বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন আপনি কি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন ? যদি আপনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য ।আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে সবিস্তরে আলোচনা করব, যা দ্বারা আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে জানা আপনার জন্য অবশ্যই জরুরী
।আপনার জানার সুবিধার্থে আজকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে আমাদের লিখা। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে। পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে কি বুঝায়
বাংলাদেশ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। এটি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদেশের জনসংখ্যা তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ খুবই কম। আবার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, মূলধন এবং প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাকৃতিক সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই আমাদের দেশের শ্রম মূলধন এবং প্রযুক্তিবিদদের কাজে লাগে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন
সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে প্রকৃতি প্রদত্ত সকল সম্পদকে বুঝানো হয়। এই সম্পদ মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না। তবে মানুষ আহরণ এবং ব্যবহার করতে পারে। দেশের উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানবসম্পদ পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো কি কি ?
প্রাকৃতিক সম্পদ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সম্পদ। যে সম্পদ মানুষ সৃষ্টি করতে পারেনা, প্রকৃতির মাধ্যমে আমরা যে সম্পদ পাই সেটাই হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশেও অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনাগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- ভৌগোলিক অবস্থান
- জলবায়ু
- বৃষ্টিপাত
- মৃত্তিকা
- নদনদী
- খনিজ সম্পদ
- মৎস্য সম্পদ
- কৃষিজ সম্পদ
- পানি সম্পদ
- প্রাণী সম্পদ
- বনজ সম্পদ
- সৌরশক্তি
বাংলাদেশের খনিজ সম্পদগুলো কি কি ?
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী জেলাসমূহের মাটির নিচে গ্যাস, কয়লা, তেল, চুনাপাথরসহ নানা ধরণের খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ আহরণ করে দেশের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশেও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে আরো অনেক ধরণের খনিজ ও প্রানিজ পদার্থ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে খনিজ সম্পদ অন্যতম । বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রাকৃতিক গ্যাস
- কয়লা
- খনিজ তেল
- চুনাপাথর
- চিনামাটি
- কঠিন শিলা
- সিলিকা বালি
- তামা
- ইউরেনিয়াম
- গন্ধক
- লবণ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস
প্রাকৃতিক গ্যাস হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। সিলেটের হরিপুরে সর্বপ্রথম গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় সালে। ১৯৫৭ সালে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭৬ ভাগ পূরণ করে। বাংলাদেশে মোট আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ২৫ টি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -
- সিলেটের হরিপুর
- সুনামগঞ্জের ছাতক
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস
- কুমিল্লার বাখরাবাদ
- চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া ইত্যাদি।
গ্যাস সম্পদের অনুসন্ধান এবং দ্রুত অপসারণের ১৯৮৮ সালে সারা দেশকে ২৩টি ব্লকে ভাগ করা হয়।২০১১-২০১২ অর্থবছরে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭৪৩.৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৩২.০৭ বিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে ১৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের ৮৩টি কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের খনিজ সম্পদ কয়লা
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আরেকটি খনিজ সম্পদ হচ্ছে কয়লা । বাংলাদেশের কয়লা সম্পদ যেমন উন্নত নয়। আমাদের দেশে যে কয়লা পাওয়া যায় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফরিদপুরের বাসিয়া এবং চান্দাবিল ও খুলনার খুলা বিলে প্রচুর পীট জাতীয় কয়লা পাওয়া গেছে।
এছাড়াও রাজশাহী, নওগাঁ এবং সিলেটে বিটুমিনাস এবং লিগনাইট নামক উৎকৃষ্ট মানের কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। ১৯৮৬ সালে দিনাজপুর জেলার বড়পুকুরিয়া এলাকায় বিরাট কয়লা খনি আবিষ্কৃত হয়। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মোট ৫টি কয়লার ক্ষেত্রের কয়লা মজুদের পরিমাণ প্রায় ৩৩০০ মিলিয়ন টন, যা প্রায় ৪৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমতুল্য । ২০১০-২০১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত মোট উত্তোলিত কয়লা ৩.৯৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
বাংলাদেশের অন্যান্য খনিজ সম্পদ
- খনিজ তেলঃ অনেক বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশের প্রচুর খনিজ তেল পাওয়া যাবে। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। ১৯৮৬ সালে সিলেট হরিপুর প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের ৭ম কূপ থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে কিছু খনিজ তেল পাওয়া যায়। কূপটির ২০২০ থেকে ২০৩০ মিটার গভীরতায় ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ আছে। তবে উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ প্রায় ৬ মিলিয়ন ব্যারেল। এছাড়াও ফ্রেঞ্চ গঞ্জ-৩ এবং কৈলাশটিলা-২ কূপে খনিজ তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু কারিগরি জটিলতার কারণে উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।
- চুনাপাথরঃ সিলেট জেলার জাফলং, ঝোকীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ভান্ডার ঘাট, টাকের ঘাট, লাল ঘাট, বাগলি বাজার, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড এবং কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে চুনা পাথর পাওয়া গেছে। জয়পুরহাট চুনাপাথর প্রকল্প থেকে বছরে প্রায় ১৬ লাখ টন চুনাপাথর উত্তোলিত হয়ে থাকে।
- চীনামাটিঃ দেশের সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল চীনামাটি বা সাদামাটি উত্তরণের জন্য খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো হতে কোয়ারী ইজারা প্রদান করা হয় । বর্তমানে ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায় মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এরূপ ইজারা রয়েছে।
- কঠিন শিলাঃ রংপুর জেলার রানীপুকুর ও শ্যামপুর এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশে বার্ষিক কঠিন শিলার চাহিদা প্রায় ৬০-৭০ লাখ মেট্রিক টন। ২০১২ সাল পর্যন্ত মোট উৎপাদিত কঠিন শিলার পরিমাণ মাত্র ১৮.১১ লাখ মেট্রিক টন।
- সিলিকা বালুঃ সিলেটে নয়াপাড়া, ছাতিয়ানী, শাহজি বাজার ও কুলাউড়া, চট্টগ্রামের দোহাজারী, জামালপুরে বালিঝুরি প্রভৃতি স্থানে সিলিকা বালু পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুট সিলিকা বালু উৎপাদিত হয় ।
- ইউরোনিয়াম ও গন্ধকঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পাহাড়ে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় বাংলাদেশের একমাত্র গন্ধক খনি অবস্থিত।
প্রাণি সম্পদ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রাণী সম্পদকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ বলা যায় । প্রাণী সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-(১)বন্যপ্রাণী এবং (২)গৃহপালিত প্রাণী। বন্যপ্রাণী বলতে হাতি, বাঘ, হরিণ, চিতাবাঘ, বনবিড়াল, শিয়াল, বানর, সরীসৃপ এবং নানা ধরনের পাখিকে বুঝানো হয়। আবার গৃহ পালিত প্রাণীদের মধ্যে গরু,ছাগল, মেষ, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি উল্লেখযোগ্য। এ সকল প্রাণী পালন করে যেসব প্রাণীজ দ্রব্য পাওয়া যায় তার মধ্যে মাংস, দুধ, ডিম, চামড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ বনজ সম্পদ
জলবায়ুগত অবস্থা সঙ্গে বন সম্পদের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। উষ্ণ ও অর্ধ জলবায়ু অঞ্চলে সারা বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে সেখানে নিবিড় ও বড় বড় অরণ্য বেড়ে উঠেছে। এজন্যই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম চিরহরিৎ অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত যে সকল ভূমিতে ছোট, মাঝারি ও বড় ইত্যাদি অসংখ্য বৃক্ষ সমাবেশ ঘটে থাকে। আবার বনভূমি থেকে প্রাপ্ত সম্পদকে বনজ সম্পদ বলা হয় ।
কোন একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে আমাদের দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ ১৭. ০৮ % ।বাংলাদেশের বলদ সম্পদ দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার সাথে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু , মাটি এবং উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বনজ সম্পদকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি ।
- ক্রান্তীয় পত্র-পতনশীল বৃক্ষের বনভূমি।
- স্রোতজ বনভূমি বা সুন্দরবন ।
মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদ
মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। এ দেশে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল এবং হাওর রয়েছে। আর এ সকল জলাশয় গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের পরিকল্পিত উপায়ে চিংড়ি মাছের চাষ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে চিংড়ি মাছের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল বলে আশা করা যায়। ইলিশ, রুই, কাতলা, মাগুর, বোয়াল, গজার, শোল, পুঁটি, শিং, চিংড়ি , পাবদা, টেংরা প্রভৃতি বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ।
আবার এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ভেটকি, রূপচাঁদা, লাক্ষা, চুরি, কোরাল, গলদা চিংড়ি প্রভৃতি মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ থেকে গুণগত ও মানসম্মত হিমায়িত চিংড়ি এবং মৎস্যজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, হংকং, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যে কোন দেশের মৎস্য সম্পদের সঙ্গে সরাসরি ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর সম্পর্ক রয়েছে। এখানে ছোট বড় সকল রকম মাছ পাওয়া যায়। বঙ্গোপসাগরে মাছের ভান্ডার রয়েছে। বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত, নদনদীতে পানিপ্রবাহ, খাল, বিল, হাওড় পুকুর ইত্যাদিতে পানি থাকায় দেশটি মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ বলে পরিচিত।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কৃষিজ সম্পদ
বাংলাদেশ বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে কৃষি প্রধান দেশ। কৃষকগণ বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ উৎপাদন করেন এদেশের ভূ-প্রকৃতি মাটি পানি ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে । কৃষি উৎপাদনে একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। এজন্য অঞ্চল ভেদে কৃষি উৎপাদনে তারতম্য ঘটে । বাংলাদেশ নদী বিবত উর্বর অঞ্চলে ধান, গম সহ কৃষি উৎপন্ন বছরে কয়েকবার উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশে ধান, আলু ও পাটের উৎপাদন ব্যাপক হয়। বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ে চা উৎপাদন হচ্ছে। গম, ভুট্টা , সরিষা ইত্যাদির ফলনও বেশ ভালো হয়। এ অঞ্চলে কৃষি পণ্য উৎপাদনের পিছনে মাটির গুণাগুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের মাটি বেশ উর্বর হওয়ায় ফসল ফলনের জন্য খুব ভালো কাজ করে । তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে কৃষিজ সম্পদ দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পানি সম্পদ বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদ
মানুষসহ জীবজগতে অস্তিত্বের জন্য পানির ভূমিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পানি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। কৃষি ও শিল্পের বিকাশে পানির ব্যবহার অপরিহার্য ।পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বৃষ্টি থেকে পাওয়া গেলেও গ্রীষ্মকালীন সময় পানির ঘাটতি দেখা দিলে কৃষি শিল্প ও জীবন যাপন হয়ে ওঠে সংকটপন্ন হয়ে ওঠে। এদেশে বহু নদী-নালা, খাল বিল, পুকুর হাওর ডোবা ও জলাশয় রয়েছে। পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রহ্মপুত্র ধলেশ্বরী কর্ণফুলী ও মধুমতি প্রভৃতি এদেশের বড় বড় নদী। এইসব নদীর জল ধারা বা স্রোত প্রবাহ বাংলাদেশের ভূমিকে উর্বর করে ।
১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। এটি ১৯৬৫ সালে কার্যক্রম শুরু করে।কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাবাইট। এছাড়াও ২০১১-২০১২ অর্থবছরে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ছিল .৬৫.১৫ লক্ষ হেক্টর। আধুনিক কালে পানি সম্পদকে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার জন্যে এর ব্যবস্থা পনার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নতুবা এ সম্পদের অপব্যবহার, দুষ্প্রাপ্যতা, রাসায়নিকীকরণ সহ নানা কারণে পরিবেশ বিপর্যয় এবং জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।
সৌরশক্তি বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদ
বায়ুমন্ডলের তাপ ও শক্তির প্রধান উৎস হল সূর্য। সূর্য প্রতিনিয়ত প্রচুর নিঃসরণ ত্যাগ করছে। কিন্তু খুব অল্প পরিমাণই পৃথিবীতে আসে। সূর্য থেকে আসে বায়ুমন্ডলের মোট শক্তির ৯৯.৯৭ শতাংশই । সূর্য থেকে আগত শক্তিকে বায়ুমণ্ডল তাপীয় শক্তি বা গতিশক্তি হিসেবে ধারণ করে। সূর্য থেকে বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবী যে শক্তি ক্ষুদ্র তরঙ্গ আকারে পায় তাকে সৌরশক্তি বলে। বাংলাদেশের প্রথম সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয় নরসিংদী জেলার করিমপুর ও নজরপুরে। বাংলাদেশের বৃহত্তম সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অবস্থিত।
নিরক্ষীয় নিম্ন অক্ষাংশ অঞ্চলে সূর্য বছরের প্রায় সবসময়ই লম্বভাবে কিরণ দেয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর দেশগুলো নিরক্ষীয় বা ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারণে এসব দেশ সহজে প্রচুর সৌরশক্তি পেয়ে থাকে। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে তাপমাত্রা কখনো নিম্ন পর্যায়ে নামে না। ফলের সূর্যের আলো ছাড়া অন্ধকারে বসবাস করতে হয় না। আমরা প্রকৃতি থেকে সূর্যের যে আলো অনায়াসে লাভ করি তা অনেক মূল্যবান সৌর সম্পদ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সম্পদ নিয়ে আমরা আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারি। আমাদের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ নানা ক্ষেত্রেই সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের আরো উন্নতি লাভ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব
প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে । প্রাকৃতিক জলাশয় খনিজ পদার্থ বনভূমি সৌরতাপ মৎস্য ভূমি ইত্যাদি এদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এইসব প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে দারিদ্র দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা বিধান এবং উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রাকৃতিক এসব সম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ ত্বরান্বিত করবে । বাংলাদেশের মাটি আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। অত্যন্ত উর্বর এই মাটিতে ফসল করাতে বেশি পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। মাটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমাদের কৃষিজ ফসল, ফুল, ফল, শাকসবজি সহ বনজ সম্পদের প্রসার ঘটাতে পারি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে তিনগুণ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছে ।
উন্নত প্রযুক্তি, বীজ, চাষাবাদের নিয়মকানুন মেনে বাংলাদেশ এই মাটিতে আরো বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারবে। বিভিন্ন দেশে-বিদেশি ফল ফলে মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব। শাক সবজির দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে । তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা চাপ, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বাড়ি ঘর, কল কারখানা, পুল, রাস্তাঘাট, শহর উপশহর, নির্মাণে বাংলাদেশের উর্বর ভূমি হ্রাস পাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ভূমির ব্যবহার না করা হলে জাতীয় জীবনে বিপর্যয় ঘটতে পারে । যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পানিপথের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগই আসে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে । দেশে যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে বা উঠছে তার পিছনে রয়েছে দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার। এর ফলে মানুষজন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। দেশীয় চাহিদার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে । তৈরিকৃত পণ্য দিয়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। মানুষ খাদ্যশস্য উৎপাদন, বনজ সম্পদের ব্যবহার, প্রাকৃতিক অন্যান্য সম্পদের ব্যবহারে আরো বেশি আগ্রহী ও সচেতন হচ্ছে। এভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও মানুষের নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে দেশের অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, মানুষ উন্নত জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের শেষ বক্তব্য । বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা
প্রাকৃতিক সম্পদকে একটি দেশের উন্নতি ও জাতীয় সমৃদ্ধির চাবিকাঠি বলা যায়। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। এ দেশে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তার প্রয়োজনীয় তুলনায় খুব কম নয় । কিন্তু আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। তাই দেশের উন্নতি করতে হলে এখন থেকে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। এ ব্যাপারে সরকার কেও আরো উদ্যোগী হতে হবে।
আশা করছি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আর্টিকেলটা পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে আপনার বন্ধু-বান্ধব পরিচিতদের মাঝে তথ্যগুলো শেয়ার করুন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন নতুন তথ্য পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url