বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব সম্পর্কে জেনে নিন
পেইজ সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব সম্পর্কে জেনে নিন
- উৎসব কি বা উৎসব বলতে কি বুঝায় ?
- বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব গুলো কি কি ?
- ঋতুভিত্তিক উৎসব সম্পর্কে আলোচনা।
- ব্যক্তিগত উৎসব সম্পর্কে আলোচনা।
- জাতীয় দিবস সমূহ উদযাপন।
- ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে আলোচনা।
- ঈদুল ফিতর উদযাপন সম্পর্কে আলোচনা।
- ঈদুল আযহা উদযাপন সম্পর্কে আলোচনা।
- দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে আলোচনা।
- বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন নিয়ে আলোচনা ।
- বড়দিন উদযাপন সম্পর্কে ।
- বাংলা নববর্ষ বাঙালির অন্যতম সামাজিক উৎসব ।
- বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব একুশের বইমেলা ।
- বাংলাদেশের সামাজিক অন্যান্য উৎসব ।
- উৎসবের প্রয়োজনীয়তা ও জাতীয় জীবনে এর প্রভাব।
- লেখকের শেষ বক্তব্য। বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব সম্পর্কে।
উৎসব কি বা উৎসব বলতে কি বুঝায় ?
বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে আনন্দময় কোন অনুষ্ঠান পালন করাই মূলত উৎসব। বাংলাদেশের কিংবা বাঙালি রয়েছেবৈচিত্র্যময় বিভিন্ন ধরনের উৎসব। এগুলো বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব, বাঙালির প্রাণের উৎসব। এসব উৎসব প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের সংকীর্ণ পন্ডি থেকে মিলনের বৃহত্তর আসলে মিলিত করে এ উৎসব। সুতরাং মানুষ হওয়াবদ্ধ হয়ে বসবাস করবে এটাই নিয়ম। আর এ সমাজবদ্ধ মানুষের কর্মব্যস্ততা তাদের জীবনকে কুক্ষিগত করে রাখে। কর্মব্যস্ততার মাঝে মানুষ কখনো কখনো স্বস্তি চায়।বিভিন্ন সামাজিক উৎসব মানুষের জীবনে সেই স্বস্তি এনে দেয়।
উৎসব বলতে মূলত আনন্দময় অনুষ্ঠান বোঝায়।উৎসবের মাধ্যমে আমরা আনন্দ প্রকাশ করি এবং আনন্দ লাভ করে থাকি। তবে এ আনন্দ এক প্রকার নয়। পারিবারিক, সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডলে সকলের সম্মেলনে সুখ বা আনন্দ লাভের উপায় হল উৎসব। সে অর্থে উৎসব সকলকে আনন্দ দেয়। ইংরেজি 'ফেস্টিভল' কথাটির অর্থ হলো উৎসব। তবে 'ফেস্টিভল' কথাটি একটু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা পরিবার এখানে গৌণ।
বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব গুলো কি কি ?
এ উৎসব মূলত সর্বজনীন। সমাজের সবাই একত্রে এ উৎসব পালন করে। সাধারণত সামাজিক উৎসব বলতে তাকেই বুঝায় যে উৎসব একটি দেশের জনগোষ্ঠী বা একটি দেশের মানুষ সবাই মিলে মিশে একত্রে আনন্দের সহিত পালন করে। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে বসবাসরত সকলে মিলে সামাজিক উৎসব পালন করে থাকে। মানুষ সামাজিক জীব।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে জেনে নিন
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ একা করে সাথে মিলেমিশে আনন্দ উল্লাস করতে পছন্দ করে। সামাজিক উৎসবগুলোতে মানুষ আশেপাশে থেকে সবাই এক জায়গায় একত্রিত হয় এমনকি অনেকেই অনেক দূর দূরান্ত থেকেও এসব উৎসবে আনন্দ করার জন্য মিলিত হয়। এদেশে সামাজিক উৎসবগুলোকে অনেক প্রাধান্য দেয়া হয়। যার ফলে এসব উৎসবে কাছের কিংবা দূরের সবাই একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
- বিয়ের অনুষ্ঠান
- নববর্ষের অনুষ্ঠান ও মেলা
- একুশের বইমেলা
- পৌষ মেলা
- বসন্ত উৎসব
প্রভৃতি সামাজিক উৎসবের আওতাধীন। এসব সামাজিক উৎসবে ধনী-গরিব, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন বর্ণের সবাই একসাথে মিলেমিশে আনন্দ উল্লাস করে। তাই বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলো অনেক জনপ্রিয় এবং আনন্দদায়ক।
ঋতুভিত্তিক উৎসব সম্পর্কে আলোচনা
বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি তার রূপ পাল্টায়। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সংস্কৃতিতে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন আনে উৎসবের বার্তা। এসব উৎসবে মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ তো বাঙালিরা অনেক ধুমধাম করে পালন করে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। এমনকি পহেলা বৈশাখে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।
যার ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।এছাড়া আছে চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা ফাল্গুন, হেমন্তের নবান্ন উৎসব, পৌষের পিঠা খাওয়ার উৎসব, শারদীয় উৎসব, বসন্তে দোল খেলার উৎসব প্রভৃতি। এভাবে প্রতিটি ঋতু একটি আলাদা উৎসব নিয়ে আসে বাঙালির জীবনে, আর বাঙালি তা পালন করে, মেলার আয়োজন করে পিঠাপুলি তৈরি করে। শীতে পিঠাপুলি খাওয়ার অনুষ্ঠান অনেক মজার ও আনন্দদায়ক হয়। আত্মীয়-স্বজন পরিচিতদের দাওয়াত দেয় এবং খাওয়া-দাওয়ার আনন্দ উৎসবের ধুম পড়ে যায়।
ব্যক্তিগত উৎসব সম্পর্কে আলোচনা
ব্যক্তি কেন্দ্রিক উৎসব একান্তই ব্যক্তি নিজস্ব ব্যাপার হলেও এ ধরনের অনুষ্ঠানে সমাজের অনেক মানুষই অংশগ্রহণ করে। ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানগুলো অনেক ধুমধাম করে পালন করা হয় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপড়শি এবং পরিচিতদের সঙ্গে নিয়ে। তবে এতে ব্যক্তির স্বতন্ত্র চিন্তা চেতনা এবং রুচি প্রাধান্য পায়। এ ধরনের উৎসব সর্বজনীন হয়। এসব অনুষ্ঠানে ব্যক্তি তার পছন্দমত যে কোন ধরনের মানুষকে দাওয়াত দেয় এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করে। জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, মুখে ভাত, মেয়েদের কান ফুটা করার অনুষ্ঠান এবং যেকোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠান এ উৎসবের অন্তর্ভুক্ত।
জাতীয় দিবস সমূহ উদযাপন
বিভিন্ন রকম জাতীয় দিবসে আনন্দ আয়োজনে ভরে উঠে দেশ। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ স্থানীয় স্মৃতিস্থাপনা গুলোতে মানুষের ঢল নামে। মানুষ বিভিন্ন ফুলের তোড়া, ফুলের মালা, আবার বিভিন্ন রকম ফুল নিয়ে এসব জায়গায় উপস্থিত হয়। এ যেন অনেক আনন্দমুখর দিন। সশস্ত্র বাহিনী আয়োজন করে কুচকাওয়াজ প্রদর্শনীর। বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, বের হয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ছোট বড় সবাই এসব দেখতে যায়, সবাই অনেক আনন্দের সাথে গ্রুপ উপভোগ করে বিশেষ করে শিশুরা তো অনেক মজা পায়।
জাতীয় দিবস গুলোতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরনের অংশের আয়োজন করে। বিভিন্ন রকম খেলাধুলা, দৌড় প্রতিযোগিতা, ছবি অংকন, বিতর্ক অনুষ্ঠান প্রভৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এসব জাতীয় দিবসগুলোতে। যার ফলে ছোট থেকে বড় সব ক্লাসের এবং সব ধরনের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনা উন্মোচিত হয়। এ দিবস গুলোই গোটা জাতির সম্মিলিত দেশের সংগ্রামী ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে তোলে এবং দেশপ্রেমের ভিত্তিকে মজবুত করে।
ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে আলোচনা
ধর্মীয় উৎসবগুলো সম্প্রদায় ভিত্তিক। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে। সকল ধর্ম অবলম্বী তাদের রীতি অনুযায়ী যার যার ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। যেমন-মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল-ফিতর, ঈদুল-আযহা, ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, শবে-বরাত, শবে-কদর, মহররম ইত্যাদি। এসব উৎসবের মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন রকম ইবাদাত বন্দেগীর পাশাপাশি বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাওয়া দাওয়া করে , একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ এবং অনেক আনন্দ ও মজা করে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা, দোল পূর্ণিমা ইত্যাদি। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হিন্দুরা অনেক বড় বড় আয়োজন করে থাকে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, ভাদ্র পূর্ণিমা ও আশ্বিনী পূর্ণিমা। বিভিন্ন আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে বৌদ্ধরা তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপন করে থাকে। ক্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো- ক্রিসমাস ডে, স্টার সানডে ইত্যাদি। খ্রিস্টানরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান, গান বাজনা ও জাকজমকতার সাথে তাদের এসব ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। সকল সম্প্রদায়ের রোগী বেশ আনন্দের সঙ্গে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে। নিচে ধর্মীয় উৎসবগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ঈদুল ফিতর উদযাপন সম্পর্কে আলোচনা
বাংলাদেশ এর বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব ঈদ উৎসব। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসব- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। রমজানের একমাস কঠোর সংযমের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর আসে। মুসলিম সম্প্রদায় একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর উদযাপন করে অনেক আনন্দের সহিত। আগের দিন চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে উৎসবের আমেজ শুরু হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন
ঈদের দিন সকালে মুসলিম সম্প্রদায়ের সকল মানুষ দলে দলে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যায়। ঈদের মাঠে সমবেদ জনতার জামাত শেষে কোলাকুলি করার অপরূপ দৃশ্য সত্যি মনমুগ্ধকর। সারাদিন চলে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়ানো এবং বিচ্ছিন্নভাবে ছোটখাটো খেলা আয়োজন। আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের বাসায় গিয়ে সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। ঈদুল ফিতর অনেক সময় ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের গণ্ডি অতিক্রম করে সমাজের সকল ধর্মের মানুষের অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে।
ঈদুল আযহা উদযাপন সম্পর্কে আলোচনা
ঈদুল আযহা মুসলমান সম্প্রদায়ের আরেকটি প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব। এ উৎসবের মূলে রয়েছে আত্মত্যাগের এক মহান শিক্ষা। আল্লাহকে খুশি করানোর জন্য নিজের পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার যে মানসিকতা দেখেছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ) , ই উদ্ভাসিত হয়ে মুসলমান সম্প্রদায় এ দিন সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করেন। সেই পশুর মাংসের এক অংশ গরিবদের মাঝে বিতরণ করেন । ভোগ নয় ত্যাগ, সকলের মাঝে একতা ও শান্তি-এ মহান আদর্শ সামনে রেখে প্রতিবছর আমাদের মাঝে আসে ঈদ উৎসবের দিনটি।
দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে আলোচনা
হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহ ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। এ উৎসবের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের আর কোন উৎসবই এমন জাঁকজমকে সঙ্গে পালিত হয় না। এ কারণে দুর্গাপূজাকে 'কলির অশ্বমেধ' বলা হয়। বাংলাদেশের দুর্গাপূজা হয় শরৎকালে। বাসন্তী পূজার প্রচলনও আছে। তবে তা ব্যাপক নয়। অযোধ্যায় রাজা ছিলেন দশরথ। তার পুত্র রামচন্দ্র। এ রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করার জন্য রামচন্দ্র দুর্গাপূজা করেন। ওই পূজা হয়েছিল শরৎকালে। এজন্য এ পূজার নাম শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দু সম্প্রদায় অনেক ধুমধাম করে এই পূজা উৎসব পালন করে।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন নিয়ে আলোচনা
বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বুদ্ধদেবের জন্ম, গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্ব লাভ,পরিনির্বাণ ও মহাপ্রয়াণ এই দিনে ঘটেছিল বলে দিনটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র। বুদ্ধের শিক্ষা ও মহাবানী স্মরণ করে মহাসমারোহে দিনটি পালিত হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমা ছাড়াও বৌদ্ধ সমাজের আরেকটি বড় উৎসব হল প্রবারণা ও কঠিন চীবর দান উৎসব। এই সবগুলো বৌদ্ধরা অনেক বড় সড়ো করে উদযাপন করে।
বড়দিন উদযাপন সম্পর্কে
বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বড়দিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ফ্রিস্টের আবির্ভাব উপলক্ষে আনন্দ উপভোগ করায় দিনটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য। শিশুদের নিকট দিনটি বেশ আকর্ষণীয় কারণ তারা শান্তা ক্লজের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম উপহার লাভ করে। তাই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শিশুরা এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। এই দিনটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন অনেক আনন্দের সাথে ও জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির অন্যতম সামাজিক উৎসব
প্রাচীনকাল থেকেই বাঙ্গালী জাতির উৎসব প্রিয়। সময় পেলে বাংলার মানুষ নানারকম উৎসবে মেতে উঠে।বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস উৎসব সমৃদ্ধ। বাঙালির সামাজিক উৎসবের মাঝে উদ্দীপনা খুঁজে পাওয়া যায়।উৎসবগুলোতে আনন্দই মুখ্য এবং আনন্দই এর প্রাণ।গান-বাজনা, হাসি আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে সকল স্তরের মানুষ উৎসবের অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে । তাই বাংলার সামাজিক উৎসবগুলো বাঙালি প্রাণের কথা বলে, বাঙালির প্রাণ উচ্ছ্বাসে অনুরনিত হয়।
বাঙালি সবচেয়ে বড় ও বৈচিত্রময় সামাজিক উৎসব হল বাংলা নববর্ষের উৎসব। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বাংলা নববর্ষের উৎসব পালনী মেতে উঠে এবং নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলার আবহমান সংস্কৃতিক চেতনার ধারক ও বাহকে এ দিনটি । পূর্বে গ্রামীণ বাংলায় পুন্যাহ, বৈশাখী মেলা, হালখাতা ইত্যাদি নানা আয়োজনের ব্যবস্থা থাকত। বর্তমানে কালের বিবর্তনে এর অনেকগুলো হারিয়ে গেলেও হালখাতা মেলা ইত্যাদি এখনো এ উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে । এসবের বাইরে শহরের অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, সংগীতের বা আবৃত্তির আসর, আলোচনা সভা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব একুশের বইমেলা
একুশে ফেব্রুয়ারীর সংগ্রামী চেতনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়েই আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। একুশের বই মেলা তারই অন্যতম একটি আয়োজন। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে পুরো মাস জুড়ে চলে এ মহা আয়োজন। এই মেলা বই প্রেমী মানুষ, প্রকাশক, লেখকসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনেকেই একুশের বইমেলায় বই কিনতে গিয়ে লেখকদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেয়। লেখকরাও তাদের ভক্তদের উপরে খুশি হন এবং বই কিনতে ও করতে উৎসাহিত করেন।
এই মেলা আমাদের মাঝে সাহিত্য সংস্কৃতিও জাগ্রত করে এবং জাতীয় যেন চেতনাকে শাণিত করে। বইয়ের প্রতি যাদের রয়েছে অবিরাম ভালোবাসা তারাই এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করে। আর এই বইয়ের পোকারায় একুশের বইমেলায় বই পড়া ও বই কেনার আনন্দে মেতে ওঠে। তারা আবার বইকে উপহার হিসেবেও ব্যবহার করে।
বাংলাদেশের সামাজিক অন্যান্য উৎসব
এই উৎসবগুলোর বাইরেও ছোট বড় নানা উৎসবে সারা বছর মুখরিত থাকে এ দেশ। এর মধ্যে গ্রাম ভিত্তিক নবান্ন উৎসব, চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শহরে উদযাপিত আরো উৎসবের মধ্যে রয়েছে শরৎ উৎসব, পৌষ মেলা, পিঠা উৎসব, কবিতা বা নাট্য উৎসব, বিশিষ্ট শিল্পীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন উপলক্ষে উৎসব, ঘুড়ি উড়ানো উৎসব সহ ননদ নানা ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন। সবমিলিয়ে গোটা বাংলাদেশ যেন আনন্দ- উৎসবের তীর্থভূমি।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন
উৎসবের আনন্দ মানুষের সহজাত। কারণ এটা মানুষের অন্তর স্থিত। তাই শত কর্মব্যস্ততার মাঝে মানুষ উৎসবের দিনগুলোতে এক অনাবিল সুখানুভূতির মধ্য দিয়ে নিজেকে বিলীন করে নতুনভাবে কর্ম প্রেরণা লাভ করে থাকে। অপসংস্কৃতির প্রভাবে অনেক উৎসবে হারিয়েছে তা চিরচেনা রং। তারপরও বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলো আজও বাংলার মানুষকে একটি সুন্দর মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।
উৎসবের প্রয়োজনীয়তা ও জাতীয় জীবনে এর প্রভাব
মানুষের চিন্তা করছে জন্য প্রয়োজন বিনোদন। কাজের মাঝে মানুষ বেঁচে থাকে। আর এ বেঁচে থাকার জন্যই মানুষের জীবনে আনন্দ উৎসবের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেই প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের উৎসব বাঙালির সমাজ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রূপে পরিণত হয়ে আসছে। সবুজ শ্যামল আমাদের এই বাংলাদেশ গানের দেশ, প্রাণের দেশ, উৎসবের দেশ। এখানে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ হয়। উৎসবে ভরে উঠে মানুষের জীবন।
মানুষের ব্যস্তময় জীবন, নিষ্প্রাণ ও হতাশাগ্রস্থ জীবনের গতিতে যেন হঠাৎ প্রাণের সঞ্চার ঘটে উৎসব গুলোর মধ্যে দিয়ে। উৎসব মানুষের মনে প্রসন্নতা আনে, ক্লান্তির অবসান ঘটায় এবং মানুষকে পৌঁছে দেয় উদার মানসলোকের উন্মুক্ত দ্বারপ্রান্তে । সুতরাং চিত্রের বিকাশে ও প্রসন্নতার জন্য মানুষের ব্যক্তি জীবনে ও জাতীয় জীবনে উৎসবের গুরুত্ব অত্যাবশীকীয়। এজন্য বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এতটা গুরুত্ব বহন করে।
লেখকের শেষ বক্তব্য। বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব সম্পর্কে
আধুনিক যুগে বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব গুলোর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় কিছু নেতিবাচক দিক। তারপরও বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলো একাধারে যেমন বাঙালি চিন্তা চেতনার স্রোতকে অব্যাহত রেখেছে, তেমনি এগুলো বাংলার মানুষের ঐতিহ্য, ধর্মবোধ ও সামাজিক একাত্মতা যুগ যুগ ধরে অটুট ও অক্ষুন্ন রেখেছে । তাই সামাজিক জীবনে সবাই যেন এসব উৎসবের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতায় কাম্য।
পুরো আর্টিকেলটি নিশ্চয়ই খুব ভালোভাবে পড়েছেন এবং বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন এবং আপনার পরিচিত ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম আরো সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পেতে রেগুলার আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আমাদের পাশে থাকুন। এতক্ষণ কষ্ট করে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url