নাটোর জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার নাম জেনে নিনবাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে জানা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি । বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ । আপনি যদি বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নিন তাহলে আপনি বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন ।
বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ দেশের গৌরব। বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের সুনাগরিক হিসেবে আপনার বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন । চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের বিশ্বাস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন।
যুদ্ধের সূচনা হয় যেভাবে
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা । মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা লাভ করেছি আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ । ১৯৪৭ সালের বৃটিশরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সৃষ্টি হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র-একটি ভারত এবং অন্যটি পাকিস্তান । পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান । পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের উপর শুরু করে অত্যাচার ও নিপীড়ন । বাঙালিরাও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন । এরকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ঘটনা আপনাদের জানানোর জন্য নিচে দেয়া হলো-
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ।
- ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন
- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান
- ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় ।
- ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ এ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় গণহত্যা ও বাঙ্গালীদের প্রতিরোধ ।
- ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু ।
মুজিবনগর সরকার গঠন
বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি । আর মুজিবনগর সরকার গঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সম্ভাবনাকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে ।মুক্তিযুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার , যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত । তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথ তলায়(বর্তমান নাম মুজিবনগর) আমবাগানে ১৭ ই এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় ।
তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার কারণে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন । এ সরকার অন্যতম সদস্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ , ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী(অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী) ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী) । মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার সফলতা লাভ করে । মুজিবনগর সরকার গঠনের মুক্তিযুদ্ধের গতি বৃদ্ধি পায় । এ সরকারের নেতৃত্বে সকল শ্রেণীর বাঙালি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেন ।
মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনী গঠন
১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুক্তিবাহিনী নামে একটি বাহিনী গঠন করা হয় । এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল মোঃ আতাউল গনি ওসমানী । উপপ্রধান সেনাপতি ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার । মুক্তি বাহিনীকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করা হয়েছিল । এই তিনটি ব্রিগেড ফোর্স এর নাম দেয়া হলো ঃ
- মেজর খালেদ মোশারফ এর নেতৃত্বে 'কে' ফোর্স
- মেজর কে এম সফিউল নেতৃত্বে 'এস' ফোর্স
- মেজাজ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে 'জেড' ফোর্স
আবার যুদ্ধ প্রয়োজন ও সুবিধার জন্য সারা দেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল । ১১টি সেক্টরের নাম নিচে দেয়া হলঃ
- সেক্টর ১ঃ চট্টগ্রাম , পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার অংশ বিশেষ ।
- সেক্টর ২ঃ কুমিল্লা ও ফরিদপুর জেলা এবং ঢাকা ও নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ ।
- সেক্টর ৩ঃ মৌলভীবাজার , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ,নারায়ণগঞ্জ এবং কেরানীগঞ্জের অংশ বিশেষ
- সেক্টর ৪ঃ উত্তরের সিলেট সদর এবং দক্ষিণে হবিগঞ্জ , মধ্যবর্তী সমস্ত অঞ্চল ।
- সেক্টর ৫ঃ সিলেট জেলার উত্তরাঞ্চল ।
- সেক্টর ৬ঃ রংপুর ও দিনাজপুর জেলা ।
- সেক্টর ৭ঃ রাজশাহী ,পাবনা , বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার অংশ বিশেষ ।
- সেক্টর ৮ঃ কুষ্টিয়া যশোর ও খুলনা জেলা ।
- সেক্টর ৯ঃ বরিশাল , পটুয়াখালী , খুলনা এবং ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ ।
- সেক্টর ১০ঃ কোন আঞ্চলিক সীমানা ছিল না , নৌবায়নের কমান্ডো নিয়ে গঠিত । নৌ অভিযানের প্রয়োজনে যে কোন সেক্টর এলাকায় গিয়ে অপারেশন শেষে ১০ নম্বর সেক্টরে ফিরে আসতো ।
- সেক্টর ১১ঃ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার অংশ বিশেষ ।
এছাড়াও স্থানীয় ছোট ছোট যোদ্ধা বাহিনী ছিল । ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো । তারা গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতেন । ৩০ হাজার নিয়মিত যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনীর নাম মুক্তিফৌজ । ১ লক্ষ গেরিলা ও বেসামরিক যোদ্ধা শহরে গঠিত মুক্তি বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন এই মুক্তিফৌজ ।
পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস , পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও শিক্ষকদের বাসভবনসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে আক্রমণ করে । এ সময় রাজার বাগ পুলিশ লাইন্সের পুলিশ সদস্যরা তাদের থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন । কিন্তু হানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের আক্রমণে তারা টিকে থাকতে পারেননি ।
সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনী দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরেও আক্রমণ করে । পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শিক্ষক , শিক্ষার্থী , পুলিশ ও ইতিহাস সদস্য সহ অসংখ্য নিরীহ বাঙালি জনগণকে হত্যা করে ।এটি বিশ্বের বুকে নৃশংসতম গণহত্যা ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের এক ঘৃণিত উদাহরণ । পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চলাইট' । ওই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় । গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ ।
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি শহীদ হন । এক কোটির বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নেন । পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের সংগঠিত নির্মাণ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর ২৫শে মার্চ 'জাতীয় গণহত্যা দিবস' পালন করা হয় ।এদেশের কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয় । তারা শান্তি কমিটি , রাজাকার , আল বদর , আল শামস নামে বিভিন্ন কমিটি ও সংগঠন করে তোলে । এরা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে তালিকা তৈরি করে হানাদারদের দেয় । রাজাকার রাহানাদারদের পথ চিনিয়ে , ভাষা বুঝিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি হাওলাদার বাহিনী এ দেশকে মেধাশূন্য করার কল্পনা করে । এদেশের মানুষ যাতে মেধাশূন্য হয়ে পড়ে সেজন্য ১০ই ডিসেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বর এর মধ্যে তারা আমাদের অনেক গুনি শিক্ষক শিল্পী সাংবাদিক চিকিৎসক এবং কবি সাহিত্যিকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে । আমরা তাদের গর্বের সাথে স্মরণ করি । তাদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয় । এসব বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব
- অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা
- সাংবাদিক সেলিনা পারভীন
- ডক্টর আজহারুল হক
- অধ্যাপক মনির চৌধুরী
- অধ্যাপক রাশিদুল হাসান
- ডক্টর আলিম চৌধুরী সহ আরো অনেক বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করা হয় এই দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও আমাদের বিজয়
মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাই প্রতিবেশী দেশ ভারত নালা ভাবে আমাদের সাহায্য করে । আশ্রয় গ্রহণকারী বাঙালিদের ভারত খাদ্য , বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা দেয় । তারা মিত্র বাহিনীর নামে একটি সহায়তাকারী বাহিনী গঠন করে । অপারেশন জ্যাকপট নামক আক্রমণে এই বাহিনী বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করে । মিত্রবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করা হয় যৌথবাহিনী ।
১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর হঠাৎ পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের একটি বিমান ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায় । এর ফলে যৌথবাহিনী একযোগে স্থল , নৌ ও আকাশ পথে পাল্টা আক্রমণ করে । তীব্র আক্রমণের ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় । ফলে মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি ।
ঢাকার স্কুল ময়দানে যৌথ বাহিনীর পক্ষে লেফটেন এন্ড জেনারেল জগদীশ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন । এর মধ্য দিয়ে আমাদের সত্যিকারের বিজয় অর্জিত হয় । প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করি । এর কিছুদিন পর ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ।
বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ কতজন
যাদের আত্মত্যাগের জন্য আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের প্রতি জানাই অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা । মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে যারা নিজের সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছে, যাদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের জন্য আমরা পুরো পৃথিবীর সামনে নিজেদের 'আমরা বীরের জাতি' বলে পরিচয় দিতে পারি, যাদের রক্ত ক্ষয়ের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই তাঁরাই হচ্ছে বাংলাদেশের 'বীরশ্রেষ্ঠ' উপাধি প্রাপ্ত ব্যাক্তিবর্গ। আর বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পেয়েছেন ৭ জন। বাংলাদেশ সরকার ৭জন কে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ হচ্ছে ৭ জন আর তাঁদের আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৭জনকে কেন 'বীরশ্রেষ্ঠ' উপাধি দেয়া হয়
বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি হচ্ছে বাংলাদেশের শহীদদের জন্য সর্বোচ্চ উপাধি । মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা দুরদর্শিতা, অত্যন্ত সাহসিকতা ও অসামান্য বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন, তাই বাংলাদেশ সরকার এসকল বীর শহীদদের বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এই বীর সন্তানরা নিজেদের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে , নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সাথে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন ।
যার ফলে আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি । বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এসকল বীরযোদ্ধারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন হাসি মুখে তবুও এদেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার প্রত্যয়ে বিন্দু মাত্র পিছপা হননি, তাই তাঁদের বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই বীর সন্তানরা আমাদের গৌরব। আমরা তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করি । এই বীর সন্তানরা আমাদের হৃদয়ের চির অমর হয়ে থাকবেন ।
বাংলাদেশের ৭জন বীরশ্রেষ্ঠর নাম
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার বীরত্বসূচক রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রদান করেন । মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন এমন সাত জনকে বীরশ্রেষ্ঠ (সর্বোচ্চ) উপাধি প্রদান করা হয় । নিচে বাংলাদেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর নাম উল্লেখ করা হলোঃ
- ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
- ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
- সিপাহী হামিদুর রহমান
- ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ
- সিপাহী মোস্তফা কামাল
- ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার রুহুল আমিন
- ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ
এছাড়াও সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য আরও তিনটি উপাধি দেয়া হয়েছে । সেই উপাধি গুলো হল ঃ
- বীর উত্তম
- বীর বিক্রম
- বীর প্রতীক
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান যেভাবে শহীদ হন
মতিউর রহমান ছিলেন একজন ফ্লাইট লেফটেন্টন্যান্ট। তার কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে তিনি একটি জংলি বিমান দখল হতে চেয়েছিলেন কারণ সেই জঙ্গি বিমান নিয়ে তিনি যুদ্ধে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ তখন তিনি ছিলেন বিমানে সেফটি অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অফিসার । তাই মতিউর রহমান রাশেদ মিনহাজ নামে একজন শিক্ষানবীশ পাইলটের বিমান উড্ডয়নের শুরুতে রাশেদ মিনহাজকে বিমানটি থামাতে বলেন। যেহেতু তিনি একজন সেফটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন তাই তিনি রাশেদ মিনহাজকে বিমান থামাতে বললে তিনি বিমানটি থামান । তারপর ক্যানোপি খুলে বিমান থামানোর কারণ জানতে চান ।
তখন মতিউর রহমান বিমানের ককপিটে উঠে বসেন এবং রাশেদ মিনহাজকে ক্লোরোফার্ম স্প্রে করেন । যার ফলে রাশেদ মিনহাজ অচেতন হয়ে পড়েন কিন্তু তিনি অচেতন হওয়ার পূর্বে কন্ট্রোল রুমে জানাতে সক্ষম হন যে তিনি সহ তার বিমানটি হাইজ্যাক হয়ে গেছে । তখন কন্ট্রোল রুম বিমানের অবস্থান বুঝে আরও চারটি জঙ্গি বিমান মতিউর রহমান যে বিমানে আছে সেই বিমানের পিছনে ধাওয়া করে । মতিউর রহমান বুঝতে পারেন যে তার মৃত্যু আসন্ন তারপরেও তার বিমানটি নির্ধারিত সীমার নিচে চালিয়ে রাউটারকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালান ।
হঠাৎ রাশেদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পান কিন্তু তখন বিমানটি প্রায় ভারত সীমান্তে পৌঁছে যাবে এমন অবস্থা । তিনি বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়া উত্তম মনে করলেন যাতে করে মতিউর রহমানের বিমান ছিনিয়ে নেওয়ার প্ল্যানটা কোনভাবে সফল না হয় । তারপর রাশেদ ও মতিউর রহমানের ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে মতিউর রহমান বিমান থেকে নিচে পড়ে যান । তার কাছে কোন প্যারাসুট না থাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন । আর বিমানটি থাট্টা এলাকায় বিধ্বস্ত হয় যা কিনা ভারত সীমান্ত থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে , সেই সময় রাশেদ মিনহাজ সেই বিমানেই ছিলেন যার ফলে তিনিও নিহত হন । ১৯৭১ সালের ২০শে আগস্ট মতিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন ।
বাংলাদেশ সরকার তার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন ।
মতিউর রহমানের মৃতদেহ পাকিস্তান সরকার করাচীতে মাসরুর ঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণীর কবর স্থানে সমাহিত করেন । তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪শে জুন বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানের দেহবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং তাকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে ২৫শে জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় ।
লেখকের শেষ বক্তব্য। বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য
বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যকের জানা উচিত। বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পেয়েছেন বাংলাদেশের ৭জন বীর সন্তান। এই বীর সন্তানরা আসন্ন মৃত্যু জেনেও অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে প্রাণপণ লড়াই করে এদেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। এই বীর সন্তানরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে আমাদের উপহার দিয়েছেন স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তাঁদের আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠরা আমাদের দেশের গৌরব, আমাদের জাতির গৌরব। তাই আমরা তাঁদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
আশা করছি আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্যগুলো পেয়েছেন।আমাদের লেখাটি আপনার ভালো কেমন লাগলো সে বিষয়ে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানাবেন। আর আমাদের আর্টিকেলটি থেকে যদি আপনি সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url