ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সৃষ্টির আদিকাল থেকে প্রাণীকুল খাদ্য খেয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি-এই বিষয়ে কি আপনার কোনো ধারনা আছে ? আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা দরকার। আজকের আর্টিকেলে আমরা আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
জীবের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি সে বিষয়ে আরো ভালোভাবে জানতে হলে আপনাকে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি-সে সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃআমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা।
খাদ্য কাকে বলে ?
প্রকৃতিতে সম্ভবত প্রাণীকুলের প্রথম চাহিদা ছিল খাবার । সে সময় কিন্তু আজকের দিনের মত কোন খাদ্যতালিকা ছিল না। তখন মানুষ প্রকৃতিতে যা পেতো তাই খেতো। এভাবে মানুষ নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে থাকে ও খাদ্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ ধীরে ধীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও খাদ্যের উপাদান বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করে ফেলে।
খাদ্য হলো প্রকৃত লব্ধ নানা ধরনের জৈব ও অজৈব মৌলের সমাহার বা বস্তু যা জীব দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয় পূরণ ও রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে পুষ্টি সাধন করে থাকে। খাদ্যের উৎস হতে পারে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ। ঐতিহাসিকভাবে মানুষ বন জঙ্গলে পশুপাখির শিকার করে বা বনের ফলমূল, ওটা পাতা সংগ্রহ করে খেত। তারপর ধীরে ধীরে মানুষ চাষবাস করতে শেখে এবং এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। যা এখনো চলে আসছে। বর্তমানে খাদ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে মানব সভ্যতার মূলধারা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, স্বাস্থ্য নীতি ইত্যাদি।
খাদ্যের প্রধান উপাদান কয়টি ও কি কি ?
বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এগুলির মধ্যে বহু সংখ্যক জৈব ও অজৈব যৌগিক পদার্থ রয়েছে। আমাদের দেহের পুষ্টির জন্য এসব যৌগিক পদার্থের অনেকগুলি অত্যাবশ্যক এগুলোকে বলা হয় খাদ্যের উপাদান। এদের কোনটা দেহের টিস্যু গঠন করে, কোনটা শক্তি যোগায় আবার কোনটা দেহকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। রাসায়নিক গঠন ও দেহে এদের ভূমিকা অনুযায়ী খাদ্যের প্রধান উপাদান সমূহকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। খাদ্যের প্রধান উপাদান ছয়টি হলোঃ
- শর্করা বা শ্বেতসার
- আমিষ
- স্নেহ
- ভিটামিন
- খনিজ লবণ
- পানি
- শর্করা জাতীয় খাবারঃ শর্করা জাতীয় খাবার গুলো হল-চাল, গম, ভুট্টা, আলু, মিষ্টি আলু, গুড়, চিনি, মধু ইত্যাদি।
- আমিষ জাতীয় খাবারঃ আমিষ জাতীয় খাবার গুলো হলো-খাসির গোস্ত গরুর গোস্ত, মুরগির মাংস, মাছ, ডাল, সিমের বিচি, দুধ, ডিম ইত্যাদি।
- স্নেহ জাতীয় খাবারঃ স্নেহ জাতীয় খাবার গুলো হল-চাল, ঘি, মাখন, সরিষার তেল, বাদাম তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখী তেল, চিনা বাদাম ইত্যাদি।
- ভিটামিন যুক্ত খাবারঃ ভিটামিন যুক্ত খাবার গুলো হল-খাসির গোশত, গরুর গোশত, ডাটা, গাজর, কচু শাক, লাল শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঝিঙ্গা, , পটল, চিচিঙ্গা, আঙ্গুর, আপেল, আম, জাম, কাঁঠাল, কমলা, পেয়ারা, আমলকি, আমড়া, বাতাবি লেবু, শুটকি, কুল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি।
খনিজ লবণ কি, খনিজ লবনের উৎস ও প্রয়োজনীয়তা
আমরা অনেকেই আমলকি, তেতুল, কাঁচা আম লবণ দিয়ে খাই। শাক সবজি মাছ মাংস রান্নার সময় মা লবণ ব্যবহার করেন। এ লবণ কে কে খাদ্য লবন বলে। খাদ্য লবণ ছাড়া আরো অনেক লবণ আছে যা আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় এদের খনিজ লবণ বলে। ফলমূল, শাক সবজি, দুধ, ডিম, কলিজা ও সামুদ্রিক মাছ থেকে লোহ, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, ফসফরাস, সোডিয়াম ইত্যাদি খনিজ লবণ পাওয়া যায়। খনিজ লবনের অভাবে নানারকম রোগ দেখা দেয়। কোন কোন খাদ্য খনিজ লবণ রয়েছে এবং এদের প্রয়োজনীয়তা কি সে সম্পর্কে আজকে আমরা জানব।
খনিজ লবনের উৎস ও প্রয়োজনীয়তাঃ
- ক্যালসিয়াম লবণঃ দুধ, মাংস, ডিম, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম লবণ যা আমাদের হার ও দাঁতের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে।
- ফসফরাস যুক্ত লবনঃ মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদিতে রয়েছে ফসফরাস যুক্ত লবণ যা আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়তা করে।
- লৌহ লবণঃ মাংস, ডিম, কলিজা, শাক সবজি প্রভৃতিতে রয়েছে লৌহ লবণ যা রক্তে লোহিত কণিকা গঠন করে এবং এর অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
- আয়োডিনযুক্ত লবণঃ টাটকা সামুদ্রিক মাছে রয়েছে আয়োডিন এবং আমরা রান্না করার সময় যে প্যাকেটজাত লবণ খায় সেখানেও আয়োডিন যুক্ত করা থাকে। আয়োডিনযুক্ত লবনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির কাজে ব্যাঘাত ঘটে, গলগন্ড রোগ হয়। তাই সুস্থ থাকতে হলে আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে।
- সোডিয়ামযুক্ত লবণঃ সাধারণ খাবার লবণের স্বল্পতা দেহের আড়ষ্টতা বয়ে আনে।
পানি পানের প্রয়োজনীয়তা ।
আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তা পরিপাকের জন্য পানি একটি অতি প্রয়োজনীয় ও প্রধান উপাদান। পানি খাবার হজম করতে, ও দেহ থেকে ঘাম ও মুত্রের মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে করে। পানি কম পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এ থেকে বোঝা যায় পানি ছাড়া আমাদের দেহের সকল কাজ সঠিকভাবে চলে না। আমরা প্রতিদিন যে সকল খাদ্য খায় তাতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে। তবে এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন ছয় থেকে সাত গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।
ডায়রিয়া, কলেরা ইত্যাদি পেটের অসুখে হঠাৎ করে দেহের পানির পরিমাণ কমে যায়। এতে রোগীর দেহে নানারকম খারাপ লক্ষণ দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগীকে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো উচিত। সময় মত খাবার স্যালাইন না খাওয়ালে নানা রকম জটিলতা দেখাতে। শরীর দুর্বল ও পানি শূন্য হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কারো হাত-পা মুখে পানি জমা হয়। দেহের কোন অঙ্গের কাজে ব্যাঘাত ঘটলে এরূপ হতে পারে। এরকম অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও খুবই প্রয়োজন।
খাদ্য হিসেবে শাক-সবজির প্রয়োজনীয়তা।
খাদ্য হিসেবে শাক সবজির প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। শাকসবজি বলতে এমন সব গুল্ম জাতীয় গাছকে বুঝায় যেগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কাঁচা কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়। যেমন-মূল জাতীয়-গাজর, মূলা, শালগম, টিউবার জাতীয় আলু, মিষ্টি আলু, বীজ জাতীয় মটরশুটি, মশুর ইত্যাদি, ফলজাতীয়-টমেটো, কাণ্ডজাতীয়-সিলারি, পুই, পাতা জাতীয়-লেটুস, লাল শাক, পুঁইশাক , পালং শাক ইত্যাদি।
শাকসবজি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অপরিহার্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। সাধারণভাবে প্রতিদিনই আমরা কিছু না কিছু শাকসবজি খেয়ে থাকি। তবে বাংলাদেশের মানুষ দেশের সুস্থতায় খাদ্য হিসেবে শাক সবজির প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তেমন একটা সচেতন নয়। অথচ অধিক পরিমাণে শাকসবজি খেতে পারলে একদিকে যেমন আমাদের পুষ্টি সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে অন্যদিকে তেমনি খাদ্য ঘাটতি পুরণেও সহায়ক হবে।
শাকসবজি দেহের কতিপয় কাজ করে থাকে। যেমন-
- শাকসবজিতে আমিষের পরিমাণ সাধারণত কম থাকলেও তা অন্যান্য উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্যের আত্মীকরণ বৃদ্ধি করে থাকে। বাংলাদেশে আমাদের খাদ্যে আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ আসে চাল, ডাল, গম, মাছ, মাংস, ডিম , দুধ ইত্যাদি থেকে। এগুলোর সাথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেলে আমিষের আত্মীকরণ বৃদ্ধি পাবে।
- খাদ্য হজম না হলে তার সারাংশ শরীরের কোন কাজে আসে না। আর শরীরের কাজে যা না আসে তা খাওয়া আর না খাওয়া সমান। শাক সবজি বেশি খেলে পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। খাদ্যের বিপাকের উন্নতি সাধিত হয়।
- শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। একদিক দিয়ে পত্রবহুল শাকসবজি খুবই সমৃদ্ধ। । পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, একজন লোক দৈনিক২০০ গ্রাম সবজি খেলে তার দেহে ভিটামিন ও খনিজ লবনের ঘাটতি হবার কথা নয়। তবে এর মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়।
দেহে ভিটামিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা।
ভিটামিন হচ্ছে খাদ্যের একটি অতি আবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান, যেটা শরীরের ভেতরে তৈরি হতে পারে না এবং অবশ্যই সেটা খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। আমাদের ধারণা, ভিটামিন শরীরের শক্তি যোগায়, ভিটামিন খেলে দূর্বলতা কমে বা খারাপ স্বাস্থ্য ভালো হবে। আসলে ধরনাটা ঠিক নয় । ভিটামিন থেকে শরীরের সরাসরি কোন শক্তি উৎপন্ন হয় না। তবে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য, যেমন শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাবারের বিপাক প্রক্রিয়ায় ভিটামিন অংশ নেয়। ফলে দেহে কোন একটি ভিটামিন অভাব হলে সেই নির্দিষ্ট উপাদানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়।
জৈব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভিটামিন কে সাধারণত পানিতে ও চর্বিতে দ্রবনীয় এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হচ্ছে-এ, ডি, ই, কে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি এবং সি। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরের বেশি জমা থাকে না। হলে কিছুদিন এ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ না করলে দ্রুত এর অভাব দেখা দেয়। চর্বি জাতীয় ভিটামিন শরীরে বেশিদিন বেশি পরিমাণে জমা থাকে বলে কিছুদিন এটি খাবারে না গ্রহণ করলে সহজে সমস্যা হয় না। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়, ত্বক খসখসে হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস হতে পারে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের পা বাঁকা বা রিকেটস এবং বড়দের হাড় ক্ষয় বা অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নানা ভিটামিনের সমন্বয়। এদের অভাবে বেরিবেরি রোগ, ঠোঁটের কোন ঘা, অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি হতে পারে। আবার ভিটামিন সি এর অভাবে হতে পারে স্কার্ভি রোগ। প্রয়োজনীয় ভিটামিনের সব কয়টি সুষম খাদ্যের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। একই খাবারে সব ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায় না। তাই সব ধরনের খাবারই খেতে হবে।
আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের দেহের মাংসপেশির প্রধান কাঠামো আমিষ দিয়ে গঠিত। তাই আমি যে প্রধান কাজ হল কিছু তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করা। অবশ্য খাদ্যের শ্বেতসার ও স্নেহের অভাব হলে আমিষ তাপশক্তির উৎস হিসেবেও কাজ করে। স্বভাবতই অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের দেহে আমিষের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বয়স্ক লোকের দেহে এটা প্রধানতঃ টিস্যু মেরামতের কাজে লাগে। আমিষের চাহিদা নির্ভর করে বয়স ও দেহের ওজনের উপর।
ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য দৈনিক ২ গ্রাম করে আমিষ দেয়া প্রয়োজন। তারপর এটার পরিমাণ ধীরে ধীরে বয়স অনুযায়ী ক্রমশ কমিয়ে দিতে হবে। গর্ভবতী ও শিশুকে স্তন্যদানরত মহিলাদের জন্য যথাক্রমে অতিরিক্ত দৈনিক ১০ও ৩০ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন। মাছ , মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ রয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন রকম সবজি যেমন শীম, বরবটি, মটরশুটি, সজিনা, কাকরোল ইত্যাদি আমিষের উৎস হিসেবে কাজ করে।
শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা।
মানুষের দেহকে একটি ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করা যায়। জ্বালানি ছাড়া যেমন ইঞ্জিন চলে না তার শক্তি ছাড়া তেমনি দেহ কাজ করে না। সব রকমের কাজের জন্যই শক্তির প্রয়োজন । আর দেহে তাপ শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে শর্করা ও স্নেহ। শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য খেলে দেহের তাপ শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন নিয়মিত শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। শর্করা ও স্নেহের অভাবে শরীর ও মন দুর্বল ও অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং মানুষের কর্মক্ষমতা লোক পায়। পুষ্টিবিজ্ঞানে তাপ শক্তি পরিমাপের একক হচ্ছে কিলোক্যালরি।
এক কিলোগ্রাম পানির তাপমাত্রা 1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করতে যতটুক তাপ দরকার হয় তা এক কিলো ক্যালরির সমান। দেহে ক্যালোরি চাহিদা নির্ভর করে বয়স, পেশা ও জলবায়ু ইত্যাদির উপর। বাংলাদেশের একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য দৈনিক অন্ততঃ ২৫০০ কিলোক্যালোরি প্রয়োজন। মোট ক্যালরি চাহিদার অন্তত ১০% স্নেহ থেকে নেয়া উচিত । অন্যথায় দ্রবণীয় ভিটামিন যথা-এ, ডি, ই, কে এর বিপাক বাধাপ্রাপ্ত হয়। চাল, ডাল, গম, বিভিন্ন রকম ভোজ্য তেল ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন সবজিতেও শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়।
আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
জীব খাদ্য গ্রহণ করে ও পানি পান করে জীবন ধারণ করে। খাদ্য গ্রহণ করা ছাড়া কোন জীবের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই আমাদের বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্যের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ সকল রাখে, শরীরের শক্তি যোগায় এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ বলাই থেকে রক্ষা করে। আমাদের শরীরের ক্ষয় পূরণ করে, শরীরকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখে এই খাদ্য। খাদ্য না খেলে শরীর সুস্থ থাকা তো দূরের কথা আমাদের বেঁচে থাকাই সম্ভব নয়।
আমাদের যখন খিদে লাগে তখন আমরা খাবার খাই। মূলত খাবারের নামে আমরা গ্রহণ করি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। শরীর মাত্র একটি পুষ্টিপাদানের চাহিদার কথা প্রকাশ করতে পারে। আর সেই পুষ্টি উপাদানটি হচ্ছে পানি। তৃষ্ণা পেলে আমরা পানি পান করি। কিন্তু দেহে পুষ্টির অভাব হলে আমরা সেটা বুঝতে পারি না। তাই প্রতিদিন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে।শরীর সুস্থ রাখতে হলে আমাদের প্রতিদিন খাদ্যের সবগুলো উপাদান যেসব খাবারে রয়েছে সেসব খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি, যেমন গাজর, লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া , মাছের তেল, অঙ্কুরিত ছোলা, বাঁধাকপি , পালং শাক , ফুলকপি ইত্যাদিতে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়, তাই এসব খাবার প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আর তাজা ফলমূল, শাক সবজি, ঢেঁকি ছাটা চাল ছাড়াও দুধ, ডিম, কলিজা অর্থাৎ তানির আমিষ রয়েছে সেসব খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। আবার টকফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই এর উৎস বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল। শাকসবজিতে সামান্য তেল বাড়িয়ে দিয়ে রান্না করা উচিত। সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে হবে। আমাদের শরীরের সকল চাহিদা মিটানোর জন্য আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। কাজেই বোঝা যাচ্ছে , আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শেষ বক্তব্য। আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
খাদ্য ছাড়া আমাদের কোনোভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব না। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি বা কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আপনার জানার সুবিধার্থে আজকের আর্টিকেলে আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি এবং কোন ধরনের খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সে বিষয়ে সব বিস্তরে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়লে আমাদের দেহে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি সে বিষয়ে আলোক অজানা তথ্য জানতে পারবেন।
বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনাদের জন্য আজকের তথ্য গুলো সংগ্রহ করেছি। এই কনটেন্ট টি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা এই কন্টেনটি যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। আর আমাদের লেখা কেমন হয়েছে সেই বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন।এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাদের আরো সুন্দর লেখার উৎসাহ যোগাবে।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url