স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
দেহের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের শ্রেণীবিভাগ কিভাবে করা হয় জানুন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকের আর্টিকেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আমিষ জাতীয় খাবার কোনগুলো সেটা হয়তো আমরা জানি। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। আজকে আপনাদের সাথে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা হবে, যা আপনাকে অনেক উপকৃত করবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- আমিষ কি ?
- প্রথম শ্রেণীর আমিষ হিসেবে মাছের উপকারিতা ।
- আমিষের প্রধানতম উৎস হিসেবে মাংসের উপকারিতা ।
- আদর্শ আমিষের প্রধান উৎস হিসেবে ডিম।
- আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে দুধের উপকারিতা ।
- চাল এবং ডালেও আমিষের উপকারিতা লক্ষণীয়।
- আমিষহীন বা নিরামিষভোজী খাবার কোনগুলো।
- স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা ।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য আমিষের উপকারিতা।
- শেষ বক্তব্য । স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা।
আমিষ কি ?
খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান হলো আমিষ বা প্রোটিন। আমিষ এমন এক ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ। আমিষ আমাদের দেহ গঠন করে, দেহের ক্ষয় পূরণ করে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই আমিষ আমাদের দেহের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। আমিষ তৈরি হয় ২২টি এমনও এসিডের সমন্বয়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধকে আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয়। অবশ্য বয়স্কদের জন্য ডিমের আমিষকে আদর্শ আমিষ ধরা হয়।
আমিষের উৎস দুইটি। যথা-
- প্রাণীজ আমিষ।
- উদ্ভিজ্জ আমিষ।
কোন খাবারে প্রাণীজ আমিষ ও কোন খাবারে উদ্ভিজ্জ আমিষ আছে সেটা আপনার জানার সুবিধার্থে নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- প্রাণীজ আমিষঃ প্রাণীজ আমিষগুলো হলো-মাছ মাংস দুধ ডিম এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার।
- উদ্ভিজ্জ আমিষঃ উদ্ভিজ্জ আমিষগুলো হলো-বিভিন্ন ধরনের ডাল, সিমের বিচি, মটরশুটি, বাদাম সূর্যমুখী বীজ, চিয়া বীজ এবং বিভিন্ন রকমের শাকসবজি।
প্রথম শ্রেণীর আমিষ হিসেবে মাছের উপকারিতা
মাছ একটি প্রথম শ্রেণীর আমিষ সরবরাহকারী খাবার। বিস্তর জলাশয়, প্রচুর বৃষ্টিপাত, সহায়ক তাপমাত্রা এবং নানাবিদ পরিবেশগত সুবিধার কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একটি অন্যতম মৎস্য সমৃদ্ধ দেশ। এদেশে সারা বছর প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং খাওয়া হয়। মাছ ছাড়া বাঙ্গালী ভাত খাওয়া কল্পনা করতে পারে না। তাই "মাছে ভাতে বাঙালি" একটি ঐতিহাসিক প্রবাদ। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় বাঙালি জাতি খাবারের মাছের বৈশিষ্ট্য তার পরিচয়। বাঙালির খাবারে মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাছ একটি প্রথম শ্রেণীর আমিষ। মাস থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে আমিষ পেয়ে থাকি যা আমাদের দেহের বৃদ্ধি, দেহের ক্ষয় পূরণ ও রোগবালাই মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি। মাছের চর্বি, খনিজ তেল, আয়রন ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস পাওয়া যায়। নিয়মিত মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চোখের অসুখ, হাত পা ব্যথা, শরীরের দুর্বলতা ইত্যাদি রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে পাঁচ থেকে ছয় পয়েন্ট উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। মাছের তেলে থাকা ডকশা হেক্সোনিক এসিড এবং এলকোসা তিনটা পেন্টাএনোইক এসিড মগজের বিকাশ ঘটায়। মাছ শরীরে রক্ত বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। মাছ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। মাছে ওমেগা-৩ নামে এক ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে, যা হিজনকে ধমনী গুলোকে নমনীয় করে রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
এই ধরনের এসিড বেশি থাকার কয়েকটি মাছ হলো-ইলিশ, ভেটকি, পমফ্রেট, শিং এবং হ্রদে থাকা মাছ।রোজ মাছ খেলে বাতের ব্যথা কমে। বাতের ব্যথায় হওয়া জ্বরের উপশম ঘটায়। বায়ুশ্বাসী মাছ যেমন শিং মাগুর ইত্যাদি মাছ যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন ও তামা থাকায়, এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ করে রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রক্ত বিনোদয় ভোগা মানুষদের শিং এবং মাগুর মাছ খেতে হয়। তাছাড়া খলসে, গড়াই তথা কুচে ইত্যাদি মাছে এসোসিড এসিড থাকায়, আঘাত প্রাপ্ত হয়ে রক্তক্ষরণ হলে সহজে রক্ত বন্ধ হয়। মাছ ঘা শুকাতে সাহায্য করে। যে কোন মাছে অতি প্রয়োজনীয় ডিএইচএ এবং ইপিএ থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপযুক্ত ডিএইচএ এবং ইপিএ সেবন করা অতি উপকারী। নিয়মিত মাছ খেলে মগজে ডিএইচ এর পরিমাণ বাড়ে।
আমিষের প্রধানতম উৎস হিসেবে মাংসের উপকারিতা
হাঁস, মোরগ, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষের মাংস প্রথম শ্রেণীর আমিষের প্রধানতম উৎস। এতে শর্করার পরিমাণ কম এবং তুলনামূলকভাবে চর্বির পরিমাণ কিছুটা বেশি। মোরগের মাংস বাদে অন্য সব প্রাণীর মাংস দেখতে কিছুটা লাল বর্ণের। তাই এসব মাংসকে বলা হয় 'লাল মাংস'। এদেশে মাংস অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। গৃহস্থালীভাবে, অতিথি আপ্যায়নে বা বিশেষ কোন উপলক্ষে মাংসের তৈরি খাবার খুবই পছন্দনীয়। মাংস দিয়েছে এ দেশে সাধারণত তরকারি, কাবাব, রোস্ট, বিরিয়ানিসহ নানা ধরনের উপদেয় খাবার তৈরি করা হয়।
ধর্মপ্রধান দেশ হিসেবে মাংস খাবার হিসেবে কিছুটা বিধি নিষেধ রয়েছে। এদেশে মাংসের প্রধান উৎস গরু, মোরগ, ছাগল ও মহিষ।উট ও ভেড়ার মাংস কদাচিৎ দেখা যায়। রান্না করার ফলে মাংস নরম হয় যার ফলে সহজে চিবিয়ে খাওয়া যায় এবং হজমের সুবিধা হয়।কচি জন্তুর মাংস সহজে নরম হয় ও খেতে ভালো লাগে। বুড়ো প্রাণীর মাংস কিছুটা শক্ত। মাংসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকায় এটি আমাদের দেহে কোষ তৈরিতে এবং কোষ বিভাজনে সাহায্য করে। ফলে দেহ বৃদ্ধি, দেহের ক্ষয় পূরণ এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। ফলে সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত মাংস রাখা উচিত।
আদর্শ আমিষের প্রধান উৎস হিসেবে ডিম
ডিম আদর্শ আমিষের প্রধান উৎস এবং একটি পরিপূর্ণ খাবার। সাধারণত ডিমের আমিষের মানকে প্রাথমিক মানদন্ড বিবেচনা করে অন্যান্য আমিষের মান নির্ণয় করা হয়। ডিমে অবস্থিত অ্যামিনো এসিডের রকম কে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদেশে মুরগি ও হাঁসের ডিমই প্রধানতা খাওয়া হয়। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ শখের বশে পাখির ডিম খেয়ে থাকে। ডিম দিয়ে নানা ধরনের খাবার প্রস্তুত করা হয়। ডিমের তরকারি, পুডিং, ডিম ভাজা, ডিমের কালিয়া, ডিমের পোচ, ডিমের পিঠা, ডিমের মিষ্টি ইত্যাদি নানা স্বাদের ও রকমের উপাদেয় খাবার তৈরি। করা হয়। প্রতিবছর দেশে হাঁস-মুরগির চাষ বাড়ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ডিমের উৎপাদন বাড়ছে।
ডিমের রয়েছে তিনটি অংশ। ডিমের খোসা, সাদা অংশ ও কুসুম। ডিমের খোসা সাধারণত পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে ৮৭% পানি এবং ১৩% আমিষ। আমি অংশের বেশিভাগ হলো এলবুমিন। চর্বির পরিমাণ খুবই কম। ডিমের কুসুম সাধারণত লাইপো প্রোটিনের মিশ্রণ। কুসুমের মাঝে পানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, এক তৃতীয়াংশ চর্বি। ডিমের অবস্থিত প্রায় সব চর্বি কুসুমের মাঝে অবস্থিত। ডিমের সাদা অংশের তুলনায় কুসুমে আমিষের পরিমাণ বেশি। ডিমের অ্যামিনো এসিডের পরিমাণ মানুষের চাহিদার খুব কাছাকাছি।
তাই ডিমের আমিষকে আদর্শ আমিষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ডিমের আমিষের খাদ্যমানকে প্রাধান্য হিসেবে বিবেচনা করে অন্যান্য আমিষের খাদ্যমান নির্ণয় করা হয়। হৃদ রোগীদের ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম বাদ দেওয়াই ভালো। রুগ্ন ও ভগ্ন স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য এবং গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ডিম আদর্শ খাবার। রিউমেটিক রোগীদের দেহে ডিম ভালো কাজ করে। জন্ডিস, পেটের পীড়ায় ডিম কোন খারাপ প্রতিক্রিয়া ঘটায় না। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পুরণ ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিম প্রয়োজন।
আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে দুধের উপকারিতা
আমি সেই উচ্চ সময়ের মধ্যে দুধ সবচেয়ে বেশি আলোচিত। মানুষের জন্মের পর প্রথম খাবার মায়ের দুধ। যে সব লোক নিরামিষ ভোজী বা প্রাণী হত্যা মহাপাপ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে তারাও দুধ খেয়ে থাকে। কারণ দুধ পেতে কোন প্রাণীকে হত্যা করতে হয় না। দুধের প্রধান উৎস স্তন্যদানকারী জন্তু। অতি প্রাচীন কাল থেকে স্তন্যদানকারী জন্তু নিজের বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর যে পরিমাণ দুধ অতিরিক্ত থাকে তা মানুষ খেয়ে থাকে। বিভিন্ন স্তন্যদানকারী প্রাণীর মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট এবং গাধার দুধ মানুষ খেয়ে থাকে। এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলের লোকেরা চমরি গায়ের দুধ খায়। উট ও গাধার দুধ খায় মরু অঞ্চলের লোকেরা।
আরো পড়ুনঃওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম।
দুধ একটি পরিপূর্ণ আদর্শ খাবার। দুধ আমিষ চর্বি, ভিটামিন ও ধাতব মৌলের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। দুধ অতি সহজে হজম হয়। তাই শিশু এবং অসুস্থ লোকের জন্য দুধ একটি আদর্শ খাবার। তবে দুধে লোহা ও ভিটামিন সি এর পরিমাণ একটু কম। তবে নবজাত শিশুদের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। সাধারণত দুধ তাজা হিসেবে খাওয়া হয়। তবে দুধ থেকে তৈরি দই, মাখন, ছানা, ঘি, পনির, মাওয়া ইত্যাদি খাবার খুবই উপদেয়। এদেশের দুধের মিষ্টি যেমন সন্দেশ, রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, গোলাবজাম জগৎবিখ্যাত। এদেশের কুলিয়ারচরে দূর থেকে তৈরি পনির খুবই জনপ্রিয়। তোর থেকে তৈরি আইসক্রিম দুধের চকলেট মিল্কশেক শিশুদের কাছে অতি প্রিয় খাবার।
ডিম ও দুধের মিশনের তৈরি পুডিং খুবই উন্নত মানের খাবার। কোন ভুরিভোজের পর ডেজার্ট হিসেবে পুডিং এবং দই এর ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। দুধ ও মিষ্টি দিয়ে তৈরি ফিরনি নিয়ে এদেশের ঘরে ঘরে প্রতিনিয়ত খাওয়া হয়। বর্তমানে সংরক্ষণ ও বহন করার সুবিধার্থে দুধকে শুকিয়ে পাউডারে রূপান্তরিত করা হয়। পাউডার দুধ কি অতি সহজে তরল দুধে রুপান্তর করা সম্ভব। এছাড়া পশ্চিমা দেশে দুধ খেয়ে সুখী অর্ধেক পরিমাণ পানি অপসারণ করে 'আধা-আধি' দূর তৈরি করা হয়। আবার দুধুতে ৬০% পানি অপসারণ করে কনভিন্স দুধ বানানো হয়।উল্লেখ্য যে, এদেশে যে কনডেন্স দুধ বাজারে পাওয়া যায় তা অধিকাংশই দুধ নয়। এদেশে অতি প্রাচীনকাল থেকে দুধের আমেজকে গুণিত করে ছানা ও পনির বানানোর পদ্ধতি প্রচলিত।
চাল এবং ডালেও আমিষের উপকারিতা লক্ষণীয়
চাল ও ডাল সহযোগে খিচুড়ি তৈরি পুষ্টিবিজ্ঞানের দিক থেকে খুবই উন্নত একটি খাবার। ধান থেকে বিভিন্ন প্রসেসিং এর মধ্যে মাধ্যমে চাল তৈরি করা হয়। ঢেকি বা কলে ধান ভাঙ্গিয়ে চাল উৎপন্ন করা হয়। চাল থাকে আঁশযুক্ত তুষের ভিতরে। তুষের আবরণের আড়ালে থাকা শস্য কানা কে বলা হয় চাল।ধানের মধ্যে থাকে ২৫ থেকে ৩০% তুষ। মানুষের খাওয়ার যোগ্য নয়। ঢেঁকিতে ধান হতে তুষ ছাড়ানোর পর চালের গায়ে একটি লাল আবরণ দেখা যায়। যার মধ্যে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও ধাতব মৌল।
তবে শুধু ঢেঁকি ছাটা চালে এই লাল আবরণ টিকে থাকে। কলে ছাঁটা চালে এ আবরণ বেশিরভাগ চলে যায়। তবে সেদ্ধ চালে ভিটামিন ও ধাতব মৌল বেশি থাকে। কারন সেদ্ধ করার ফলে বাইরের রঙিন আবরণে অবস্থিত ভিটামিন ও ধাতব মৌল চালের ভেতরে ঢুকে যায়। লক্ষণীয় যে, ঢেঁকি ছাটা লাল চালে সব ধরনের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কলে ছটা ছাদা চালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে চালের কুড়ার মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান।তাই চাল ছটার সময় এ বিষয়ে সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য।
ঢেঁকি ছাটা লাল চালে, কলে ছাঁটা সাদা চালের তুলনায় আমিষের পুষ্টিমান অনেক বেশি। লক্ষণীয় যে, ঢেঁকি ছাটা লাল চালের আমিষে সব ধরনের অত্যাবশক্তি ও অ্যামিনো এসিডের পরিমাণ ও খাদ্য মান বেশি। চালের আমিষে লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিডের পরিমাণ তুলনামূলক কিছুটা কম এবং সালফারযুক্ত অ্যামিনো এসিডের পরিমাণ কিছুটা বেশি। অন্যদিকে ডালে লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিডের পরিমান কিছুটা বেশি এবং সালফার যুক্ত অ্যামিনো এসিডের পরিমাণ কিছুটা কম। এমতাবস্থায় ডাল ও চাল একসঙ্গে মিশে খিচুড়ি রান্না করলে একে অন্যের অভাব পূরণ করে পুষ্টিমান বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
আমিষহীন বা নিরামিষভোজী খাবার কোনগুলো
পৃথিবীতে অনেক মানুষ প্রাণীজ খাবার না খেয়ে শুধুমাত্র উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে থাকে তাদেরকে বলা হয় শাকসবজি ভোজী বা নিরামিষভোজী এবং এ ধরনের খাবার কে বলা হয় নিরামিষ খাবার। এ ধরনের খাবারই থাকে শাকসবজি, খাদ্যশস্য, বাদাম জাতীয় খাবার, বিভিন্ন ধরনের বিচি ইত্যাদি। কোন প্রকার মাছ, মাংস, মোরগ, পাখি, দুধ, ডিম এবং এসবের খাবারের কোন প্রকার উপজাত খাবার যেমন কেক, চকলেট, চিপস, গাম, ক্যান্ডি থাকে না। এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস সাধারণত ধর্ম বিশ্বাস, নৃতাত্ত্বিক কারণ, স্বাস্থ্যগত কারণ, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নান্দনিক, অর্থনৈতিক কারণ থেকে জন্ম নিয়ে থাকে। এ ধরনের খাদ্য অভ্যাস শুধু কোন একটি বিশেষ ধর্মীয় লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক গোত্র বা ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এই অভ্যাস রয়েছে।
এ ধরনের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিগত দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অনেক রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নিরামিষ ভোজী ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব ৩০% কম এবং নিরামিষভোজী মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০% কম। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিরামিষ খাবারে রয়েছে দেহের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত আমিষ ও অ্যামিনো এসিড। অন্যদিকে নিরামিষ খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে এবং যথেষ্ট পরিমাণ শর্করা, খাদ্য আঁশ, পটাশিয়াম ফোলেট,ভিটামিন সি, ই ও ফাইটোকেমিকেলস এর মতো জারণ প্রতিরোধের উপাদান রয়েছে। নিরামিষ খাবার খেলে শরীরের ওজন কম থাকে। রক্তচাপ, বহুমূত্র রোগ সহ অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিরামিষ ভোজীদের ক্ষেত্রে বেশিদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা
দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয় পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ উপাদান সৃষ্টির জন্য আমিষের প্রয়োজন।এই প্রয়োজন অনেকগুলো উপসর্গের উপর নির্ভর। দেহের বৃদ্ধি নির্ভর মূলত বয়সের উপর। ক্ষয় পূরণ নির্ভর করে দৈহিক কাজকর্ম, রোগ বালাইসহ কয়েকটি প্রভাবকের উপর। রোগ প্রতিরোধ উপাদান তৈরি বিভিন্ন বয়সের মধ্যে শিশু বয়সে বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের তুলনায় একজন নবজাত শিশুর আমিষের চাহিদা দেহের ওজনের অনুপাতে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। একজন অসুস্থ লোকের আমিষের চাহিদা একজন সমবয়সী সুস্থ লোকের চেয়ে বেশি।
তাই আমি সে চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে ব্যক্তি বিশেষকে লক্ষ্য করে। কোন সাধারণ ফর্মুলা এক্ষেত্রে প্রায়শই অচল। সে মোতাবেক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা যৌথভাবে ব্যক্তি বিশেষের আমিষের চাহিদা হিসাব করার এক ফর্মুলার প্রস্তাব করেছে। অ্যামিনো এসিড দিয়ে আমিষের সৃষ্টি।হজম হওয়ার পর আমিষ ভেঙে গিয়ে অ্যামিনো এসিডে রূপান্তরিত হয় এবং অ্যামিনো এসিড হিসেবেই দেহের কাজে লাগে। তাই আমি সে চাহিদা বলতে মূলত অ্যামিনো এসিডের চাহিদাই বুঝায়। অ্যামিনো এসিড গুলোর মধ্যে ৮টি অ্যামিনো এসিড অত্যাবশ্যকীয়। অর্থাৎ ৮টি অ্যামিনো এসিড দেহে তৈরি হয় না।
দেহের প্রয়োজন মেটাতে এসব অ্যামিনো এসিডকে খাবারের মাধ্যমে খেতে হয়। অন্যান্য অ্যামিনো এসিড গুলোর প্রয়োজন এ দেহ তৈরি করে নিতে পারে। উল্লেখ্য যে, শিশু বয়সে কিছুটা হিস্টিডিনের আবশ্যকতা রয়েছে। পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রয়োজনে থাকে না। শিশুর বাড়ন্ত শরীরে বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য বয়স্কদের তুলনায় অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিডের চাহিদা বেশি থাকে। পূর্ণবয়স্কদের বেলায় আমিষের প্রয়োজন শুধু ক্ষয় পূরণের জন্য। তাই তুলনামূলকভাবে শিশুদের তুলনায় বয়স্কদের অ্যামিনো এসিডের চাহিদা কম। উল্লেখ আরজিনিন, টাইরোসিন, গ্লাইসিন ও সিস্টিন আংশিক অত্যাবশ্যক।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য আমিষের উপকারিতা
গর্ভবতী ও স্তনের দানকারী মাকে একজনে দুজনের জন্য খেতে হয়। গর্ভবতী অবস্থায় দেহের ওজন প্রায় ৭-১০ কেজি পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। জন্মের সময় শিশু বেশ কিছু লোহা, আমিষ, ভিটামিন সি সহ অন্যান্য ভিটামিন নিয়ে জন্মে।গর্ভ অবস্থায় মাকে এসব পুষ্টি উপাদান শিশুর জন্য খেতে হয়। যদি খাবারে এসব পুষ্টি উপাদানের বাড়তি সরবরাহ না থাকে তাহলে মায়ের নিজের দেহ হতে এসব পুষ্টি উপাদান শিশুর জন্য সরবরাহ করতে হয়। এজন্য মাকে প্রায় ৩০০ ক্যালোরি শক্তি, ৩০ গ্রাম আমিষ এবং ৬৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বেশি খেতে হয়। মায়েদের জন্য অতিরিক্ত দৈনিক কমপক্ষে আরো ২০ থেকে ৩০ গ্রাম আমিষ বেশি খেতে হয়।
চাহিদার এই পরিমাণ দেখানো হয়েছে আদর্শ আমিষের অনুপাতে। যদি খাদ্যজ আমিষের পুষ্টিমান আদর্শ পুষ্টি মানের কম হয় তাহলে আমিষের পরিমাণ পুষ্টিমানের তারতম্য অনুসারে বেশি লাগবে। এক্ষেত্রে ডিমের আমিষকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয় এবং ডিমের আমিষের পুষ্টিমান ধরা হয়ে থাকে ১০০। হিসাব করে দেখা গেছে, যে ক্ষেত্রে আমিষের চাহিদা মেটাতে ডিমের আমিষ লাগে ৫০ গ্রাম, সে ক্ষেত্রে ডালের আমিষ লাগে ৮৫ গ্রাম। অর্থাৎ ডাল জাতীয় আমিষ ৮৫ গ্রাম খেলে ৫০ গ্রাম ডিমের আমিষের সমান হবে। কারণ ডালের আমিষের পুষ্টিমান ডিমের আমিষের তুলনায় ৬০। তাই আমিষের চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ করতে আমিষের খাদ্যমান বা পুষ্টিমানের বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
শেষ বক্তব্য । স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা
সুস্থ জীবন যাপন আমাদের সকলের কাম্য। স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত পুষ্টিউপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আর এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আমিষ একটি। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা অনেক। এজন্য আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে আপনার অবগত থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি আপনার নিজের ও আপনার পরিবারের লোকজনের সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে পারবেন।
আশা করছি উপরের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়েছেন। নিশ্চয় আর্টিকেলটি পড়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমিষের উপকারিতা সম্পর্কে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন। আর্টিকেলটি যদি আপনি ভালো লেগে থাকে এবং যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব অপরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। আর আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এরকম সুন্দর সুন্দর তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url