পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ - নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজনৈতিক বিপর্যয়পলাশী যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার আগ্রহ যদি আপনার থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক ভালো প্রশ্ন হবে । কারণ পলাশীর যুদ্ধ ইতিহাসে অনেক বড় শিক্ষামূলক উদাহরণ হিসেবে বেশ আলোচিত। আজকের আর্টিকেলে পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নিচে পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। যারা বাংলার নবাবদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি জানা অত্যন্ত জরুরি। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে কিছু কথা।
- আলিবর্দি খান সিরাজউদ্দৌলার কে ছিলেন।
- ফরাসিদের বাংলা নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সমর্থন।
- পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা।
- পলাশীর যুদ্ধের কারণ আলোচনা।
- ইতিহাসের 'আলীনগর সন্ধি' সম্পর্কে আলোচনা।
- নবাবের ফরাসিদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন।
- পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা আলোচনা।
- নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ বিশ্লেষণ ।
- পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা ।
- লেখকের শেষ বক্তব্য।পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে কিছু কথা
আলি বরদি খান তার কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। আলিপুরদির প্রথম কন্যা ঘসিটি বেগমের ইচ্ছে ছিল তা দ্বিতীয় ভগ্নির পুত্র শওকত জঙ্গ নবাব হবেন। ফলে তিনি সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। কয়েকজন অভিজাতের সমর্থন লাভ করেন ঘষেটি বেগম। তাদের মধ্যে রায়দুর্লভ, জগতশেঠ , মীরজাফর, উর্মি চাঁদ, রাজবলভ প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রীর নাম কি
প্রাসাদের ভেতরের এ ষড়যন্ত্রকে কাজে লাগাই বাংলায় বাণিজ্য করতে আসা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চতুর ইংরেজ বণিকরা। ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে তারা হাত মিলায়। অবশেষে, ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ বাঁধে নবাবের। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাবের সেনাপতি মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে যুদ্ধে অংশগ্রহণে বিরত থাকেন। অসহায় ভাবে পরাজয় ঘটে নবাব সিরাজউদ্দৌলার। এভাবে পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজি শাসনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। আর একই সাথে বাংলার মধ্যে যুগের অবসান ঘটে।
আলিবর্দি খান সিরাজউদ্দৌলার কে ছিলেন
আলীবর্দী খান ছিলেন বাংলার শেষ নবাব নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানা। মুঘল সম্রাটের অনুমোদনে নয়, বরং বাহুবলে বাংলার ক্ষমতা দখল করেন আলীবর্দী খান। আলীবর্দির খানের শাসনকালে (১৭৪০- ১৭৫৬ সাল) বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকদিন ধরে বর্গী নামে পরিচিত মারাঠি দস্যুরা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করে জনজীবন অনিষ্ট করে তুলেছিল।
আলীবর্দী খান ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত ১০ বছর প্রতিরোধ করে বর্গীদের দেশ ছাড়া করতে সক্ষম হন। তার শাসনকালে আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ করলে তিনি শক্ত হাতে তা দমন করেন। আলীবর্দির সময়ে ইংরেজসহ অনেক ইউরোপীয় বণিকের বাণিজ্যিক তৎপরতা বাংলার বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে পড়ে। একই সাথে তারা সামরিক শক্তি ও সঞ্চয় করতে থাকে। আলীবর্দী খান শক্ত হাতে বণিকদের তৎপরতা রোধ করেন।
ফরাসিদের বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সমর্থন
১৯৭৪ সালের পর থেকে ইংরেজরা বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাংলায় সম্প্রসারিত করে। কোম্পানি বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানের কাছ থেকে গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত চন্দননগর নামক স্থানটি কিনে নেয়।১৬৯০ সাল থেকে ১৬৯২ সালের মধ্যে চন্দননগর একটি শক্তিশালী সুরক্ষিত বাণিজ্য কুঠিতে পরিণত হয়। ১৬৯৬ সালে কোম্পানি এখানে একটি শক্তিশালী দুর্বি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। নির্দিষ্ট হারে শুল্ক প্রদানের শর্তে .১৬৯৩ সালে ফরাসিরা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে। পরবর্তীকালে তারা কাশিমবাজার বালাসোরে কুঠি স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
ইংরেজ বণিকরা যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে দৃঢ় অবস্থানে, তখন ফরাসিরা এই দেশে আসে। এ অবস্থায় ইংরেজদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির মতো ফরাসিরা এদেশে সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখতে থাকে। ফলে ২ ইউরোপীয় শক্তি ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
ইংরেজদের ষড়যন্ত্র, কুটকৌশল, উন্নত রণকৌশলের কাছে ফরাসিরা পরাজিত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফরাসিরা বাংলার নবাবকে সমর্থন দেয়। কিন্তু এই যুদ্ধে ইংরেজদের সাফল্য ফরাসিদের আরো বিপর্যয় করে ফেলে। ফলে বাংলার ফরাসি বাণিজ্য কুঠিগুলো ইংরেজদের দখলে চলে যায়। দক্ষিণাত্যের কর্ণাটকের যুদ্ধ সমূহে ফরাসি কোম্পানি পরাজিত হলে তারা এ দেশ ত্যাগ করে। ফলে ইংরেজরা ভারতবর্ষে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিতে পরিণত হয়।
পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা
১৭৪০ থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত আলীবর্দী খান বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব ছিলেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি সফলতার সহিত রাজ্য শাসন করতে সক্ষম হয়েছেন। মারাঠা ও বর্গীদের দমিয়ে রাখতে তার সময়ে তিনি সক্ষম হন। সুকৌশলে ইংরেজ বণিক কোম্পানিকেও নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বাংলা রাজনীতিতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
নবাব মৃত্যুর আগে তার কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলা সিংহাসনের উত্তরাধিকার মনোনীত করে যান। ১৭৫৬ সালে আলিবরদী খানের মৃত্যু হলে তার প্রিয় দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ২২ বছর বয়সে নবাবের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সিংহাসনে বসার পর থেকে তাকে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। তার প্রথম সমস্যা ছিল পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে আলীবর্দী খানের তিন কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ কন্যা ঘসেটি বেগম সিরাজউদ্দৌলা নবাব হাওয়াই আশাহত হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এদের সঙ্গে যোগ দিন ঘসেটি বেগমের দেওয়ান রাজা রাজবলভ,পূর্নিয়ার শাসনকর্তা সিরাজের খালাতো ভাই শওকত জঙ্গ এবং অন্যান্যরা।
কৌশলে নবাব ঘষেটি বেগমকে নজর বন্দী করেন। যখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙ্গ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন তখন নবাব সিরাজউদ্দৌলা এক যুদ্ধে তাকে পরাজিত করেন। শুধু তাই নয় শওকত জঙ্গ কে নবাব সিরাজউদ্দৌলার যুদ্ধে পরাজিত করার পর নিহত করেন এবং পূর্ণিয়া দখল করে নিতে সমর্থ হন। নবাব পারিবারিক ষড়যন্ত্র কৌশলে দমন করলেও তার বিরুদ্ধে বাইরে ষড়যন্ত্রের আরেক জাল বিস্তৃত হতে থাকে । এর সঙ্গে জড়িত হয় দেশি-বিদেশি বণিক শ্রেণী, নবাবের দরবারে প্রভাবশালী রাজন্যবর্গ ও অভিজাত শ্রেণী, নবাবের সেনাপতি মীরজাফর সহ আরো অনেকে। প্রত্যেকের যার যার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করতে থাকে।
পলাশীর যুদ্ধের কারণ আলোচনা
ইতিহাসের যেসব ঘটনা একটি দেশের জনগণের ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে, পলাশীর যুদ্ধ এর অঞ্চলের জনগণের জন্য তেমনি এক ঘটনা ছিল। এই ঘটনার পেছনের কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- সিরাজউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসার পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ইংরেজরা নতুন নবাব কে কোন উপঢৌকন পাঠায়নি এবং তার সঙ্গে কোন সৌজন্যমূলক সাক্ষ্যত করেনি। ইংরেজদের এই অসৌজন্য মুলক আচরণে নবাব ক্ষুব্ধ হন।
- নবাবের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইংরেজরা কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ অব্যাহত রাখে।
- ইংরেজ কোম্পানি দস্তকের অপব্যবহার করলে দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন। নবাব দস্তক এর অপব্যবহার করতে নিষেধ করেন এবং বাণিজ্যিক শর্ত মেনে চলার আদেশ দেন। কোম্পানি নবাবের সেই আদেশও অগ্রাহ্য করে। এতে নবাব ক্ষুধ্য হন।
- আলীবর্দী খানের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ইংরেজরা নবাবকে কর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাছাড়া জনগণকে নির্যাতন করার মতো ধৃষ্টতাও তারা দেখাতে থাকে।
- রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস তার পরিবারের সদস্যদের সহ প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে কলকাতা ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেন। তাকে ফেরত দেয়ার জন্য নবাব ইংরেজদের নিকট দূত পাঠান। ইংরেজ গভর্নর নবাবের দূতকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। এর পাশে সরকার জংগের বিদ্রোহের সময়ও ইংরেজের নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়।
ইতিহাসের 'আলীনগর সন্ধি' সম্পর্কে আলোচনা
ইংরেজদের একের পর এক ঔদ্ধত্যপূর্ণর আচরণ ও অবাধ্যতা নবাবকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে। ১৭৫৬ সালের জুন মাসের শুরুর দিকে ইংরেজদের যথোপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা দখল করেন। যাত্রাপথে তিনি কাশেম রাজার কুঠিও দখল করেন। নবাবের অতর্কিত আক্রমণে ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। হল ওয়েল সহ বেশ কিছু ইংরেজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে নবাবকে হেয় করার জন্য হলওয়েল এক মিথ্যা প্রচারণা চালায় যা ইতিহাসে 'অন্ধকূপ হত্যা' নামে পরিচিত।
এতে বলা হয় যে, ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ১৪.১০ ফুট প্রস্থ ছোট একটি ঘরে ১৪৬ জন ইংরেজকে বন্দী করে রাখা হয়।এতে প্রচন্ড গরমে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু হয়।এই মিথ্যা প্রচার মাদ্রাজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে উত্তেজিত হয়ে কলকাতা দখল করার জন্য ওয়াটসন ও ক্লাইভ মাদ্রাস থেকে কলকাতায় চলে আসে। তারা নবাবের সেনাপতি মানিক চাঁদ কে পরাজিত করে কলকাতা দখল করে নেয়। নবাব তার চারিদিকে ষড়যন্ত্র ও শত্রু বেষ্টিত হয়ে ইংরেজদের সঙ্গে নতজানু অপমানজনক সন্ধি বা করতে বাধ্য হন। এটি ইতিহাসে 'আলীনগর সন্ধি' নামে খ্যাত।
নবাবের ফরাসিদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন
আলিনগর সংগীতের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পর ক্লাইভ এর উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরো বৃদ্ধি পায়। নবাবের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা একটি অজুহাত দেখায় যে ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং এই মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ফরাসিদের চন্দনগর কুঠি দখল করে নেন। নবাব এ অবস্থায় ফরাসিদের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে ইংরেজদের শায়েস্তা করার ব্যবস্থা নেন। এতে ক্লাইভ ক্ষুব্ধ হয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই ষড়যন্ত্রে ক্লাইভ এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যবসায়ী ধনকুবের জগতশেঠ, রায়দুর্লভ, উর্মিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভ, প্রধান সেনাপতি মীরজাফর প্রমুখ।
পলাশীর যুদ্ধের ঘটনা আলোচনা
পলাশীর যুদ্ধ বাংলা তথা এই উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। এই যুদ্ধ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে সংঘটিত হয়। ইতোমধ্যে রবার্ট ক্লাইভ তার অবস্থান সুদৃঢ় করে সন্ধি ভঙ্গের অজুহাতে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নবাবের পক্ষে এ দেশপ্রেমিক মীরমদন, মোহন লাল এবং ফরাসি সেনাপতি সিন ফ্রে প্রাণপণ যুদ্ধ করেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন।
যুদ্ধে মীরমদন নিহত হন। নবাবের বিজয় আসন্ন জেনে মীরজাফর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। মীর মদনের মৃত্যু ও মীরজাফরের অসহযোগিতা নবাবকে বিচলিত করে। নবাবের সেনাপতি মীরজাফর যুদ্ধক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অসহযোগিতা করে নিরব দর্শকের ভূমিকা ছিল। নবাব কুরআন স্পর্শ করিয়েও শপথ নেয়ালেও মীরজাফরের ষড়যন্ত্র থামেনি। নবাবের সৈন্যরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছে, সে সময় মীরজাফরের ইঙ্গিতে ইংরেজ সৈন্যরা তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। যার অনিবার্য পরিণতি নবাবের পরাজয়।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ বিশ্লেষণ
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন হয়েছিল তার নিজের লোকদের ষড়যন্ত্রের কারণে। সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ নিচে তুলে ধরা হলো -
- নবাবের সেনাপতি মীরজাফর ও তার সহযোগীদের যুদ্ধক্ষেত্রে অসহযোগিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা।
- নবাবের সেনাপতি থেকে সভাসদ অধিকাংশ দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে, ব্যক্তি স্বার্থকে বড় করে দেখেছে।
- তরুণ নবাবের অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার অভাব ছিল। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
- সেনাপতি মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের কথা জানা সত্ত্বেও তিনি বার বার তার উপরই নির্ভর করেছেন।
- ইংরেজদের সম্পর্কে সতর্কতা, ফরাসি এবং ইংরেজদের ষড়যন্ত্র -এসব বিষয়ে আলীবর্দি খানের উপদেশ সিরাজউদ্দৌলার কাছে গুরুত্ব পায়নি।
- নবাবের শত্রুপক্ষ ছিল ঐক্যবদ্ধ ও রণকৌশলে উন্নত।
- রবার্ট ক্লাইভ ছিল দূরদর্শী, সূক্ষ্ম ও কূট বুদ্ধি সম্পন্ন।
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক, দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। নিম্নে এই যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো -
- নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যু বাংলা মুসলিম শাসনের অবসান ঘটায় এবং ঔপনিবেশিক শাসনের পথ সুগম করে।
- যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা মীরজাফর কে বাংলার সিংহাসনে বসালেও তিনি ছিলেন নাম এইমাত্র নবাব, প্রকৃত ক্ষমতা ছিল রবার্ট ক্লাইভের হাতে।
- পলাশীর যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা বাংলায় একচেটিয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। ফরাসিরা এ দেশ থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়।
- এ যুদ্ধের পর ইংরেজ শক্তির স্বার্থে এদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন হতে থাকে।
- পলাশীর যুদ্ধের সুদূর প্রসারী পরিণতি ছিল উপমহাদেশে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা। এভাবেই এ যুদ্ধের ফলে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা লুন্ঠিত হয়।
- সুতরাং পলাশীর যুদ্ধ একটি খন্ড যুদ্ধ হলেও বাংলা তথা তথা উপমহাদেশে রাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখকের শেষ বক্তব্য। পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে
পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা অনেক বেদনাদায়ক একটি আলোচনা। বাংলার শেষ নবাব ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তিনি তার নানা আলি বর্দি খানের অনেক প্রিয় নাতি ছিলেন। তাকে খুব অল্প বয়সেই সিংহাসনে বসানো হয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্যে দিয়ে বাংলায় নবাবদের শাসন আমল শেষ হয়ে যায়। নবাবের বিশ্বাসী সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা ও তাঁর পরিবারের লোকজনের ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি পরাজিত হন ইংরেজদের কাছে। ইংরেজ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার মাঝে পলাশের ময়দানে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেটাই ইতিহাসের পাতায় পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় এবং মৃত্যু দুটোই অত্যন্ত মর্মাহত ও কষ্টদায়ক বিষয়।
আজকের আর্টিকেলে পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যতটুক পেরেছি আপনাদের জন্য পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। আশা করছি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি আপনি ভালোভাবে পড়েছেন। আর পড়ে আপনার নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্বজনদের ও পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। আর আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন। এরকম আরো ভালো ভালো লেখা পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url