দেহের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের শ্রেণীবিভাগ কিভাবে করা হয় জানুন আপনি কি ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ? চিয়া সীড অত্যন্ত পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি বীজ। চিয়া সিড খেলে আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য এতটাই উপকৃত হবে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। চিয়া সিড খাওয়ার আগে অবশ্যই চিয়া সিড এর গুনাগুন সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত সকল তথ্য জানা উচিত। আজকের আর্টিকেলে ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আগে চিয়া সিড সম্পর্কে মানুষ তেমন জানতোই না। কিন্তু এখন চিয়া সিড তার গুণের কারণে সবার কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়লে ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। চিয়া সিড আপনার শরীরের ব্যাপক চাহিদা পূরণ করবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম।
পোস্ট সূচীপত্রঃ চিয়া সিড এর গুনাগুন সম্পর্কে
চিয়া সিড কি
সারা বিশ্বে বহুল পরিচিত একটি খাবার হচ্ছে চিয়া সিড। এই বীজের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে চিয়া সিড আসলে কি ? চিয়া সিড হচ্ছে সাদা কালো মিশ্রিত অতি ক্ষুদ্র শস্য দানা যা দেখতে অনেকটাই তিলের মতো। 'সালভিয়া হিস্পানিকা' নামক এক প্রকারের মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ বীজ হচ্ছে এই সুপারফুড চিয়া সিড। মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিন মেক্সিকো হলো এই মিন্ট প্রজাতি উদ্ভিদ বীজের উৎপত্তিস্থান।মূলত প্রাচীন 'অ্যাজটেক' ও 'মায়ান' নামক জাতিরা বিশ্বাস করতো যে, চিয়া বীজ শরীরে ব্যাপক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
তাই তাদের খাদ্য তালিকায় অতীব গুরুত্ব বহন করে এই চিয়া বীজ। আধুনিক বিজ্ঞান, পুষ্টিবিদদের নিরীক্ষণ ও বিভিন্ন গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, চিয়া সিড একটি মাল্টি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যা নিয়মিত প্রতিদিন খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর শক্তিশালী হবে, পুষ্টিহীনতা দূর করবে এবং শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।তাই আমাদের ছোট বড় যেকোনো বয়সের হোক না কেন সকলকেই নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়া উচিত। চিয়া সিড কে আবার অনেকে তোকমা দানার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু চিয়া সিড এবং তোকমা দানা সম্পূর্ণ আলাদা দুইটা খাবার।
চিয়া সিডে বিদ্যমান পুষ্টিউপাদানগুলো কি কি ?
বীজ জাতীয় যেকোন খাবারই পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়। তার মধ্যে চিয়া বীজ সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি বীজ । চিয়া বীজ আমরা কম বেশি সবাই চিনি। কিন্তু এই বীজে বিদ্যমান উপাদান গুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তেমন কোন ধারণা নেই। আজকে আমরা চেয়ে বীজে বিদ্যমান উপাদানগুলো সম্পর্কে জানবো। নিচে চিয়া সিডে বিদ্যমান উপাদান গুলো উপস্থাপন করা হলোঃ
- চিয়া সীডে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড, লিনোলিক এ্যাসিড। চিয়া সিডে আরো রয়েছে অতি উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড এ রয়েছে ৪৮৬ কিলো ক্যালোরি । আর এই ৪৮৬ কিলো ক্যালোরির মধ্যে রয়েছে ৪২.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩৪.৪গ্রাম ডায়াটারি ফাইবার, ৩০.৭ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন।
- এছাড়া চিয়া সিডে মিনারেলস এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ।
- চিয়া সিড আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, সেটা হচ্ছে সিলেনিয়াম।
- আর ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১,বি২,বি৩,বি৯, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই।
চিয়া সিডকে কেন সুপার ফুড বলে
চিয়া সিড অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি বীজ। চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হয়। যেসব খাবারে যে কোন পুষ্টিকর খাবার যেমন- মাছ,দুধ,ডিম ইত্যাদি থেকে পুষ্টিগুন অনেক বেশি থাকে সেসব খাবার কে সুপার ফুড বলা হয়। যেকোনো পুষ্টিকর খাবার থেকে চিয়া সিড এ পুষ্টিগুণ বেশি পরিমাণে থাকায় চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, চিয়া সিড একটা সুপার ফুড। চিয়া সিড আপনার শরীরে ব্যাপক উপকার সাধন করে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, চিয়া সিডে রয়েছে স্যামন মাছের থেকে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড। আরো রয়েছে মুরগীর ডিমের চেয়ে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন। এমনকি দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম বিদ্যমান এই চিয়া সিডে। আবার পালংশাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান এই বীজে। চিয়া সিডে আরো রয়েছে কমলা লেবুর চেয়ে ৭গুণ বেশি ভিটামিন সি এবং কলার চেয়ে ২ গুণ বেশি পটাসিয়াম। এতে আরো রয়েছে ব্রকলির থেকে ১৫ গুণ বেশি ম্যাগনেসিয়াম। অন্যান্য খাবারের চেয়ে চিয়া সিড এ এতো বেশি পুষ্টিগুণ থাকার কারণে চিয়া সিড কে সুপার ফুড বলা হয়। তাই নিয়মিত চিয়া সিড খেলে আপানার শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকবে এবং রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড কি ?
ওমেগা হচ্ছে এক ধরনের পলিআনস্যাটুরেটেড ফ্যাটি এসিড। একে বলা হয় অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড যা শরীরের জন্য প্রয়োজন কিন্তু মানব শরীর তা উৎপন্ন করার ক্ষমতা রাখেনা। সুতরাং খাবারের মাধ্যমে এটি আমাদের গ্রহণ করতে হয়। তিন ধরনের ওমেগা আছে ওমেগা-৩, ওমেগা-৬, ওমেগা-৯। এর মধ্যে ওমেগা-৩ সবচেয়ে উপকারী। ওমেগা থ্রি একগুচ্ছ ফ্যাটি এসিডের সমন্বয়। এর ভিতর তিনটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ইপিএ এবং ডি এইচ এ আমরা মাছের তেল থেকে পেতে পারি। আর আলফালিনোলেনিক অ্যাসিড, এটি পাওয়া যায় উদ্ভিদ থেকে। এই ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের সেল মেমব্রেন এ থাকে।
কোষের ভিতর দিয়ে যেসব সাবস্টেন্স চলাচল করে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি সেলের থেকে অন্য সেলের মধ্যকার যোগাযোগ রক্ষা করে । যেসব ছেলে বেশি ওমেগা-৩ থাকে সেসব ছেলে ফ্লুইডের পরিমাণ বেশি থাকে এবং কার্যকর ভাবে কাজ করে। ওমেগা ফ্যাটি এসিড হরমোন উৎপাদনও নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ওমেগা-৩ ফ্যাট হার্ট ডিজ ইজ রোধ করে। এটা রক্ত জমাট বাঁধা কমায় এবং হার্ট অ্যাটাক এর জুকি কমায়। যদি হার্ট অ্যাটাক হয় তবে তা মারাত্মক হবার সম্ভাবনা কমায়। স্ট্রোক এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখে। শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে ও সাহায্য করে ওমেগা-৩।
মাছ ব্যতীত বুকের দুধ হচ্ছে ডি এইচ এ এর একমাত্র বিকল্প উৎস। আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ডিপ্রেশন এবং মন সংযোগ ব্যাঘাতজনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও কাজ করে। প্রাথমিক কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে, ওমেগা-৩ ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার বৃদ্ধির ঝুঁকি হ্রাস করে। অ্যাজমা, এক্সিমা, নেফ্রটিক সিনড্রোম, সিজোফ্রোনিয়া ইত্যাদি রোগের ওপর এর উপকারী ভূমিকা নিয়ে কাজ করে চলেছেন গবেষকরা। তেল যুক্ত মাছ হচ্ছে ওমেগা-৩ এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎস। সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য সি ফুডে ইপিএ এবং ডিএইচএ থাকে। চিয়া সিড এ প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ রয়েছে।
চিয়া সিড এর গুণাগুণ কি কি ?
সুপার ফুড চিয়া সিড অগণিত গুনে ভরপুর। চিয়া সিড আপনার শরীরে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে এবং পুষ্টির অভাবজনিত সকল সমস্যার সমাধান করবে। কারন চিয়া বীজে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান যা আপনার শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে যথেষ্ট। নিচে চিয়া সিড এর কিছু গুনাগুন তুলে ধরা হলোঃ
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- জিয়া বীজ আমাদের শরীরে এইচডিএল কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়া তোলে। ট্রাই গ্লিসারাইড, প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ করতে পারে এই চিয়া সিড।
- শরীরের ওজন কমাতেও চিয়া সিড দারুন ভূমিকা পালন করে। চিয়া সিড খাওয়ার ফলে সহজে ক্ষুধা লাগে না। এই বীজ পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিডে অতি মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আপনার ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া এবং কুঁচকে যাওয়া রোধ করে।
- নিয়মিত চিয়া সিড খেলে ত্বক ও চুল চকচকে ও মসৃণ হয়ে ওঠে। চিয়া সিড এ বিদ্যমান ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এই বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট ভালো রাখে এবং কোলন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমায়।
- যারা দুধ বা দুধ দিয়ে তৈরি খাবার ক্ষেতে পারেনা বা খেলে সমস্যা হয় তাদের জন্য চিয়া সিড একটি উৎকৃষ্ট খাবার। কারণ চিয়া সিড ক্যালসিয়ামের একটি দারুণ উৎস। নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে এতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম হাড় ক্ষয়রোধ এবং হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে।
- চিয়া বীজে রয়েছে ফাইবার যা হজম শক্তি বাড়ায়। হজম শক্তি বাড়লে পেট ভালো থাকে।
- চিয়া সিড কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে যার ফলে হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- যাদের ডায়াবেটিকস আছে তাদের জন্য চিয়া বীজ অনেক উপকারি। নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- নিয়মিত চিয়া সিড খেলে দাঁত শক্ত ও মজবুত থাকে। এই বীজে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
- চিয়া সিড এর তেমন কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই, কাজেই যেকোনো মানুষ পরিমাণ মতো চিয়া সিড খেতে পারবেন।
- চিয়া সিড আমাদের দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে ভালো কোলেস্টেরল উৎপাদন করে ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেকাংশে।
- সুপার ফুড খ্যাত এই বীজ রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে বলে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে অনেকটাই।
- চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে পেট ঠান্ডা থাকে, শরীর ঠান্ডা থাকে তাই ঘুম ভালো হয়।
- আপনার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে আপনি চিয়া সিড খেতে পারেন। এই বীজে তার ওজন অনুযায়ী প্রায় ১৪% প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের শরীরে পরিমাণ মতো প্রোটিন সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট। এই সিডে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে তা বেশিরভাগ উদ্ভিদের তুলনায় অনেক বেশি। কাজেই যারা ভিজিটেরিয়ান আছেন তারা আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড রাখবেন।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। কারণ চিয়া সিড এর কোন নিজস্ব গন্ধ নেই। তাই যেকোনো খাবারের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যায়। ১ গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে ৩০মিনিট সেটা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। আবার আপনার হাতে যদি সময় না থাকে তাহলে এক গ্লাস পানিতে দুই চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিতে পারেন। চিয়া সিড যেভাবেই খান না কেন ফলাফল শতভাগ পাবেন। এছাড়াও ১গ্লাস পানিতে দুই চামচ চিয়া সিড ও একটি লেবুর রস পুরোটা চিপে খালি পেটে খেয়ে নিন।
চিয়া সিডের নিজস্ব কোন গন্ধ না থাকায় যে কোন ধরণের ফলের সাথে মিশিয়ে আপনি চেনা সিড খেতে পারবেন। চিয়া বীজ টক দইয়ের সাথে মিক্সড করেও খাওয়া যায়। আপনি চাইলে এক গ্লাস দুধে ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন।বাড়তি ওজন কমাতে ওটস ও চিয়া সিটের কম্বিনেশন দারুন কাজ করে। এতে আপনার পেট অনেক্ষন ভরা থাকবে ফলে ক্ষুধা কম লাগবে।
এক কথায় বলা যায় চিয়া বীজ আপনি যেকোনো ভাবে খেতে পারবেন। আর যেভাবে খান না কেন উপকারিতা অবশ্যই পাবেন কারন চিয়া বীজের গুনাগুন অটুট থাকে। তাই দিনে দুই বেলা না পারলে এক বেলা আবার সেটাও যদি না পারেন তাহলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন আপনার খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড রাখুন।এতে আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে এবং শরীরের বিভিন্ন রকম পুষ্টিহীনতা দূর হবে।
চিয়া বীজ ত্বকের জন্য উপকারী
চিয়া বীজ ত্বকের জন্য অত্যধিক উপকারী। আমরা সবাই চাই আমাদের ত্বক সুস্থ, সুন্দর ও কোমল থাকুক। চিয়া বীজ আমাদের সেই কাঙ্খিত ত্বক দিতে পারে। চিয়া সিড এ বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই আমাদের ত্বক টানটান রাখে সেইসাথে নমনীয়, কোমল ও উজ্জ্বল করে তোলে। নিয়মিত পরিণত পরিমাণে এই বীজ খেলে আপনার ত্বকের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হবে।
অতিমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে, ত্বকে সহজে ভাজ ফেলতে দেয় না, ত্বকের কুচকে যাওয়া রোধ করে, ত্বক টানটান করে তোলে। ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে করে তোলে। চিয়া সিড খাওয়ার পাশাপাশি এই বীজের সাথে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে আপনি ত্বক পরিচর্যার রেমিডি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য দুধ ও চিয়া সিড একসাথে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সেটা ব্লেন্ড করে আপনার পুরো মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখুন।কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে দিয়ে ফেলুন।
তাছাড়াও চিয়া সিড দুধ কলা মধু সবগুলো উপকরণ একসাথে মিক্সড করে আপনার সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার কোমল ও ফর্সা হয়ে উঠবে। চিয়া সিড শুধু ত্বকের যত্নে নয় চুলের যত্নেও অনেক উপকারী। এই বীজ নিয়মিত পরিমান মত খেলে আপনার চুল ঝলমলে উজ্জ্বল ও চকচকে হয়ে উঠবে। শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি আমাদের সৌন্দর্য চর্চায়ো চিয়া সিড এর জুড়ি মেলা ভার। তাই প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে নিয়ম মেনে আমাদের চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
ওজন কমাতে চিয়া সিড এর গুরুত্ব
শরীরের ওজন কমাতে চিয়া সিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ভুঁড়ি একটি সাধারন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ পরিবারেই ছোট বড় সকলের নিকট এই সমস্যা যেন একটি আতঙ্কের নাম এখনকার সময়ে। কারণ অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ভুঁড়ির শারীরিক বিভিন্ন রকম জটিলতায় ভুগছে মানুষ। আর এই অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ভুঁড়ি কমাতে ভীষণভাবে সহায়তা করে চিয়া সিড। চিয়া সিডে রয়েছে দ্রবণীয় ও আদ্রপনীয় ফাইবার যা আমাদের পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমায়।
ক্ষুধা কম লাগলে বা পেট ভরা থাকলে আমরা খাবারও কম খাব যার ফলে মেদ জমবে না। এই বীজে রয়েছে অতি উচ্চমানের প্রোটিন যা আমাদের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। চিয়া সিড এ রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড যা আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল যার নাম হচ্ছে এল ডি এল, এই এল ডি এল কমিয়ে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই বীজ নিয়মিত খেতে পরিমাণমতো খেলে তা মেটাবলিজম এর মাত্রা বৃদ্ধি করে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ভুঁড়ি কমাতে সহয়তা করে।
এক্ষেত্রে ১গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড ৩০ ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেতে পারেন। আবার ১গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১টি লেবুর রস ও ১ চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। অথবা ৪চামচ টক দইএর সাথে ২ চামচ চিয়া বীজ মিক্সড করে খেতে পারেন। নিয়মিত এভাবে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
চিয়া বীজ খাওয়ার অপকারিতা
পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া বীজ অন্য। এই বীজে স্বাস্থ্য উপকারীতা অনেক বেশি থাকার কারণে একে সুপার ফুড বলা হয়। যেকোনো খাবারই নিয়ম না মেনে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীতার পরিবর্তে অপকারিতা বয়ে আনে। চিয়া সিড তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও চিয়া সিড এর তেমন কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই তারপরেও আপনি যদি নিয়ম মেনে বা পরিমাণের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে এই বীজ আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই চিয়া সিড খাওয়ার আগে এর অপকারিতাগুলো আপনার জানা উচিত, যাতে করে এই বীজের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে আপনি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক চিয়া সিড এর অপকারিতাগুলোঃ
- চিয়া সিড প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে আপনার পেটে ব্যাথা হতে পারে।
- চিয়া বীজ পরিমিত পরিমাণে না খেলে আপনার পেট খারাপসহ পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার আপনি যদি চিয়া সিড পানিতে না ভিজিয়ে শুকনা খান তাহলে তা আপনার দেহ থেকে পানি শোষণ করে ফেলবে যার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হবে।
- আপনি রাতে যদি অতিরিক্ত চিয়া খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার পেট বেশি বেশি ভরা মনে হতে পারে, যার ফলে আপনার অস্বস্তি লাগবে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
পৃথিবীতে যে কয়টি সুপার ফুড রয়েছে তাদের মধ্যে চিয়া সিড। চিয়া সিড এর গুণাগুণ এতো বেশি যে দিন দিন এই বীজ মানুষের কাছে অত্যধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চিয়া সিডের উপকারিতা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখন বিদেশি এই বীজ আমাদের দেশেও উৎপাদন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম দারুন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়ম করে পরিমাণ মতো চিয়া সিড খান, এর উপকারিতা আপনার শরীরে নিজ চোখেই দেখতে পাবেন।
আশা করছি আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়েছেন। আর্টিকেলটি পড়ে চিয়া সিড সম্পর্কে আপনার কাঙ্খিত তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানান এবং পরিচিত ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম সুন্দর ও কাঙ্খিত তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url