম হতে সহায়তা করে এবং বেশ কিছু সময় ধরে পেট ভরে রাখতেও সাহায্য করে। যার ফলে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণঃ কলাতে বিদ্যমান ফাইবার ও পুষ্টিগুনের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার পেট ভরে থাকবে। যার ফলে আপনি অন্য খাবার কম পরিমাণে খাবেন। এভাবে আপনার ওজনটাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- ক্যালোরি ব্যয়ঃ যেহেতু কলাতে অল্প পরিমাণে ক্যালরি থাকে। তাই কলা খাওয়ার পর আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম করেন তাহলে ওই অল্প পরিমাণ ক্যালরি সহজেই ব্যয় হয়ে যাই। এ ক্যালোরি ব্যয় করার জন্য আপনার খুব বেশি কষ্ট করা লাগে না।
- পুষ্টিবিদদের মতামতঃ পুষ্টিবিদদের মতে কলা খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়াই ভালো না। অন্যান্য খাবার যেমন আপনাকে সঠিক পরিমাণে খেতে হবে, কলা খাবার বেলাও আপনাকে একটি সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।
কতটা কলা খাওয়া উচিত
- একজন মানুষ সারাদিনে এক থেকে দুইটি কলা খেতে পারবেন। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে বা যাদের কলা খেলে পেটের বা অন্য কোন সমস্যা হয় তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই কলা খাওয়া উচিত। তা না হলে কলা আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা একটি বিস্তার আলোচনার বিষয়। যেহেতু কলা সব জায়গায় সহজে পাওয়া যায় তাই নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
সূর্যমুখী কলা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল
বাংলাদেশের উৎপাদিত একটি বিশেষ প্রজাতির কলা হচ্ছে সূর্যমুখী কলা। এই কলার মোচা সূর্যের মতো ফুটে থাকে বলে এই কলার নাম রাখা হয় সূর্যমুখী কলা। এই কলা শুধু দেখতে সুন্দরী নয় খেতে অনেক সুস্বাদু। অন্যান্য জাতের কলার চেয়ে সূর্যমুখী কলা খেতে অনেক মিষ্টি এবং অনেক বেশি পুষ্টিকর। আসুন তাহলে সূর্যমুখী কলা সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য জেনে নিয়ে যাকঃ
1. সূর্যমুখী কলার বিশেষত্বঃ সূর্যমুখী করার কি কি বিশেষত্ব রয়েছে বা সূর্যমুখী কলা কে কেন অন্যান্য জাতের কলার চেয়ে বেশি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু বলা হচ্ছে সেটা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- পুষ্টিগুণঃ সূর্যমুখী কলাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। এসব পুষ্টিকর উপাদান এই কলায় থাকার কারণে সূর্যমুখী কলা অন্যান্য জাতের কলার চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।
- চাষঃ নিচু এলাকার মাটির চেয়ে সূর্যমুখী কলার সবচেয়ে বেশি ভালো চাষ হয় পাহাড়ী এলাকায়। এগুলো পাহাড়ি এলাকায় এই কলা বেশি পাওয়া যায়।
- স্বাদঃ এই কলা খেতে অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। অন্যান্য কলার চেয়ে বেশি স্বাদযুক্ত হওয়ায় এই কলা মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই পছন্দ করে কলা খেয়ে থাকে।
- ফলনঃ সূর্যমুখী কলার ফলনও অনেক ভালো হয়। প্রতিটি গাছে এই কলা ধরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি। থোকায় থোকায় এই কলা যখন গাছে ধরে থাকে তখন অনেক সুন্দর দেখায়।
- আকারঃ আকারের দিক থেকেও অন্যান্য কলার চেয়ে সূর্যমুখী কলা এগিয়ে। কেননা এই কলা অন্যান্য কলার চেয়ে আকারে বড় হয়।
2. সূর্যমুখী কলার ব্যবহারঃ সূর্যমুখী কলা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
- সরাসরি খাওয়াঃ সূর্যমুখী কলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজ ব্যবহার হচ্ছে পেকে গেলে এটি সরাসরি খেয়ে ফেলা।
- রান্না করে খাওয়াঃ এই কলা আপনি বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে পারবেন। সূর্যমুখী কলা বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, পায়েস ও সুজি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
3. সূর্যমুখী কলা চাষাবাদঃ সূর্যমুখী কলা পাহাড়ি এলাকায় চাষ করলে অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায়। এই কলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলা ও পার্বত্য রাঙামাটি এবং পার্বত্য বান্দরবান জেলায় বেশি উৎপাদিত হয়।
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা আপনাকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলবে। তাই এই বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিন।
কলা গাছের উপকারিতাঃ শুধু ফল নয়, গোটা গাছই উপকারি
- পুষ্টিগুণঃ কলাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। এই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যেমন- পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফাইবার ইত্যাদি। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হজম শক্তি বাড়ায়ঃ করাতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ কলা খেলে আপনার হজম শক্তির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বজায় থাকবে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধঃ নিয়মিত কলা খেলে আপনার হৃদ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।কারণ কলাতে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্যঃ কলাতে রয়েছে অ্যান্টক্সিডেন্ট যেটা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষ কে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যঃ কলাতে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন বি৬ যেটা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যথেষ্ট সহায়তা করে।
- হজমে সহায়তাঃ কলার পাতা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করে আপনার পেটের সমস্যা দুর করে।
- চুলের যত্নঃ কলার পাতা চুলের গোড়া মজবুত ও শক্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহয়তা করে।
- গবাদি পশুর খাদ্যঃ কলার পাতা গবাদি পশু যেমন- গরু, ছাগল ইত্যাদির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- বৃক্কের পাথর প্রতিরোধঃ কলার থোর বৃক্কের পাথর জমা হতে প্রতিরোধ করে।
- হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিঃ কলার থোরে রয়েছে ভিটামিন বি৬ ও আয়রণ। যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- কোলেস্টরল কমায়ঃ কলার থোরের রয়েছে ব্যাপক উপকারিতা। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কাজ করে এই কলার থোর।
- রক্ত শুদ্ধকরণঃ কলার মোচা রক্ত পরিষ্কার করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। আবার শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর করে কলার মোচা।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিঃ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেও বেশ উপকারী কলার মোচা।
প্রতিদিন কলা খেলে কি উপকার হয়
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ কলা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে কারণ কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম।
- হজমের উন্নতিঃ কলাতে থাকা ফাইবার আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। যার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কলাতে রয়েছে শর্করা যা আপনার শরীরে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে। কলা খাওয়ার পর শরীরে শক্তি অনুভব করবেন।
- মেজাজ ভালো রাখেঃ কলায় থাকা ট্রিপ্টোফ্যান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যেটা মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কলাতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আপনার দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ কলাতে আয়রন থাকায় এটি শরীরে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে, যার শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ প্রতিদিন কলা খেলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে। কারণ কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- মস্তিস্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ কলাতে থাকা ভিটামিন বি৬ মস্তিস্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কলা খাওয়া উচিত।
- ওজন কমায়ঃ কলাতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে আপনার ক্ষুধা কম লাগে। প্রতিদিন কলা খেলে আপনার শরীরের ওজন কমবে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ প্রতিদিন কলা খেলে আপনার ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। কলা থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক উপকারী।
কলা দিয়ে কি কি খাবার তৈরি করা যায়
- কলা পিঠাঃ পিঠা বাঙালির প্রিয় খাবার। পাকা কলা, চালের গুঁড়ো, চিনি ইত্যাদি একসাথে মিশিয়ে মজাদার পিঠা তৈরি করা যায়।
- কলা মালপোয়াঃ দুধ, ময়দা, পাকা কলা দিয়ে তৈরি এই খাবারটি বেশ জনপ্রিয়।
- কলা কেকঃ পাকা কলা, ডিম, দুধ, চিনি, ময়দা ইত্যাদি উপকরণ একসাথে মিক্সড করে সফট ও সুস্বাদু কলা কেক তৈরি করা যায়।
- কলা স্মুজিঃ পাকা কলা, মধু, দুধ, বরফ দিয়ে তৈরি করা যায় স্মুজি। এটি খেতে অনেক মজার এবং স্মুজি গরমে আপনার শরীরকে শীতল রাখে।
- কলা আইসক্রিমঃ কলা, দুধ, চিনি দিয়ে আপনি বাড়িতেই মজাদার কলা আইসক্রিম তৈরি করতে পারবেন।
- কলা ভাজাঃ কলা ভাজা আপনি তরকারি হিসেবে খেতে পারেন।
- কলার চিপসঃ কলা কেটে তেলে ভেজে চিপস বানিয়ে খেতে পারেন। বেশ মজার খাবার এটি।
- কলা চাটঃ কলা, পেঁয়াজ, টমেটো, ধনেপাতা ইত্যাদি মিক্সড করে চাট তৈরি করা যায়।
- কলা স্যুপঃ কলা ও মশলা দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে স্যুপ তৈরি করা যায়, যা অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।
- কলা স্যালডঃ কলা, আপনার পছন্দতো উপকরণ, চিজ ইত্যাদি দিয়ে স্যালড তৈরি করা যায়।
- কলা দিয়ে মিল্কশেকঃ পাকা কলা, দুধ, চিনি ইত্যাদি একসাথে মিশিয়ে মিল্কশেক তৈরি করা যায়
- কলা দিয়ে ওটসঃ ওটসের সাথে পাকা কলা মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- কলা দিয়ে চিড়াঃ চিঁড়া ভিজিয়ে পাকা কলার সাথে খাওয়া যায়।
কখন কলা খাওয়া উচিত নয়
- কিডনির সমস্যাঃ যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কলা খাওয়া একদমই ঠিক হবে না। কারণ কলা খেলে কিডনির সমস্যার বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের কিডনির সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে কলা খাবেন না।
- ডায়াবেটিস রোগীঃ আপনি যদি ডায়াবেটিসে রোগী হয়ে থাকেন তাহলে কলা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কেননা কলা আপনার শরীরের সুগারের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যেটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কলা খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
- এলার্জি হলেঃ কলা খেয়ে আপনার যদি এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে কলা খাওয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখুন। যদিও খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কলাতে এলার্জি দেখা দেয়। তাই যদি কলাতে এলার্জি হয় তাহলে কলা আপনার না খাওয়াই ভালো।
- পেটের সমস্যাঃ কলা খেলে অনেক সময় অনেকেরই দেখা যায় পেটে ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে কলা খাওয়া থেকে আপনার অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কতটুকু বা কখন কলা খাওয়া উচিত সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।
- ঠান্ডার সমস্যাঃ কলা খেলে অনেক সময় ছোট বাচ্চা বা বৃদ্ধ মানুষদের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই আপনি যদি এরকম কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবে আপনার কলা খাওয়া উচিত। তা না হলে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url