OrdinaryITPostAd

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন

ভোটার স্থানান্তর হইছে কিনা জানার নিয়ম আপনি কি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন । তাহলে আজকের আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন । আজকের আর্টিকেলে আপনি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে যাবেন । চলুন তাহলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নিয়ে গোষ্ঠীদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন

আজকে আমরা আপনাদের জন্য বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যাপক সব তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব । বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা, খাদ্য, সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মীয় উৎসব প্রভৃতি সম্পর্কে আপনারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন ।

পেইজ সূচীপত্র ঃবাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে কি বুঝায়

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে মূলত প্রধান জাতির পাশাপাশি বসবাসরত সংখ্যা গঘিষ্ঠ এবং অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর জাতি বা সম্প্রদায়কে বোঝানো হয় । অন্যদিকে আদিবাসী বলতে বুঝায় কোন দেশে বসবাসরত আদিম জনগোষ্ঠীকে । তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও আদিবাসী দের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে । বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করব । আপনি পাহাড়ি অঞ্চলে বাংলাদেশের এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের দেখতে পাবেন ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিসংখ্যান

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে । ১৯৯১সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের ২৯ টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় । যাদের বেশিরভাগই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বাস করে । ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেখা গেছে বাংলাদেশের মোট আদিবাসীদের সংক্ষেপে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৫ জন । তবে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪৫টি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং সর্বমোট ২০ লক্ষাধিক আদিবাসী আছে বলে জানা যায় । 

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্র  নৃগোষ্ঠী

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

বাংলাদেশ একটি বহজাতি , সংস্কৃতি , ধর্ম এবং ভাষার দেশ । এদেশের বাংলা ভাষাভাষী বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদের পাশাপাশি সু দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করছে বেশ কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় । আচারে অনুষ্ঠানে , ধর্মে , ভাষায় , সংস্কার- সংস্কৃতিতে এরা বাঙ্গালীদের থেকে স্বতন্ত্র । এরা এ বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ ও অনিবার্য অংশ । বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • চাকমা 
  • মারমা 
  • রাখাইন 
  • তঞ্চঙ্গা 
  • মণিপুরী 
  • গারো 
  • খাসিয়া 
  • ত্রিপুরা 
  • ম্রো 
  • ওরাও 
  • হাজং 
  • সাঁওতাল  প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গুলো । 
এরা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম , ময়মনসিংহ সিলেট রংপুর দিনাজপুর পঞ্চগড় রাজশাহী ঠাকুরগাঁও কক্সবাজার বাস করছে । এছাড়াও বাংলাদেশে খেয়াং , মুন্ডা , চক , লুসাই প্রভৃতি আরো কিছু কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করে থাকে ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী 'চাকমা'

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ সম্প্রদায় হলো চাকমা . চাকমা নিজেদেরকে বলে চাঙমা । বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষত রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবান প্রভৃতি জেলায় এদের বাস ।
  • সমাজ ব্যবস্থাঃ চাকমারা আবার ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত । এদের নিজস্ব সামাজিক , প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা আছে যার প্রধান দায়িত্ব আছে রাজা । রাজাই চাকমাদের প্রথা , রীতিনীতি নির্ধারণ , ভূমি । রাজস্ব ব্যবস্থাপনা , গ্রামের কোন্দল এবং নানা সমস্যা নিষ্পত্তি করে । চাকমাদের সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক । ফলে পুত্র সন্তানরাই কেবল পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে ।
  • জীবিকা ঃ কৃষি এদের প্রধান জীবিকা হলেও বর্তমানে চাকমারা চাকুরি ও ব্যবসা ক্ষেত্রেও জায়গা করে নিয়েছে । 
  • শিক্ষা ঃ আদিবাসী সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে চাকমাদের স্বাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি ।
  • ধর্মঃ চাকমা রা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ।
  • উৎসবঃ এদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে আছে মাঘী পূর্ণিমা , বৈশাখী পূর্ণিমা , বৌদ্ধ পূর্ণিমা , কঠিন চীবর দান , মধু পূর্ণিমা , ফানুস উড়ানো প্রভৃতি । চাকমাদের অন্যতম বড় উৎসব হল বিজু উৎসব ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'মারমা'

সংখ্যা গরিষ্ঠের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তর সম্প্রদায় হলো 'মারমা' । পার্বত্য জেলা গুলোতে মান্নাদের বসবাস দেখা গেলেও এরা মূলত বান্দরবানের অধিবাসী । মায়ানমার থেকে এসেছে বলে এদেরকে মারমা বলা হয় । তবে মারমা শব্দটি এসেছে ম্রাইমা শব্দ থেকে । বান্দরবনে প্রায়. ১লাখ মারমা বাস করে ।
  • সমাজ ব্যবস্থাঃ চাকমাদের মত মারমাদেরও অসামাজিক বিচার আচারের দায়িত্ব রাজার হাতে । পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হলেও মারমা মেয়েরা পৈত্রিক সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার লাভ করে ।
  • জীবিকা ঃ জুম চাষ , নদীর মাছ ও কাঁকড়া শিকার এবং কাপড় , চুরুট প্রভৃতি তৈরি করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে ।
  • শিক্ষাঃ শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হয়ে মারমারা চাকুরি , ব্যবসা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে ।
  • ভাষাঃ মারমারা নিজস্ব ভাষায় কথা বললেও লেখার ক্ষেত্রে বর্মিজ বর্ণমালা ব্যবহার করে ।
  • ধর্মঃ মার্মারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ।
  • উৎসবঃ মার্মাদের প্রধান ধর্মীয় সামাজিক উৎসবের মধ্যে আছে বুদ্ধ পূর্ণিমা ,কঠিন চীবর দান ,ওয়াগ্যোয়াই প্রভৃতি । 

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী 'রাখাইন'

রাখাইন সম্প্রদায় মূলত মায়ানমারের একটি জাতিগোষ্ঠী । পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ , রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় রাখাইনদের বাস । রাখাইনরা সাধারণত মগ নামে পরিচিত ।
  • ধর্মঃ রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ।
  • উৎসবঃ রাখাইনদের প্রধান উৎসব গুলো হলো- বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী পালন , বৈশাখী পূর্ণিমা , মাঘী পূর্ণিমা প্রভৃতি । এছাড়া রাখাইনরা সংক্রান্তিতে তিন দিনব্যাপী সংগ্রায়েজ উৎসব পালন করে  অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে  ।
  • পোশাকঃ পুরুষরা লুঙ্গি , ফতুয়া আর নারীরা লুঙ্গি ব্লাউজ অলংকার এবং মাথায় ফুল পরিধান করতে পছন্দ করে ।
  • সমাজ ব্যবস্থা ঃ রাখাইনদের বিয়েতে পুরুষদের পণ দেয়ার প্রথা প্রচলিত আছে ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী 'তঞ্চঙ্গা'

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে তঞ্চঙ্গা উল্লেখযোগ্য । রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা এদের বাস ।এরা স্বতন্ত্র জাতি বলে দাবি করলেও নৃতাত্ত্বিকগণ মনে করেন এরা চাকমা জাতির একটি উপগোত্র ।
  •  সমাজব্যবস্থা ঃ সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রথা , রীতি-নীতির দিক থেকে চাকমাদের সাথে এদের যথেষ্ট সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় ।
  • ভাষা ঃ তঞ্চঙ্গাদের ভাষা ইন্দো-এরিয়ান ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত । তঞ্চঙ্গারা একে 'মনভাষা' বলে উল্লেখ করে ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী 'মণিপুরী'

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনিপুরীদের নৃত্য


মনিপুরীদের আদি নিবাস ভারতের মনিপুর রাজ্যে । বার্মা-মনিপুর যুদ্ধের সময় এরা এসে বৃহত্তর সিলেটে আশ্রয় নিয়েছিল । এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ময়মনসিংহ মনিপুরীতে দেখতে পাওয়া যায় । ভাষাগত ও  ধর্মীয় ভিন্নতার ফলে মনিপুরী সম্প্রদায় আলাদা আলাদা তিনটি উপ গোষ্ঠীতে বিভক্ত । গোষ্ঠী তিনটি হলো-
  • বিষ্ণুপ্রিয়া
  • মৈতৈ
  • পাঙন 
২০০৩ সালের এস আই এল ইন্টারন্যাশনাল পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট ৪০ হাজার বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী এবং ১৫০০০  মৈতৈ মণিপুরী আছে । মনিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী । বিশেষ করে মনিপুরী নৃত্য আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত । মণিপুরীদের সর্ববৃহত অনুষ্ঠান হচ্ছে রাস পূর্ণিমা ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'গারো' 

ধারণা করা হয় কারো জনগোষ্ঠী প্রায় সাড়ে চার বছর পূর্বে তিব্বত থেকে এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন ।
  • ভাষাঃ গারোদের নিজস্ব ভাষার নাম আচিক বা গারো ভাষা ।
  • ধর্মঃ গারদের আদি ধর্মের নাম সাংসারেক । তবে বর্তমানে বেশিরভাগ গারক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ।
  • সমাজ ব্যবস্থা ঃ গারদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক , অর্থাৎ নারী রায় পরিবারের প্রধান এবং সম্পত্তির অধিকারী । মা তার সূত্র ধরেই তাদের দল , গোত্র ও বংশ গড়ে ওঠে ।
  • খাদ্যঃ গারোদের প্রধান খাবার ভাত , মাছ , মাংস ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি । তাদের ঐতিহ্যবাহী একটা খাবার বাসের করল দিয়ে তৈরি করা হয় যা খেতে অনেক সুস্বাদু ।
  • বাড়িঃ পূর্বে গারো জনগোষ্ঠীর লোকেরা নদীর তীরে লম্বা এক ধরনের বাড়ি তৈরি করতেন যা নকমান্দি নামে পরিচিত । তবে বর্তমানে তারা অন্যদের মতোই করোগেটেড টিন এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বাড়ি তৈরি করেন ।
  • পোশাকঃ গারো নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম দকবান্দা ও দকসারি । পুরুষেরা শার্ট , লুঙ্গি , ধুতি ইত্যাদি পরিধান করেন ।
  • উৎসবঃ গারদের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের নাম ওয়ানগালা । এই সময়ে তারা সূর্য দেবতা সালজং এর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নতুন শস্য উৎসর্গ করেন । সাধারণত নতুন শস্য উঠার সময় অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে উৎসবটি হয় । উৎসবের শুরুতে তারা উৎপাদিত শস্য অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করেন এবং বিভিন্ন ধরনের বাধ্য বাজনা বাজিয়ে এই উৎসবটি পালন করা হয় ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'খাসিয়া'

বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় খাসিয়া জনগোষ্ঠী বাস করেন । অতীতের সিলেটে জয়ন্তা বা জৈন্তিয়া নামে একটি রাজ্য ছিল । ধারণা করা হয় খাসিয়া জনগোষ্ঠী ওই রাজ্যে বসবাস করতেন ।
  • ভাষাঃ গারোদের মতো খাসিয়া জনগোষ্ঠী নিজস্ব ভাষা আছে । তবে লিখিত কোন বর্ণমালা নেই । তাদের ভাষার নাম মনখেমে ।
  • সমাজ ব্যবস্থা ঃ এই জনগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থাও গারো সমাজের মতোই মাতৃতান্ত্রিক । পারিবারিক সম্পত্তির বেশিরভাগের উত্তরাধিকারী হয় পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে । খাসিয়া জনগোষ্ঠী কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন । তারা প্রচুর পান ও মধুর চাষও করেন ।
  • খাদ্যঃ খাসিয়াদের প্রধান খাদ্য ভাত , মাংস , শুটকি মাছ , মধু ইত্যাদি । তারা পান সুপারিকে খুবই পবিত্র মনে করেন । বাড়িতে অতিথি এলে পান সুপারি এবং চা দিয়ে করা হয় ।
  • পোশাক ঃ খাসিয়া মেয়েরা কাজিম পীন নামক ব্লাউজ ও লুঙ্গি পরেন । আর ছেলেরা পকেট ছাড়া শার্ট ও লুঙ্গি পরেন , যার নাম  ফুংগ মারুং ।
  •  ধর্ম ঃ খাসিয়ারা বিভিন্ন দেবতার পূজা করেন । তাদের প্রধান দেবতার নাম উব্লাই নাংথউ যাকে তারা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা মনে করেন ।
  • উৎসবঃ সকল ধরনের অনুষ্ঠান যেমন-পূজা পার্বণ , বিয়ে , খরা , অতিবৃষ্টি , ফসলহানি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে নাচ , গান করা হয় । এই উপলক্ষে খাসিয়া জনগোষ্ঠী উৎসবের আয়োজন করেন ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'ম্রো'

পার্বত্য অঞ্চলের আরেকটি জনগোষ্ঠীর ম্রো । তারা মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করেন ।
  •  ভাষাঃ ম্রোদের নিজস্ব ভাষা আছে এবং তার লিখিত রূপও আছে । ইউনেস্কো ম্রো ভাষাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে । সঠিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে এই ভাষা হারিয়ে যেতে পারে ।
  • ধর্ম ঃ ম্রো জনগোষ্ঠী ধর্মের নাম তোরাই । এছাড়াও ক্রামা নামে আরেকটি ধর্মমত আছে । ম্রোরা সাধারণত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী । তাদের কেউ কেউ  খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছেন ।
  • সমাজব্যবস্থা ঃ ম্রো পরিবারের প্রধান হলেন পিতা । তাদের রয়েছে গ্রামভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ।
  • বাড়ি ঃম্রোরা তাদের বাড়িকে বলে কিম । সাধারণত বাঁশের বেড়া ও ছনের চাল দিয়ে মাচার উপর তারা বাড়ি তৈরি করেন ।
  • খাদ্য ঃ ম্রোদের প্রধান খাদ্য ভাত , শুটকি মাছ ও বিভিন্ন ধরনের মাংস । তাদের অন্যতম সুস্বাদু খাবারের নাম নাপ্পি ।
  • পোশাক ঃ ম্রো মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম ওয়াংলাই । পুরুষরা খাটো সাদা পোশাক করেন ।
  • উৎসব ঃ জন্ম , বিয়ে , মৃত্যু ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ম্রোরা বিভিন্ন আচরণ উৎসব পালন করেন । একটি রীতি অনুযায়ী শিশুর বয়স তিন বছর হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের কাম ছিদ্র করে দেওয়া হয় ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'ত্রিপুরা'

 পার্বত্য অঞ্চলের আরেকটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নাম ত্রিপুরা । চাকমা ও মারমাদের পর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী হচ্ছে সংখ্যা গরিষ্ঠ । বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এই জনগোষ্ঠী বাস করেন ।
  • ভাষা ঃ ত্রিপুরাদের ভাষার নাম ককবরক ।
  • সমাজ ব্যবস্থা ঃ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সমাজে দলবদ্ধভাবে বসবাস করেন । দলকে তারা দফা বলে । তারা মোট ৩৬ টি দফা আছে । এর মধ্যে ১৬ টি বাংলাদেশের বাকি ২০টি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে রয়েছে । বাংলাদেশের বসবাসকারী ত্রিপুরারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অধিকারী । তবে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছেলেরা বাবার সম্পত্তি ও মেয়েরা মায়ের সম্পত্তি লাভ করে থাকেন ।
  • ধর্ম ঃ ত্রিপুরা সনাতন ধর্মের অনুসারী । তবে বেশির ভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং শিব ও কালী পূজা করেন । তারা নিজস্ব কিছু দেবদেবীর উপাসনাও করেন । যেমন-গ্রামের সকল লোকের মঙ্গলের জন্য তারা 'কের ' পূজা করেন ।
  • বাড়ি ঃ ত্রিপুরাদের ঘর গুলো সাধারণত উঁচুতে হয় ও ঘরে ওঠার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়। ।
  • পোশাকঃ ত্রিপুরা মেয়েদের পোশাকের নিচের অংশকে রিনাই ও উপরের অংশকে রিসা বলা হয়। মেয়েরা নানারকম অলংকার , পুতির মালা আর কানের নাতং নামে এক প্রকার দুল পরেন । ছেলেরা ধুতি  ,গামছা , লুঙ্গি , জামা পড়েন ।
  • উৎসবঃ ত্রিপুরা সমাজে জন্ম , মৃত্যু , বিয়ে উপলক্ষে নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় । তাদের নববর্ষের উৎসব বৈসু । এ সময় ত্রিপুরা নারীরা মাথায় ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজেন । গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান ও আনন্দ করেন ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী  'ওরাঁও'

ওরাঁও জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ রাজশাহী , রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে বসবাস করেন ।
  • ভাষা ঃ ওরাঁওদের ভাষার নাম কুরুখ ও সাদ্রি ।
  • সমাজ ব্যবস্থা ঃ ওরাও সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক । ওরা ওদের গ্রাম প্রধানকে মাহাতো বলা হয় । তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক পরিষদ আছে যা পাহতো নামে পরিচিত ।এই পরিষদে কয়েকটি গ্রামের প্রতিনিধিরা থাকেন ।
  • ধর্ম ঃ ওরাও জনগোষ্ঠী বিভিন্ন দেবতার পূজা করেন । তাদের প্রধান দেবতার ধার্মেশ যাকে তারা পৃথিবীর সৃষ্টিকতা মনে করেন ।
  • উৎসব ঃ ওরা ওদের প্রধান উৎসবের নাম কারাম । ভাদ্র মাসে উদিত চাঁদের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে কারাম উৎসব পালন করা হয় । এছাড়াও তারা প্রতি মাসে ও ঋতুতে বিভিন্ন ধর্মীয় ব্রত অনুষ্ঠান পালন করেন ।
  • পোশাকঃ পুরুষেরা ধুতি , লুঙ্গি , শার্ট ও প্যান্ট পরেন । মেয়েরা গোটা কাপড়ে শাড়ি ও ব্লাউজ পড়েন ।
  • খাবার ঃ ওরাওদের প্রধান খাবার ভাত । এছাড়াও তারা গম ভুট্টা মাছ-মাংস ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খেয়ে থাকেন ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'হাজং'

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাজং সম্প্রদায়ের দেখা মিলে নেত্রকোনা জেলায়। হা মানে মাটি আর জং অর্থ পোকা । প্রকৃতপক্ষে কৃষি কাজের সাথে সখ্যতার কারণে তাদের নাম দেয়া হয়েছে হাজং । হাজং বিদ্রোহ , তেভাগা আন্দোলন প্রভৃতি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে এরা ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ।
  • ভাষাঃ হাজংদের নিজস্ব ভাষা আছে ।
  • উৎসবঃ হাজংদের সবচেয়ে বড় উৎসব 'প্যাক খেলা' উৎসব ।
  • ধর্ম ঃ হাজংদের কিছু অংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং কিছু অংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ।
  • খাবার ঃ ভাত , মাছ , সবজি ছাড়াও কচি বাঁশের গুড়া বা মিউয়া এদের প্রিয় খাবার ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী 'সাঁওতাল'

পূর্বভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল সাঁওতাল বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে বিশেষত দিনাজপুর রংপুরে সাঁওতালদের বাস । সাঁওতাল সম্প্রদায় আবার ১২ টি উপগোত্রে বিভক্ত । এরা মাটির তৈরি ছোট ছোট ঘরে বাস করে ।
  • পেশাঃ সাঁওতালদের প্রধান পেশা কৃষি ।
  • ধর্মঃ সাঁওতালদের প্রধান দেবতা বোংগা । এরা মূলত সূর্যের পূজা করে ।
  • উৎসবঃ সাঁওতালদের বার্ষিক উৎসবের নাম সোহরাই । এই উৎসবে সাঁওতাল মেয়েরা দল বেঁধে নাচে । 
  • খাদ্যঃ সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত । এ ছাড়া মাছ কাকড়া শুকর , মুরগি , খরগোশ , গুইসাপ , ইঁদুর এবং বেজির মাংস খেতে পছন্দ করে সাঁওতালরা । 
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণে ইতিহাসে এরা বিশেষ স্থান দখল করে আছে ।

বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অবস্থা

অতীতে যদিও এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো সংখ্যা গরিষ্ঠের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত , নিগৃহীত হতো কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে । বর্তমানে সরকার ক্ষুদ্র নিয়ে গোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ কোটা , বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহায়তা সহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রাগসর করে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন  ।করছে । আদিবাসী সম্প্রদায় গুলো এখন কেবল কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে না বরং তারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সম্মানজনক পদে চাকরি করছে । এছাড়া ব্যবসা , রাজনীতি , শিল্প সংস্কৃতি  প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে ।

শেষ বক্তব্য ।বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন

বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়িক গুলো এ দেশের নাগরিক । তাই তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের সংস্কৃতি , ইতিহাস , ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব । বর্তমানে কিছু কিছু উদ্যোগ নেয়া হলে আরও ব্যাপক পরিসরে তাদের ইতিহাস , ঐতিহ্য , রীতিনীতি , জীবন যাপন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন এবং এগুলো সংরক্ষণ করার যথাযথ ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত ।

আজকের আর্টিকেলটি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চয়ই খুব ভালোভাবে পড়েছেন । আজকের এই পোস্টটি দ্বারা আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বিষয়গুলো শেয়ার করবেন । আরো সুন্দর ও ভালো লেখা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করুন এবং আমাদের পাশে থাকুন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪