শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন কয়েকটি নিয়ম জানুন
শিশুর পরিচর্যা সঠিকভাবে না করলে শিশুর বিভিন্নরকম সমস্যা দেখা দিবে। তাই মাকে খুব যত্ন সহকারে শিশুর পরিচর্যা করতে হবে। আপনি যদি একজন নতুন মা হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন তার নিয়ম জানা উচিত। আজকের আর্টিকেলে শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন তার কয়েকটি নিয়ম আলোচনা করা হয়েছে।
শিশুর পরিচর্যা করার জন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি । এজন্য মাকে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে শিশু পরিচর্যা করার নিয়মগুলো সম্পর্কে। এই কনটেন্টে শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন সেটা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন কয়েকটি নিয়ম।
- শিশুর পরিচর্যায় মায়ের দুধ খাওনোর নিয়ম ।
- শিশুর পরিচর্যায় মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা।
- শিশুকে মালিশ করা শিশুর পরিচর্যায় জরুরী ।
- শিশুর পরিচর্যায় তেল মালিশে কিছু সতর্কতা অবলম্বন ।
- শিশুর পরিচর্যায় শিশুকে ঘুম পাড়ানোর নিয়ম।
- বাচ্চাকে সঠিকভাবে কোলে নেওয়া ।
- শিশুর অসুস্থতার কয়েকটি লক্ষণ সমূহ।
- শিশুর যত্নে মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি ।
- শিশুর পরিচর্যায় কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
- লেখকের শেষ কথা। শিশুর পরিচর্যা কিভাবে করবেন কয়েকটি নিয়ম।
শিশুর পরিচর্যায় মায়ের দুধ খাওনোর নিয়ম
শিশুর জন্মের পর দু-তিন দিন মায়ের স্তন থেকে ঈষৎ হলুদ বর্ণে তরল পদার্থ বের হয় যাকে কোলোষ্ট্রাম বলা হয়। এটি দুধের মতো সাদা না হওয়ায় অনেকে একই দুধ মনে করেন না এবং এটি শিশুকে খেতে দেন না। কিন্তু এই কোলোষ্ট্রাম শিশুকে অতি অবশ্যই খাওয়াতে হবে কারণ এতে রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান (অ্যান্টিবডি) থাকে। অনেক সময় দুধ নেই বা দুধ কম হচ্ছে বলে শিশুকে জন্মের কয়েকদিন মাতৃদুগ্ধ পান করতে দেওয়া হয় না। এটা ঠিক নয়-এর ফলে মায়ের দুধ তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
বুকের দুধ ঠিক হচ্ছে কিনা বোঝার উপায় হল বাচ্চাকে বাইরে থেকে কোনরকম জল বা কৃত্রিম দুধ না দিয়ে যদি দেখা যায় বাচ্চার ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৬ বার প্রসাব হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চার পক্ষে দুধ ঠিক আছে। মনে রাখতে হবে শিশুর পেটের গন্ডগোল(ডায়রিয়া), সর্দি-কাশি বা অন্য কোন অসুখ করলেও বুকের দুধ বন্ধ করা উচিত নয়। বরং এই বুকের দুগ্ধ অসুস্থ শিশুকে পুষ্টি যোগান দিয়েছে উঠতে সাহায্য করে। মায়ের স্তনে ব্যথা হচ্ছে বলে অনেক সময় শিশুকে স্তন্যপান করানো হয় না।
আরো পড়ুনঃজেসমিন নামের বিখ্যাত ব্যক্তি - জেসমিন নামের বাংলা অর্থ কি
এসব ক্ষেত্রে স্তন পান করালে বুকের জমা দুধ বের হয়ে গিয়ে ব্যথার উপশম হয়। আবার অনেক সময় মায়ের অম্বল থাকলে শিশুর অম্বল হয়ে যাবে ভেবে অনেক মা স্তন্যপান করানো বন্ধ করে দেন। এই ধারণাও ভ্রান্ত।শিশু বুকের দুধ পান করার সময় কিছু বাতাস দুধের সাথে গিলে ফেলতে পারে। দুধ খাওয়ানো শেষ হলে বাতাস বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে, ফলে সঙ্গে কিছু দুধও বের হয়ে আসে। তাই অনেক মা শিশু বারবার বমি করছে এই ভ্রান্ত ধারণার বসবর্তী হয়ে শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন।
নিয়ম হলো, প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধে ফেলে পেটের চাপ সৃষ্টি করে হাওয়া বের করে দিতে হবে। এর সঙ্গে সামান্য দুধ বের হয়ে আসতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই। প্রথম কদিন শিশু স্তন্যপান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তার পায়ে বা কানে টোকা দিয়ে তাকে জাগিয়ে দেওয়া উচিত। জন্মের পর থেকে ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া বাচ্চার অন্য কোন খাবার এমনকি জল ফলের রস বা অন্য পানীয়ের দরকারই হয় না।
শিশুর পরিচর্যায় মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা
শিশুর পরিচর্যায় মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা অতুলনীয়। নিচে এগুলো তুলে ধরা হলোঃ
- এই দুধ শিশুর পক্ষে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।
- নবজাত শিশুর একটি প্রবৃত্তি হলো চুষতে চাওয়া। স্তন্যপানের মাধ্যমে এই প্রবৃত্তির পরিতৃপ্তি হয়। স্তন্যপানের মাধ্যমে শিশুর মাড়ি ও দাঁত শক্ত হয়।
- মাতৃদুগ্ধে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের উপাদান থাকে।
- মাতৃদুগ্ধ সহজ পাচ্য, শিশু সহজেই হজম করতে পারে।
- মাতৃ যুদ্ধের রোগ প্রতিরোধকারী 'অ্যান্টিবডি' থাকায় এই মাতৃদুগ্ধ শিশুকে অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। ডায়রিয়া ও শ্বাসনালীর প্রধান ও জনিত রোগ কম হয়।
- যেসব বাচ্চা মাতৃদুগ্ধ পান করে তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ জনিত রোগ বা হাঁপানি ইত্যাদি রোগ অপেক্ষাকৃত কম হয়।
- মাতৃদুগ্ধে এলার্জি হয় না।
- স্তন্যপান করানোর জন্য মায়ের শরীরের ক্ষয় বা দেহের গঠন নষ্ট হয় না-বরং স্তন্যপান করানোর ফলে মায়ের জরায়ু পূর্ণাবস্থায় দ্রুত ফিরে আসে।
- যেসব মা তার শিশুকে স্তন্যপান করান তাদের স্তনের এবং ওভারির ক্যান্সার অপেক্ষা কৃত কম হয়।
- অতএব মাতৃদুগ্ধের কোন বিকল্প নেই। তবে মা যদি ক্যান্সারের ওষুধ খান, রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমানোর ওষুধ, লিথিয়াম জাতীয় ওষুধ, রেডিও একটিভ পদার্থ বা এন্টিথাইরয়েড জাতীয় ওষুধ খান, তাহলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না। তবে সাধারণ ওষুধ খেলে মায়ের দুধ বন্ধ করানোর দরকার নেই।
শিশুকে মালিশ করা শিশুর পরিচর্যায় জরুরী
আপনার শিশু আপনার সাথে প্রথম পরিচয় ঘনিষ্ঠ হয় স্পর্শের মাধ্যমে। খুব কচি বয়সেই ও আপনার স্পর্শ দিয়েই আপনাকে চিনতে শেখে, আপনার ছোয়ায় আশ্বস্ত হয়, আরাম পায়।আপনার আর আপনার শিশুর মধ্যে বিশেষ এই বন্ধন টি আরো জোরদার করার এবং ওর নিরাপত্তাবোধের অনুভূতি বজায় রাখার সেরা উপায় ওকে মালিশ করা। এইজন্যেই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মা-বাবাকে নিজের হাতে শিশুকে মালিশ করার পরামর্শ দেন।
আরো পড়ুনঃমেয়েদের মধু খাওয়ার ১৪টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
গবেষণার ফলে জানা গেছে মালিশ করা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের পক্ষে যেমন সন্তোষজনক হয়, তেমনি ওর ঘুমের পক্ষে উপকারী, আর সময়ের আগে জন্মানো বাচ্চাদের ওজন বাড়ার ব্যাপারেও মালিশ রীতিমতো সাহায্য করে। যদিও শিশুকে মালিশ করা বহুকালের প্রচলিত প্রথা, তবুও এ নিয়ে মায়েদের মনের নানা উদ্বেগ প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। যেমন-
- কখন শিশুকে মালিশ করা উচিতঃ শিশুর পরিচর্যায় শিশুকে মালিশ করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় যখন আপনি ও আপনার শিশু দুজনেই বেশ অবসর মুডে রয়েছেন। যখন আপনার শিশু সবে খেয়েছে, পেট ভর্তি, তখন ওকে মালিশ করবেন না, আবার যখন ওর খিদে পেয়েছে, খালি পেট, তখনও মালিশ করবেন না। খাওয়ানোর পর সব সময় অন্তত ৯০ মিনিট অপেক্ষা করে তবেই মালিশের কাজে হাত দেবেন।
- কত ঘনঘন শিশুকে মালিশ করা উচিতঃ আপনার শিশুকে প্রতিদিন করে ৫ থেকে ২০ মিনিট মালিশ করুন।তবে যদি ওর অসুখ বিসুখ করে কিংবা মালিশের দিন বা আগের দিন কোন ইনজেকশন নিয়ে থাকে, তাহলে আপনার শিশুকে মালিশ বাদ দেবেন।
- কোন তেলের মালিশ শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালোঃ আপনার চেয়ে আপনার শিশুর ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই এমন তেল দিয়ে মালিশ করবেন যা ডাক্তারি পরীক্ষায় বিশুদ্ধ এবং মৃদু বলে প্রমাণিত।
শিশুর পরিচর্যায় তেল মালিশে কিছু সতর্কতা অবলম্বন
- বাচ্চার নাভি পরে যাবার পর আপনার শিশুকে আপনার তেল মালিশ করা শুরু করতে হবে। মালিশ করা বন্ধ করার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। যতদিন মা ও বাচ্চু উপভোগ করবেন মালিশ করে যান।
- শিশুকে মালিশ করার আগে আপনার হাত দুটো একটু তাঁতিয়ে নেবেন।
- আপনার আঙ্গুলের নখ ছোট করে কাটা থাকবে, নিশ্চিত হয়ে নেবেন শিশুর গায়ে আঁচর লাগতে এমন কোন গয়না আপনি পড়বেন না ।
- যতক্ষণ শিশুকে তেল মালিশ করছেন, ততক্ষণ সমানে ওর সঙ্গে কথা বলে যান কিংবা গান গেয়ে শোনান। ওর চোখে চোখ রাখুন, ওর দিকে হাসিমুখে তাকান।
- আপনার শিশুকে মালিশ করুন কোমল কিন্তু দৃঢ়ভাবে। তবে, খুব বেশি জোরে মালিশ করবেন না। শিশু আরাম পায়, স্বাচ্ছন্দ থাকে, এমন ভাবে মালিশ করুন।
শিশুর পরিচর্যায় শিশুকে ঘুম পাড়ানোর নিয়ম
শিশুর শরীর সুস্থ রাখতে হলে শিশুর পরিচর্যায় ভালো ও গভীর ঘুম শিশুর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। শিশুকে সঠিক যত্নে রাখতে আপনাকে অবশ্যই শিশুর ঘুমের খেয়াল রাখতে হবে । শিশুর ঘুম পূর্ণ না হলে ঘটবে এবং সব সময় সে বিরক্ত করবে। তাই আপনাকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর ঘুমটা যেন ঠিকমতো হয়। শিশুর যত্নে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর কিছু নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- ঘরে কথা বললে, কাজ করলে বাচ্চার ঘুমে ব্যাঘাত হবে এমন ভাববেন না । স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঘুমানোর অভ্যাস করালে পরবর্তীকালে ঘুমের সমস্যা কম হবে। সে ক্ষেত্রে ঘরে হালকা করে দোয়া বা গানও চালিয়ে রাখতে পারেন।
- শিশুকে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করান। না হলে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় শোয়ালেই ঘুম ভেঙে যাবে।
- প্রতিটি বাচ্চাই নিজের কতটা ঘুম প্রয়োজন তা ভালো করে বোঝে । তাই ও যতক্ষণ চায় ঘুমাতে দিন। সারাদিন ঘুমালেই যে বাচ্চার শরীর স্বাস্থ্য ভালো হবে এমন নয়। বাচ্চার ঘুম আর অন্যান্য এক্টিভিটিতে যেন একটা ভারসাম্য থাকে।
- শিশুর শরীর খারাপ থাকলে, বিশেষ করে শিশুর পেটে ব্যথা হলে ঘুমের সমস্যা হয়। তখন কোলে নিয়ে আপনার কাঁধে ওর মাথা রেখে ঘুম পাড়ালে আরাম পায়।
- শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময় খেয়াল রাখবেন যাতে ওকে কোন পোকামাকড়, মশা-মাছি কামড়াতে বা বিরক্ত করতে না পারে। এক্ষেত্রে আপনি শিশুর জন্য ছোট মশারিও ব্যবহার করতে পারেন।
বাচ্চাকে সঠিকভাবে কোলে নেওয়া
বাচ্চাকে সঠিকভাবে কোলে নেওয়ার নিয়ম সকলকে জানা উচিত। যাতে ছোট্ট শিশুটিকে কোলে উঠে আরাম পায় এবং কোন প্রকার ব্যথা না পায়। শিশুকে কোলে নেওয়ার কয়েকটা নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- যেকোনো নবজাতকের ক্ষেত্রে মায়ের কোল একটা আরামের জায়গা। ওকে যতটা সম্ভব নিজের কোলে রাখুন।
- শিশুকে কোলে নেয়ার সময় বা খাওয়ানোর সময় আপনার একটা হাত বাচ্চার পিঠের তলায় শিরদাঁড়া বরাবর রাখুন।
- বাচ্চার ঘাড় যতক্ষণ না শক্ত হয়, ততদিন পর্যন্ত কোলে নেওয়ার সময় অবশ্যই ঘাড়ের তলায় হাত দিয়ে রাখুন।
- সাধারণত শিশুকে কোলে নেওয়ার সময় বুকের ওপর নিয়ে মাথাটা কাঁধে রাখা হয়। তবে ভালো হয় কোমোরে করে কোলে নিলে, চলতি কথায় যাকে 'কাঁখে' নেওয়া বলে। এতে মায়ের কোমরের দু পাশ দিয়ে বাচ্চার দুটো পা থাকে। এতে বাচ্চার কোমর ও সংলগ্ন অংশের গড়নে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়।
শিশুর অসুস্থতার কয়েকটি লক্ষণ সমূহ
নিউবর্ন বেবির শরীর অসুস্থ কিনা, তা বোঝার জন্য কতকগুলো কমন সিম্পটম জেনে রাখুন। এ জাতীয় লক্ষণ দেখলে বুঝতে পারবেন কোন অসুবিধার মধ্যে আছে কিনা আপনার শিশুটি এবং সেই অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারবেন। চলুন তাহলে শিশুর অসুস্থতার কয়েকটি লক্ষণ জেনে নেয়া যাক। নিচে শিশুর অসুস্থতার কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরা হলোঃ
- প্রথমে লক্ষ্য রাখুন শিশুর অ্যাক্টিভিটির উপর। বাচ্চা এক্টিভলি সাক করছে কিনা, ফিডিং রেট ঠিক আছে কিনা, খেলাধুলো করছে কিনা অথবা জেগে থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে হাত পা নাড়ছে কিনা।
- খেয়াল করুন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শিশুটির ওজন ঠিকমতো বাড়ছে কিনা।
- বাচ্চার ইউরিন রেগুলার থাকা খুব জরুরী। নিউবর্ন বেবির ক্ষেত্রে দিনে অন্তত ৬বার ইউরিন হওয়া স্বাস্থ্যকর। স্টুল অবশ্য দিনে বেশ কয়েকবার হতে পারে।
- বাচ্চাকে দেখে যদি সুস্থ না মনে হয়, টোকা মারলে যদি না কাঁদে, ঝিমিয়ে থাকে, হাতের চেটো বা পায়ের তলা হলুদ হয়ে যায় বা অল্প খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে শিশু অসুস্থ বলে ধরে নেওয়া যায়।
- পেটে ব্যথা হলে অনেক কিছুই কি করবে বুঝতে না পেরে বারবার খেতে চায়। খিদে না থাকায় অল্প খেয়েই শুয়ে পড়ে। শুলেই আবার পেটে ব্যথা শুরু হয়, যার ফলে কান্না করে এরকম লক্ষণ দেখলেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
শিশুর যত্নে মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি
শিশুর সঙ্গে মায়ের অবশ্যই সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। শিশু আর মায়ের সম্পর্ক তৈরি শিশুর যত্নে ভীষণ জরুরি। যেহেতু আপনার শিশুটি আপনার সাথে কথা বলে বোঝাতে পারছে না তার ভালো লাগা কিংবা কোন সমস্যার কথা তাই তার আচরণের দিকে লক্ষ্য রেখে আপনাকে তার সাথে সম্পর্কে গড়ে তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আপনি মেনে চলতে পারেন যেটা শিশুর সাথে আপনার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। শিশুর সাথে মায়ের সম্পর্ক তৈরির কিছু টিপস নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- বাচ্চার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক তৈরীর সবথেকে সোজা রাস্তা হল বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটানো। দিনের যতটা সময় পারেন আপনার বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটান। আপনি ওয়ার্কিং হলে অফিসে যাওয়ার আগে এবং বাড়ি ফিরে অবশ্যই আপনার নবজাতকটির সঙ্গে সময় কাটান।
- বাচ্চাকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, গোসল করানোর কাজগুলো যতটা সম্ভব নিজ হাতে করার চেষ্টা করুন।
- মায়ের কোল এবং ব্রেস্ট মিল্ক শিশুর সঙ্গে মায়ের যোগসূত্র তৈরির সবথেকে জোরালো রাস্তা । শিশুকে যত নিজের কাছাকাছি রাখবেন তত নিজের মায়ের শরীরের গন্ধ, হাতের স্পর্শ চিনতে পারবে এবং মায়ের সঙ্গে ওর একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
- শিশুর সঙ্গে মায়ের এবং পরিবারের অন্যান্যরা যত ইন্টারেক্ট করবেন, ততই বাচ্চা হাসিখুশি এবং মিশুক হবে। এরকম পরিবেশে অনেক বাচ্চারই প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রোথ ভালো হয়।
- শিশুর যত্নে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ।
- শিশুকে ধরার আগে সব সময় হাত ধুয়ে নিন। কোন ভালো সাবান ব্যবহার করুন। স্পিরিট বেসড সাবান এ ক্ষেত্রে খুব ভালো। হাত ধোয়ার সময় অবশ্যই হাতের দুই পিঠ এবং কোনই অবধি ধুই নিন।
- নিউবর্ন বেবিকে হ্যান্ডেল করার সময় মায়ের হাতে আংটি বা চুড়ি না থাকায় ভালো কারণ চুরি বা আংটিতে জমে থাকা ময়লার থেকে বাচ্চার ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে। এতে বাচ্চার শরীর কেটে যেতেও পারে।
- বাচ্চাকে ধরা বা ওকে গোসল করানো, খাওয়ানোর সময় অবশ্যই একটা পরিষ্কার পোশাক পড়ুন। যে পোশাক পড়ে আপনি বাড়িতে কাজ করছেন তা পরে ওকে ধরবেন না। বাইরে থেকে এসে জামা কাপড় ছেড়ে তবে ওকে ধরুন।
- পরিবারের অন্যরা বাইরের কেউ যদি বাচ্চাকে ধরেন তবে তারা যেন হাত ধুয়ে, বাইরের পোশাক বদলে নেন, সেদিকেও কড়া নজর রাখতে হবে।
- শিশুর ঘর, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
- শিশুর কানে-নাকে তেল দেওয়া, নাড়িতে ঘুটে দেওয়ার মত সাধারন ভুল ধারণা গুলোকে একদম প্রশ্রয় দিবেন না। বাড়িতে যদি নবজাতক থাকে, তবে যাতে কোন নেগেটিভ এনভায়রনমেন্ট বা মেন্টালিটি তৈরি না হয় সেদিকে নজর রাখুন। বাড়ির খোলামেলা, হাসিখুশি পরিবেশ বাচ্চার ওপরেও ভালো প্রভাব ফেলে।
শিশুর পরিচর্যায় কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
নিজের সন্তানের দেখাশোনা নিজের হাতে করতে ভালোবাসেন মায়েরা। খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানো, শিশুর ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মত কাজ করতে করতে বারবার মনে হয়, আচ্ছা যা যা করছি তা ঠিকঠাক করতে পারছি তো ? কোনভাবেই শিশুকে ব্যাথা দিয়ে ফেলবো না তো ?
আরো পড়ুনঃ আপনি মানসিক রোগী তা কিভাবে বুঝবেন ?
এরকম নানা প্রশ্ন নানা দ্বিধা কাটে ওঠার জন্য কিছু বিশেষ টিপস নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- সব সময় মনে রাখুন আপনার সন্তানের কাছে কিন্তু আমাদের ধরণধারণ সবই নতুন, সবকিছুই অপরিচিত।সেজন্য শিশুকে গোসল করানো, ফিড করা, জামা পড়ানোর সময় যতটা সম্ভব শান্তভাবে, ধীরেসুস্থে ধরুন। ওকে প্রত্যেকটি অনুভূতির সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত হওয়ার যথেষ্ট সময় দিন।
- বাচ্চার কোন ব্যবহারের মধ্যে নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা ছক খুঁজতে যাবেন না। বড়রা ঘড়ি ধরে ঘুম, খাওয়া বা অন্যান্য কাজ করতে পারেন, কিন্তু নিজেদের সুবিধামতো সেই নিয়মানুবর্তিতা বাচ্চাদের কাছ থেকে আশা করা উচিত নয়। শিশুরা একসঙ্গে পেট ভরে নাও খেতে পারে।সারারাত না ঘুমিয়ে জেগেও থাকতে পারে। অনেক সময় কোনও কারণ ছাড়াই কান্না থামিয়ে দিতে পারে। এই আনপ্রেডিক্টেবিলিটি মেনে নেওয়াটাই ভালো। শিশুর যে সময়ে যা প্রয়োজন তার একটা আন্দাজ করে নিজেদের রেডি রাখুন।
- জন্মের প্রথম ৩-৪ মাস বাচ্চার প্রয়োজন খুবই সীমিত। ঝকমকে জামা কাপড়, নানা ধরনের খেলনা পাতি, দামি ব্রান্ডের টয়লেটরিজ কিনতে হয়তো আপনার মজাই লাগছে কিন্তু এর মধ্যে কোনওটাই আপনার বাচ্চার তেমন প্রয়োজন নেই। শুধু খেয়াল রাখুন যাতে ওর প্রাথমিক প্রয়োজন যেমন দুধ, উষ্ণতা, পরিছন্নতা সঠিক সময়ে দেয়া হয়।
- বাচ্চাকে সঙ্গ দেওয়া শিশুর পরিচর্যার এক অন্যতম অঙ্গ। নিজের মুখ এক ফুট দূরত্বে এনে ওর সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করুন। শান্ত স্বরে, ধীর লয়ে কথা বা বলুন বা গান করুন যাতে আপনার গলার স্বর শুনে ও রিল্যাক্সড বোধ করে ।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url