বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন
বঙ্গবন্ধু সেতু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিনবাংলাদেশ পর্যটন শিল্প এমন একটি বিষয় যা দেশে এবং দেশের বাইরে যারা অবস্থান করছেন তারাও বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই । আপনিও নিশ্চয়ই বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আপনার জানার সুবিধার্থে আজকে আমরা বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আলোচনা করব । চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য আপনাকে জানতে হবে, যাতে আপনি দেশে-বিদেশে বসবাসকারি আপনার আত্মীয় বা পরিচিতদের সাথে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করতে পারেন। আজকের কনটেন্টটি আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়েন তাহলে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন
- বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে কিছু কথা ।
- পর্যটন বলতে কি বুঝায় বা পর্যটন কি।
- পর্যটনের সূচনা বা পর্যটন কখন শুরু হয়েছিল ।
- আধুনিক বিশ্বে পর্যটন শিল্প ।
- পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব আলোচনা ।
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন স্থান ।
- বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সীমাবদ্ধতা ।
- পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ প্রসঙ্গ ।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে করণীয় ।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কৌশলগত পরিকল্পনা ।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত ।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান ।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব ।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা ।
- পর্যটন ও বর্তমান বিশ্ব অবস্থা ।
- বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা ।
- আমাদের শেষ বক্তব্য।বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প ।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে কিছু কথা
পৃথিবীব্যাপী জ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ভ্রমণ করে দেশ থেকে দেশান্তরে । কারণ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে আমরা শুধু মানসিক শান্তি পাই তা নয় আমরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এমনকি অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারি, যা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়, বুঝতে চায়, জয় করতে চায় অনেক অজানাকে । তাই তো দেখি হিমালয়, চাঁদের মতো দুর্গম স্থানকে মানুষ দেখেছে, জয় করেছে।
পুরা তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে উপহার দিয়েছেন নতুন পৃথিবী। যাতে নতুন প্রজন্ম তাদের অতীত সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতো, পুরাকৃতির মত বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্থান , অসংখ্য পরিবেশ , অসীম সৌন্দর্যের সমাহার । এমন মনমুগ্ধকর পরিবেশ যা মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্থান। পর্যটকদের জন্য উপযোগী প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশ আকর্ষণ করছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ।
পর্যটন বলতে কি বুঝায় বা পর্যটন কি
পর্যটন হচ্ছে চিত্ত বিনোদন বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ। পর্যটনের সঙ্গে মানব মনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা, কৌতূহল প্রিয়তা, প্রকৃতি প্রেম প্রভৃতি জড়িত। উপার্জনের লক্ষ্য এবং স্থায়ীভাবে বসতি করার উদ্দেশ্য ছাড়াও কোথাও ভ্রমণ এবং সেখান থেকে যাওয়ার মায়া ও সম্পর্কে বাঁধন থেকে বেরিয়ে আসার সমষ্টিই হচ্ছে পর্যটন। শিক্ষা, তথ্যানুসন্ধান, ভ্রমণ কিংবা অন্য কোন কারণে কোন স্থানে অস্থায়ীভাবে গমনকে পর্যটন বলে । পর্যটন মানসিক শান্তির একটি অন্যতম কারণও হতে পারে। আবার সেই সাথে আনন্দের সহিত জ্ঞান অর্জন করা যায় এই পর্যটনের মাধ্যমে ।
পর্যটনের সূচনা বা পর্যটন কখন শুরু হয়েছিল
ত্রয়োদশ শতকে মার্কো পোলার ভ্রমণকাহিনী, অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ অভিজাত শ্রেণীর ইউরোপে গ্র্যান্ড ট্যুর, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ডেভিড লিভিং স্টোনের আমেরিকার সফর পর্যটনের সাক্ষ্য বহন করে। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০২ অব্দে গ্রিক ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিস ভারতবর্ষে আগমন করে মূল্যবান নানা তথ্য লিপিবদ্ধ করেন ।
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে প্রখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলা ভূখণ্ড পরিভ্রমণ করে মন্তব্য করেন যে, 'এ স্লিপিং বিউটি ইমার্জিং ফ্রম মিস্টস এন্ড ওয়াটার'।চতুর্দশ শতকে সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমলে মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা সোনারগাঁ ভ্রমণ করেন। ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের রাজত্বকালে চীনা পরিব্রাজক মা হুয়ান বাংলা ভূখণ্ডে আগমণ করেন।
আধুনিক বিশ্বে পর্যটন শিল্প
আধুনিক বিশ্বে পর্যটনকে অন্যতম বৃহৎ শিল্প হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর ৯০ লাখ পর্যটক তৈরি হচ্ছে বিশ্বে। তার মানে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পর্যটক বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিবছর। ক্রমবর্ধমান বিদেশি পর্যটকদের কারণেই বিশ্বে এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও নেপাল পর্যটন শিল্প দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের জন্যও একটি বৃহৎ শিল্প হিসেবে অবদান রাখতে পারে, সেটাকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায়। পর্যটনকে একটি শিল্প হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয় 'বিশ্ব পর্যটন দিবস'।
পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব আলোচনা
একটি দেশের জন্য পর্যটন শিল্প অনেক গুরুত্ব বহন করে। পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব এতো বেশি যে, বলে শেষ করা যাবে না। চলুন তাহলে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করি। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ জ্ঞানপিপাসু।জানার ইচ্ছা বা আগ্রহ মানুষকে সব সময় আকৃষ্ট করে। পর্যটনের মাধ্যমে মানুষ খুঁজে নেয় তার শিকড়। মানুষ ও তার কীর্তি সম্পর্কে এবং প্রকৃতি ও তার মহিমার অজানা রহস্য পর্যটনের মাধ্যমেই জানা যায়। পর্যটন আমাদের জ্ঞানের আলো বৃদ্ধি করতে ব্যাপক সাহায্য করে। পর্যটনের মাধ্যমেই আপনি আপনার জানার আকুলতাকে পরিতৃপ্ত করতে পারেন।
আদিবাসীদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম পর্যটনের মাধ্যমে জানতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, স্থান, সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি, আকৃতি-প্রকৃতি, প্রাচীন তত্ত্বের নিদর্শন, পশুপাখি প্রভৃতি সম্পর্কে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমেই জানা যায়। কোন দেশের বা জায়গার খাবার, ভাষা, আচার-অনুষ্ঠান সভ্যতা-সংস্কৃতি, চিন্তাধারা প্রভুতি সম্পর্কে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমেই জানা যায়। অতএব দেখা যায় যে, পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন স্থান
ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ছাড়াও সবুজ, শ্যামল, স্নিগ্ধ প্রকৃতি মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে। এসব সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকালে যেন মন প্রাণ দুটোই জুড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মন মুগ্ধকর স্থান। বাংলাদেশ পাকৃতিক সৌন্দর্যেও ভরপুর যার ফলে বাংলাদেশে রয়েছে অনেক পর্যটন স্থান। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- পাহাড়পুর
- রাঙামাটি
- সাগরদিঘি
- ময়নামতি
- কুয়াকাটা
- জাফলং
- বিছানাকান্দি
- পাথরঘাটা
- সোনারগাঁ
- বান্দরবান
- খাগড়াছড়ি
- সুন্দরবন
- পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার
এছাড়াও বাংলাদেশে আরো অসংখ্য পর্যটনের স্থান রয়েছে যা ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। বাংলাদেশের একদিকে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় অন্যদিকে বিশাল জলরাশি, যা সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। আরো রয়েছে সিলেটের চা বাগান, সবুজে ঘেরা চারিদিক যেন এক মনোরম পরিবেশ, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। খোদ রাজধানীতে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস-আশ্রিত ঐতিহ্যময় স্থান এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ স্থান। বাংলাদেশে অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের অত্যন্ত মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করবে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সীমাবদ্ধতা
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। বাংলাদেশের ১৯৯১ সালে পর্যটন নীতিমালায় পর্যটনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরও সম্ভাবনাময় এই খাতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গিয়েছে। সীমাবদ্ধতাগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- অবকাঠামোগত সমস্যা।
- সঠিক প্রচারের অভাব।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা।
- উন্নত সেবা ও তথ্যের অভাব।
এসকল সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য সরকারি খাত এবং বেসরকারি খাত সবাইকে একসাথে সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই পর্যটন শিল্প বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই পর্যটন শিল্পকে ঐশ্বর্যশালী করার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ প্রসঙ্গ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বড়ো ধরণের পরিবর্তন আনতে পারে। এজন্য সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি কাটাতে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া ছাড়াও বিপণন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বড়ো ধরণের সহায়তা করতে পারে। তবে এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে করণীয়
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান পর্যটন শিল্প প্রসারের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। তাই আমরা যদি দেশে পর্যটন শিল্পের উন্নতি চাই, তাহলে শিগগিরই আমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যা পর্যটন শিল্প উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য আমাদের অনতিবিলম্বে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত সেসব পদক্ষেপগুলো নিচে উপস্থাপন করা হলোঃ
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কৌশলগত পরিকল্পনা।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
- পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব।
- পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা।
যেসকল পদক্ষেপগুলো যা পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সাধনে সহায়তা করবে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা করবো আপনাদের সাথে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কিভাবে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কৌশলগত পরিকল্পনা
কিছু কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পে ব্যপক উন্নয়ন সম্ভবপর হবে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নকল্পে কোন বিলম্ব ছাড়াই আমাদের এ পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করা উচিত। আমরা যত দ্রুত ও ভালোভাবে এ পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়ন করতে পারব ততই দ্রুত পর্যটন শিল্পে বিস্তর উন্নয়ন সাধিত হবে। পর্যটন শিল্পে সাফল্য আমাদের অর্জন করতে হলে অনেকগুলো বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। এ সকল বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপঃ
- দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানো।
- যেসব দেশ থেকে পর্যটক আনতে চাই, সেসব দেশে বাংলাদেশের পর্যটন পণ্যগুলোর প্রচার ও বিপণন।
- এইসব দেশের লেখক, পর্যটনব্যবসায়ী সহ নানা মানুষকে কোন খরচ ছাড়াই বাংলাদেশের বেড়াতে আসার আমন্ত্রণ জানানো।
- বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো যেন সেসব দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- ঐসব দেশের পর্যটকদের জন্য বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ভিসা প্রক্রিয়া সংস্কার।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অবশ্যই অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এর মধ্যে যে বিষয়গুলো থাকতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- বিভিন্ন এলাকায় আবাসন সুবিধা বাড়ানো।
- দেশের ভিতরে যাতায়াত সুবিধার আধুনিকায়ন।
- বেসরকারি পর্যায়ে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন পেশাজীবী তৈরি করা।
- বিভিন্ন ভাষার গাইড তৈরি করা।
- ভালো মানের রেস্তোরা তৈরি করা ।
- পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ।
- আধুনিক ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান
বাংলাদেশে ইতোপূর্বে পর্যটকদের জন্য কোন নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসতো শুধ প্রকৃতি অবলোকনের জন্য। সম্প্রতি সরকার পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ ও সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যাতে পর্যটকরা কোনো প্রকার কষ্ট বা ঝামেলা ছাড়ায় স্বস্তির সাথে দেশের বিভিন্ন স্থান পর্যটন করতে পারে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন শিল্প কেন্দ্রে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল। বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলের চেয়েও অত্যন্ত কম মূল্যে সিট রিজার্ভেশন এর সুবিধা। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে 'বাংলাদেশ পর্যটনশিল্প কর্পোরেশন'। পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করায় এই কর্পোরশনের প্রাথমিক কাজ।
পর্যটনকে একটি শক্তিশালী আকর্ষণের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যে বিষয়টিকে প্রথমে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তা হলো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।বিশ্বের নানা দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের দেশের দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোকে পরিচিত করে তুলতে হবে যে বিশ্ববাসীর কাছে। বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা করতে হবে নিশ্চিত। দর্শনীয় ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হবে। আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে হবে। এ সমস্ত অসুবিধা দূর হলে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাবে এবং সুগম হবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পথ।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দুর্লভ এবং মনোরম স্থান। এসব সৌন্দর্যে ভরপুর ও ইতিহাস সম্বলিত স্থানগুলোকে সংরক্ষণের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। পর্যটকদের জন্য ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও সুলভ করতে হবে। তাহলেই পর্যটন স্থানগুলো পর্যটন শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করবে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। তাই পর্যটন কর্পোরেশনের উপর অর্পিত দায়িত্ব তাদের যথাযথ পালন করা উচিৎ।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা
অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বে পর্যটন সংক্রান্ত ব্যবসায়ী কর্মকান্ড গতিশীলতা অর্জন করেছে এবং এসির বুকে কাজে লাগিয়ে অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করার সুযোগ পেয়েছে। কারণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে যে কোন দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সম্ভব । তাই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের কথা দেশগুলোকে অনেক জটিল ভাবে ভাবা উচিত।
বাংলাদেশেও এ লক্ষ্য এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে বেপর্যটনকে শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর প্রণীত জাতীয় শিল্পনীতিতে অগ্রাধিকার শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১৯৯২ সালে প্রণীত জাতীয় পর্যটন নীতিমালা হালনাগাদ করনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনা দিন রয়েছে। এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য সরকার শীঘ্রই একটি পর্যটন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ।
পর্যটন ও বর্তমান বিশ্ব অবস্থা
বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যটন শিল্পের অবদান অনন্য। ১৯৫০ সালে পর্যটন শিল্প থেকে বিশ্বের আয়ের পরিমাণ ছিল ২১০ কোটি মার্কিন ডলার, ১৯৯৭ সালে এসে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার কোটি ৫০ লাখ ডলারে। আর বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলর তথ্যানুযায়ী ২০১৯ পর্যটন শিল্প বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখে, যা বিশ্ব জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে বিশ্বে পর্যটক সংখ্যা ছিল ১৫৬ কোটি।
অবশ্য করোনাভাইরাস জনিত নিষে থাকার কারণে ২০২০ সালে বিশ্ব পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। অন্যদিকে পর্যটন একটি শ্রম বহুল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি অন্যতম খাত। বর্তমান পৃথিবীর ১০টি কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি কর্মসংস্থান তৈরি হয় পর্যটন খাতে । বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে ৩৩ কোটি লোক পর্যটন শিল্পে কাজ করে। প্রতিবছর মোট কর্মসংস্থানের ৯.৯ শতাংশ তৈরি হয় পর্যটনখাতে। পর্যটন খাতে বিনিয়োগ ও বছর বছর বাড়ছে দ্রুত হারে ।
বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বর্তমানে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ১০ টি পর্যটন বাজারের একটি ধরা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিবছর প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ করে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের আয় ৭৮ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা তথ্যানুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ ৫১ টি দেশের পর্যটকেরা বাংলাদেশ ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশের কর্মসংস্থানে পর্যটন খাতের অবদান হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
আমাদের শেষ বক্তব্য
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই শিল্পের অগ্রগতির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের পর্যটন কর্পোরেশন, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি জনসাধারণ একটু সচেতন হলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হবেই । তাই আমাদের বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে জানতে হবে এবং বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।
আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। আপনাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের তথ্যগুলো বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করেছি । আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং তাদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। আর এই পোস্টটির বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন আর ভুল ত্রুটি হলেও সেটা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এরকম প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়মিত পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি রেগুলার ভিজিট করুন। আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url