বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে জানুন
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান কতটা সেটা কি আপনি জানেন ? যদি আপনি জানতে চান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে তাহলে একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের আর্টিকেলে আমি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে আপনি জানলে বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন। কারণ এই শিল্প কারখানাগুলোতে আপনি নিজেও কাজ করতে পারবেন আবার আপনার পরিচিত কেও সমস্যায় থাকলে তার সাথেও বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বাঙলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান
- বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে কিছু কথা।
- বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাস।
- বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা।
- বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প।
- বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান।
- বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়।
- বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যাসমূহ।
- বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
- বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা।
- লেখকের শেষ বক্তব্য।বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে কিছু কথা
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে শিল্পের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটে। তবে বাংলাদেশের যেসব শিল্পীর বিকাশ সাধন হয়েছে তার মধ্যে পোশাক শিল্প প্রধান। রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। কেবল রপ্তানি বাণিজ্য নয় এর সাথে জড়িত আছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। সারাবিশ্বে পোশাক খাতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে।কিন্তু বর্তমানে বিশ্বমানের এ পোশাক শিল্প আজ সংকটের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক মন্দা, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতা, জি.এস.পি সুবিধা বাতিলের ফলে বহির বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি অনেকটা হুমকির মুখে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বর্ণনা সম্পর্কে জেনে নিন।
এককালে মুসলিম আর জামদানি শাড়ির জন্য পৃথিবী খ্যাত বাংলাদেশ আবার নতুন করে যে শিল্পের জন্য তার হারানো খ্যাতি ফিরে পেয়েছে সেটি হল পোশাক শিল্প।বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প হল তৈরি পোশাক শিল্প। এখান থেকে আমাদের দেশে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পথপ্রদর্শক হলেন নুরুল কাদির। একদিকে যেমন বিশ্ববাজারে সুনাম অর্জন করেছে তেমনি অন্যদিকে বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে এক বিরাট সম্ভাবনার দার উন্মোচন করেছে। সৃষ্টি হয়েছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাস
পোশাক শিল্প বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালে পোশাক শিল্পে সরকার পাঁচ বছরের জন্য ঋণ প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সাল নাগাদ এ শিল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাশটির মতো। ফলে দিনে দিনে পোশাক শিল্পের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। ১৯৮৫-১৯৮৬ সাল নাগাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য পোশাক শিল্প গড়ে ওঠে।
গার্মেন্টস শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করতে শুরু করে মূলত আশি দশকে। ১৯৮৩ সালে যেখানে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এর সঙ্গে ছিল মাত্র ৭০০ টির মত , সেখানে আজ প্রায় ৫ হাজারটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। সময়ের ব্যবধানে কর্মসংস্থান ও প্রায় ১০ হাজার থেকে ত্রিশ লাখের অধিকে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৫% হলো নারী। বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্পী এটি যেমন সম্ভাবনাময় খাত, তেমনি নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এর অবদান অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রশাসন শিল্প যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে । কাঁচামাল সুবিধা, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে মূলত শহরকেন্দ্রিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। ফলে প্রতি বছর দ্রুত গতিতে কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। পোশাক শিল্পের কারখানা সমূহ অধিকাংশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানে অবস্থিত। বর্তমানে পোশাক কারখানা দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে। ফলে জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অনেক পরিবারের অভাব অনটন দূর করার পন্থা হিসেবে কাজ করছে এই পোশাক শিল্প। যার ফলে ওই পরিবারের ক্ষুধার কষ্ট দূরীভূত হচ্ছে এবং তারা খাবার খেতে পারছে । আবার অনেক বাচ্চাকাচ্চা স্কুল যেতে পারছে এবং পড়াশোনা করতে পারছে। পোশাক শিল্প বর্তমানে দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বৃহৎ খাত। দেশের মোট শ্রমিকের ৭৬ পোশাক শিল্পে নিয়োজিত আছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ২০টির অধিক দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫৬ %। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়াও জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও মধ্যপ্রাচ্য সহ প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা হয়। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম হলো চীন।
তারপর দ্বিতীয় স্থানটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। পোশাকশিল্পে বর্তমান প্রায় ৮৫ টি ক্যাটাগরি রয়েছে।এর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬ টি ক্যাটাগরিতে উৎপাদন করে থাকে।২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্য মানের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বেশ সুনাম রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সর্ববৃহৎ উৎস হল পোশাক শিল্প। যা নিরক্ষর, স্বল্প শিক্ষিত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশে দক্ষ দপ্তর অভাবে শিল্পায়নের গতি তেমনভাবে সঞ্চারিত হচ্ছে না। পোশাক শিল্প দেশে দক্ষতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন
যা দারিদ্র বিমোচনের সহায়তা করছে। সংসারে কলহ ও ঝগড়া বিবাদ নিরসন হচ্ছে। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে অন্যান্য শিল্পের দ্রুত শিল্পায়ন ঘটেছে। এ শিল্প কে কেন্দ্র করে স্পিনিং, উইনিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং ও প্রিন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে। তাছাড়া দেশী কাপড়ের বাজার সৃষ্টি, শিক্ষার প্রসার, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, বস্ত্র শিল্পের উন্নয়ন প্রভৃতি খেতে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়
নিচে কয়েকটি অর্থ বছরে পোশাক শিল্প থেকে অর্জিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দেখানো হলো-
সাল/অর্থবছর-----মোট রপ্তানির পরিমাণ-----পোশাক রপ্তানির পরিমাণ----------মোট রপ্তানির শতকরা হার
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যাসমূহ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও এর শিল্প নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। নিচে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা সমূহ আলোচনা করা হলোঃ
- ভবন ধসঃ এ অসংখ্য শ্রমিকের প্রাণহানি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে বিদ্যমান সমস্যা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও বেশি আলোচিত। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ ঢাকা সাভারে 'রানা প্লাজা' নামে একটি ভবন ধসে পড়ে। এ ভবনটিতে পাঁচটি পোশাক শিল্প কারখানা ছিল যেখানে তিন হাজারের অধিক শ্রমিক কাজ করতো।
- অগ্নিকাণ্ডঃ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাতে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। অগ্নিকাণ্ড এর ফলে বিপুল সংখ্যক লোক মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। তাই অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- দক্ষ শ্রমিকের অভাবঃ আমাদের দেশের পোশাকশিল্পে যে শ্রমিকরা কাজ করে তাদের অধিকাংশ স্বল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত, অদক্ষ। পোশাক আমদানি কারকেরা পোশাক তৈরীর ক্ষেত্রে রুচির উপর জোর দিতে বলেন। কিন্তু আমাদের দেশের অদক্ষ, স্বল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত শ্রমিকরা অনেক সময় সেই রুচি অনুযায়ী পোশাক তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। তাই অনেক সময় এসব পোশাক-বিদেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয় এবং আমদানিকারকেরা অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
- শ্রমিকদের নিম্ন মজুরিঃ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিক অনেক সহজলভ্য। ৮ ঘণ্টার কাজ ১২ বা তারও বেশি সময় করিয়েও তারা শ্রমিকদের নাজমজুরি দিচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দিকনির্দেশনা দেয়া হলেও মালিকরা তা মানছেন না। আবার অনেক টালবাহানার আশ্রয় নিচ্ছেন। এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটঃ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের তীব্র সংকটের কারনে পোশাক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পোশাক উৎপাদনকারী অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে অধিক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ ছাড়া গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে জেনারেটরও ব্যবহার করা যায় না। এ সমস্ত কারণে পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ কমেছে।
- রপ্তানির সীমাবদ্ধতাঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ১১৫ ধরনের পোশাকে চাহিদা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মাত্র ৩৬ ধরণের পোশাক তৈরি হয়। যেখানে হংকং ৬৫ রকমের, চীন ৯০ রকমের ও ভারত ৬০ রকমের পোশাক রপ্তানি করে।
- মূলধনের স্বল্পতাঃ বাংলাদেশের টি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে এর শিল্পায়নের প্রধান অন্তরায় মূলধনের স্বল্পতা। বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্প মূলধনের স্বল্পতার কারণে এক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। এ কারণে শিল্পের উন্নয়নের গতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
- অনুন্নত অবকাঠামো ও অব্যবস্থাপনাঃ অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশের প্রশাসক বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন। রাস্তাঘাট, কালভার্ট প্রভৃতির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এছারা রয়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বন্ধের জনিত অব্যবস্থাপনা ও কদরের অভাব। এরূপ অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
- কোটা পদ্ধতিঃ বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশ পোষা কামদানি করে তার মধ্যে আমেরিকায় এবং কানাডায় সুনির্দিষ্ট কোটার ভিত্তিতে কার গার্মেন্টস দ্রব্য রপ্তানি করতে হয়। ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির বর্ধিত ধারা দীর্ঘ মেয়াদে বজায় রাখা সম্ভব নয়।
- বাজার প্রসারের সীমাবদ্ধতাঃ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং অনুকূল সুবিধা আদায়ের তৎপরতা সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য এ শিল্পের বিদ্যমান সমস্যার আসু সমাধান প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- কাঠামোগত উন্নয়ন সাধনঃ পোশাক শিল্পকে উন্নত করতে হলে কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। প্রথমে শিল্পাঞ্চল গুলোর সাথে রেল, সড়ক ও আকাশপথে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নত করতে হবে। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে হবে।
- পশ্চাৎ শিল্পের প্রসার ঘটানোঃ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উপাদান বোতাম, কাপড়, সুতা প্রবৃত্তির প্রায় ৮৫ ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পোশাক শিল্পের সমস্যা সমাধানে এসব উপাদান প্রস্তুতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ও তার প্রসার ঘটাতে হবে।
- পোশাক শিল্পকে আয়করমুক্ত করাঃ আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে আয়কর মুক্ত রাখতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার জন্য পোশাকশিল্পে আয় সম্পন্ন ভাবে করমুক্ত করা প্রয়োজন।
- গুনাগুনের উৎকর্ষ সাধনঃ বর্তমান সময়ে হংকং, কোরিয়া, তাইওয়ান, ইত্যাদি দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পোশাকের গুন ও মান সম্পর্কে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এমনকি শ্রীলঙ্কাও এরূপ মানসম্মত পণ্যের বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ। এসব দেশের সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাজার টিকে থাকবে পোশাকের মান ও গুনাগুনের উপর।
- শ্রমিক জীবনে নিরাপত্তাঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সর্বপ্রথম দিতে হবে শ্রমিক জীবনে নিরাপত্তার উপর। ত্রুটিপূর্ণ ভবন, রাজউকের অনুমোদন বিহীন ভবনে পোশাক কারখানা স্থাপন করা যাবে না। পোশাক কারখানাগুলোতে জরুরি বহিঃ গমনের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি, যা আমাদের দেশের বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় নেই।
- শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানঃ সরকারি নীতিমালা অনুসরণে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করতে হবে। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পেলে বিক্ষোভ, আন্দোলন, ভাঙচুর প্রভৃতি সমস্যা অনেকাংশে দূরীভূত হবে।
- পোশাকে শ্রেণী বৃদ্ধি করাঃ বিশ্ববাজারে ১১৫ রকম পোশাকে চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ কেবল ৩৬ ধরনের পোশাক তৈরি করতে সক্ষম। পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী পোশাকে শ্রেণী বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।
- শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করাঃ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
- অ্যাপারেল বোর্ড গঠনঃ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বর্তমান বস্ত্র সেল পোশাক শিল্প খাতের জন্য যথেষ্ট নয়। পোশাক সম্প্রসারণের সাথে সাথে প্রয়োজন অ্যাপারেল বোর্ড গঠন করা।
- বিদেশে লবিস্ট নিয়োগঃ বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করলে তারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পোশাকের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে পারবে।
- বিকল্প দেশ অনুসন্ধানঃ চীনের পোশাক শিল্পের বৃহৎ বাজার কেবল আমেরিকা ও কানাডাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা তাদের পণ্য সারা বিশ্বের রপ্তানি করছে। অথচ আমাদের পণ্য শুধু আমেরিকা এফ ই সি এবং কানাডাতে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে প্রয়োজন নতুন বাজার অনুসন্ধান, বিকল্প দেশের সাথে চুক্তি সম্পাদন প্রভৃতি।
- অত্যাধুনিক মেশিনারিঃ পোশাক শিল্পের বিকাশ, দ্রুত অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখা এবং সাফল্যমন্ডিত করার জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বা যন্ত্রাংশ এবং দেশে উৎপাদিত আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি।
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধনঃ একটি দেশের শিল্প উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হলো সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দল কর্তৃক সৃষ্ট হরতাল ধর্মঘট অবরোধ প্রভৃতির কারণে রপ্তানি মুখী তৈরি পোশাক শিল্প খাতে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এ সমস্যার সমাধান করার জন্য সকল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুক্ত রাখতে হবে।
- টেক্সটাইল পল্লী প্রতিষ্ঠাঃ সুতা, বস্ত্র, পোশাক প্রভৃতি দ্রব্য যত কম নাড়াচাড়া করা হবে পোশাক শিল্পের বা ই তত কম হবে। এ সমস্যার সমাধানে টেক্সটাইল পল্লী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায়। কারণ বাংলাদেশের পর্যাপ্ত অল্প পারিশ্রমিকে শ্রমিকের যোগান বিদ্যমান। তাছাড়া পোশাক শিল্পে সস্তায় নারী শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ দেশের শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলক কম। যা স্বল্পমূল্যে অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করে। এছাড়াও স্বল্প মূলধনে শিল্প স্থাপন, অধিক বিনিয়োগ প্রবণতা, উদার শিল্পনীতি প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সম্ভাবনাকে আরো বেশি জোরালো করেছে।
লেখকের শেষ বক্তব্য।বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান।
বর্তমান বিশ্বমুক্ত বাজার অর্থনীতির বিশ্ব। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। উদ্ভূত সমস্যা সহ কোটা ও জিএসপি মুক্ত বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই পোশাক শিল্পের অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলে মিলে একসাথে কাজ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু সেতু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন।
আশা করছি পুরো পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়েছেন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি ধারনা পেয়েছেন। আজকের কনটেন্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিত ও স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আর এইরকম সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url