ভাষা আন্দোলন দিবস সম্পর্কে জেনে নিন
নাটোর জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার নাম জেনে নিনআপনি কি ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন । একজন বাঙালি হিসেবে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানা আপনার অবশ্যই জরুরী । আজকের এই পোস্টে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব । আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে ভাষা আন্দোলন দিবস সম্পর্কে জানতে পারবেন ।
.২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা আন্দোলন দিবস । ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রফিক , শফিক , সালাম , বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকেই শহীদ হয়েছেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য । তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা আন্দোলন দিবস । চলুন তাহলে ভাষা আন্দোলন দিবস সম্পর্ক আলোচনা করা যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
- ভাষা আন্দোলন দিবসের পটভূমি ।
- একুশের স্মৃতি ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি ।
- ভাষা আন্দোলন দিবসের পূর্ব ইতিহাস ।
- অমর ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ।
- ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক তাৎপর্য ।
- ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবসের প্রথম আনন্দ উৎসব।
- বিশ্বজুড়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ।
- ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সংস্কৃতির সেতুবন্ধন ।
- শেষাংশ । ভাষা আন্দোলন দিবস ।
ভাষা আন্দোলন দিবসের পটভূমি
১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে থেকেই উর্দুর বিপক্ষদল হিসেবে বাংলা ভাষাকে যুদ্ধে নামতে হয়। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদই প্রথম বাংলাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'ভারতে যেমন হিন্দি রাষ্ট্র ভাষা হতে যাচ্ছে , পাকিস্তানেও তেমনি উর্দু রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত।' সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এসেছিল এবং বাংলার জ্ঞান তাপস ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ 'দৈনিক আজাদে' এক প্রবন্ধে বলেন, অধিকাংশ জনসংখ্যার ভাষা হিসেবে বাংলায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত'।
বস্তুত ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখা যায়, পাকিস্তানের কোন অঞ্চলের মানুষেরই মাতৃভাষা উর্দু নয়। পাকিস্তান জন্মের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে করাচি শিক্ষা সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্যোগে উর্দুকে পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা করার একটি প্রস্তাব পাশ করে নেয়া হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সুদূরপ্রসারী।সে বছর ৬ই ডিসেম্বর ১৯৪৭ ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পূর্ব বাংলা ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত হিসেবে পূর্ব বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ছাত্রদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা হিসেবে বাংলার মর্যাদার প্রশ্নটি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ২১ শে মার্চ রেসকোর্সের জনসভায় এবং ২৪ শে মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে উর্দুকেএকমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র জনতার মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠে এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিম উদ্দিন মুসলিম লীগের এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন,'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু ভাষা'। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুসে উঠেছিল বাঙালি। পূর্ব বাংলার শুরু হয়েছিল মহান ভাষা আন্দোলন। একুশে ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্র সমাজ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতিকে আদায় করে নিয়েছিল। আজ বিস্মিত হতে হয় সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তৎকালীন বাঙালি মানুষের চেতনার পরিপক্কতা দেখে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো যে চেতনায় প্রস্তাবনা পাশ করেছে, ১৯৫২ সালে তৎকালীন ভাষার সংগ্রামীরা সেই প্রেরণাকেই নাগরিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। আর এটা হল সকল মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতি।
একুশের স্মৃতি ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন কে সামনে রেখে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে। আন্দোলন স্তব্ধ করতে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল মিটিং ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় । কিন্তু বাংলা সাহসী ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে । সাথে সাথে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় । এতে রফিক সালাম বরকত জব্বার সহ অনেকে শহীদ হন । আমাদের দেশের অনেক কবি ভাষা আন্দোলনকে করেছেন বেগবান। এজন্য কবি শামসুর রহমান 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা' নামক কবিতায় লিখেছেন--------
"তোমাকে উপরে নিলে, বল তবে কি থাকে আমার ?
উনিশ শো' বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী ।"
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে যায় এরপর বাংলার মানুষ খুবই ফেটে পড়ে এরপর বাঙালির আন্দোলনের চাপের মুখে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে । পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ।
২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবসের পূর্ব ইতিহাস
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেবার জন্য যারা উদ্যোগ নেন তারা হলেনঃ কানাডায় বসবাসরত একটি বহু জাতিক ভাষা প্রেমী গ্রুপ 'মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দি ওয়ার্ল্ড'. এদের মধ্যে দুজন ফিলিপিনো, দুজন ইংরেজ, একজন জার্মান, একজন স্ক্যান্ডানিজ, ক্যাডি, ও দুজন বাংলা ভাষাভাষী বরেণ্য ব্যক্তি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বাংলা ভাষাভাষী দুই ব্যক্তির নাম ও দুই অমর ভাষা শহীদেরই নাম-রফিক ও সালাম।
এই গ্রুপটি ১৯৯৮ সালের ২৯ শে মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব এর কাছে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন এবং স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে ভাষা প্রেমিক জনাব রফিকুল ইসলাম ও জনাব আব্দুর সালাম বিপুল উদ্যোগ নিয়ে কাজে নেমে পড়েন। এরপর ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে পৌঁছে যায়।
অমর ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশসহ ২৭ টি দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কো এর প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তাদের অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ। এরপর ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২১ শতকের প্রথম দিকে বাঙালির পক্ষে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তারা আজ পৃথিবীতে নেই । ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় রাজপথের ধুলোয় নিজেদের রক্তে মিশে দিয়েছিল বাঙালি। একুশের এ অনন্য বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনে নেপথে যেসব মহৎ হৃদয় বাঙালি অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই," লাভার্স অফ দি মাদার ল্যাংগুয়েজ ক্লাব" এই দুই প্রবাসী বাঙালি সংগঠক সালাম ও রফিককে এবং সেই সঙ্গে ইউনেস্কো সংশ্লিষ্ট সকলকে।
বাঙালি ইতিহাসে অসংখ্য উজ্জ্বল মাইলফলক আছে, যা অর্জনের সমৃদ্ধতায় উজ্জ্বল। এমনই একটি মাইলফলক নিঃসন্দেহে ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে .২১শে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি বাঙালির জন্য এক উজ্জ্বল মাইলফলক। এই অমর একুশের মধ্যে নিহিত বাঙালির ভাষাভিত্তিক স্বতন্ত্রের বীজ।
২১শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক তাৎপর্য
নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য প্রত্যেকটি জাতীয় একটি নিজস্ব ভাষা আছে যার মাধ্যমে ওই জাতি মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে । ভাব প্রকাশের মাধ্যমে হিসেবে একটি জাতির সমন্বিতভাবে যে ভাষা ব্যবহার করে তাকে মাতৃভাষা বলে। অন্যভাবে বললে শিশু জন্মের পর মায়ের মুখ থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শিখে ও মনের ভাব প্রকাশ করে তাকেই মাতৃভাষা বলে। মাতৃভাষার মাধ্যমে একটি জাতির সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে ।
তাই মাতৃভাষায় যে কোন জাতির জন্য একটি অপরিহার্য প্রকাশ মাধ্যম। এ ভাষাকে রক্ষার জন্য রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি সৃষ্টি করেছে অনন্য ইতিহাস । বাংলার দামাল ছেলেরা তাজা রক্তের বিনিময়ে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সিনিয়ানে মাতৃভাষার অধিকার । প্রতিষ্ঠা পায় বাংলা ভাষা । এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । ৫২-র অর্জন আরও তাৎপর্য লাভ করেছি আরো মহিমান্বিত হয়ে উঠেছে জাতিসংঘের স্বীকৃতির মাধ্যমে ।
ভাষা একটি জাতীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক । মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব হলো সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। সকল ভাষার প্রতি সম্মান মর্যাদা প্রদর্শন । এ দিবসের আরেকটি তাৎপর্য হলো যে নিজের ভাষাকে ভালোবাসার পাশাপাশি অন্য দেশ বা জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা ও সম্মান করা । উদ্ভূত হয়ে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে । মাতৃভাষাকে সম্মান জানাতে হয় । দেশকে ভালোবাসা দেশের মানুষকে দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসা তার তার জীবনাচারকে ভালবাসা আর তার জন্য গর্ববোধ করার মধ্যে লুকিয়ে আছে মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ।
অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রতিকি বিজয় নির্দেশিত হয়েছে। ভাষা শহীদদের আত্মদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। এখন বিশ্বের তাৎপর্যমণ্ডিত প্রতিক-যা বাঙালির গর্ব আর অহংকারের দ্যোতক। ২১ ভাষার আগ্রসনের বিরুদ্ধেশে ফেব্রুয়ারীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লাভ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরাট গৌরব। সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশ নামে একটি দেশের কথা বাঙালি জাতি ও ভাষার কথা জানতে পারছে। ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' এক বিরাট ভূমিকা পালন করতে থাকবে। এ দিবসে তাৎপর্য উল্লেখ করে বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ বলেছেন--------
আমি মুগ্ধ, আমি প্রী্ আমাকে
স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার প্রাণের
কথা আমার ভাষায় জানতে পারবো
বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে ,
সত্যি গর্বিত আমি।
ভাষা আন্দোলন দিবসের প্রথম আনন্দ উৎসব
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জীবনে এক স্মরণীয় অধ্যায় । আমাদের জাতীয় জীবনের চেতনার উৎস হলো একুশে ফেব্রুয়ারি । একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা দিবস । বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার একটি ঐতিহাসিক দিন । ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাঙালি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । এই দিনকে পৃথিবীর বুকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এজন্য একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এ গৌরবময় দিন । এ দিবসের গুরুত্ব উল্লেখ করে ডক্টর আজাদ বলেছেন ," আমি মুগ্ধ আমি প্রীত আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমার প্রানের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে , সত্যিই আমি গর্বিত ।"
মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হওয়ায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ৭ই ডিসেম্বর উৎসবের ঘোষণা দেয়। ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এ উৎসবটি পালিত হয়। দিনভার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আয়োজিত হয় আনন্দ শোভাযাত্রা-২১ আমাদের অহংকার, ২১ পৃথিবীর অলংকার ইত্যাদি স্লোগানে চারিদিক মুখরিত হয়। আলোচনা আবৃতি, গান, নাচ, নাটক ইত্যাদি সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ সমাবেত হয় অনুষ্ঠানে । আনন্দ মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার বাতাস ।
বিশ্বজুড়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
.২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদা লাভ করায় বাঙালি ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ছুটে যায় শহীদ মিনারে। আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি, বাঙালি একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধা করেনি। বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের মাতৃভাষাকে।
আরো পড়ুন ঃ
জাতিসংঘের মহাসচিব এ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী তাদের জাতিসত্তার প্রধান বিবেচ্য বিষয় মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। প্রতাপশালী অন্য ভাষার করাল গ্রাস থেকে প্রতিটি জাতি নিজ মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। 'একুশে ফেব্রুয়ারি' তাই মাতৃভাষা রক্ষার প্রতীক হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা
অপরিসীম।
২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সংস্কৃতির সেতুবন্ধন
বিশ্বের প্রায় ১৮৮ টি দেশ প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিকে পালন করে । ফলে তারা বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সভ্যতাকে জানতে আগ্রহী হচ্ছে। বাংলার বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্ট সম্পর্কে জানছে ।বিশ্বের দরবারে বাংলা সাহিত্য একটি বিশিষ্ট স্থান লাভ করছে। সারা বিশ্ব জানতে পারছে বাঙালি একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য লড়াই করে গৌরবৌজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। মে দিবসে বিশ্ববাসী যেমন শিকাগোর শ্রমিক আন্দোলনকে স্মরণ করে, তেমনিভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্ব বাংলার ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। ফলে আমাদের মাতৃভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সঙ্গে বিশ্ববাসী সেতু বন্ধন তৈরি হচ্ছে ।
শেষাংশ ।ভাষা আন্দোলন দিবস
বিশ শতকে শেষ প্রান্তে এসে জাতিসংঘের বিজ্ঞান শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠান ইউনেস্ক মাতৃভাষাগুলোর অধিকার এবং একে মর্যাদা পূর্ণভাবে টিকিয়ে রাখতে যে অনন্য সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সমগ্র বিশ্বের ভাষা প্রবাহে অসামান্য অবদান রাখবে । একই সঙ্গে এই দিন বিশ্বের বৃহৎ ভাষাগুলোর পাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিপীড়িত অবহেলিত ভাষাগুলো সংঘবদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে । জাতির আজ তাই বাঙালি জাতির তার মাতৃভাষা এবং বিশ্বের অন্যান্য ভাষার প্রতি এ জাতীয় দায়িত্ব-শত গুনে বেড়ে গেল ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করায় বাঙালি জাতি গর্বিত। ভাষা আন্দোলনের কারণে বাঙালি জাতির বিশ্ববাসীর কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে । সে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ পথে লাফালাফি শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি । একুশ আজ স্বীকৃতি পেয়েছে । লাভ করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা । এ গৌরব শহীদদের এ গৌরব বাঙালির ।
যতটুকু পেরেছি আপনাদের জন্য তথ্যগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি । আমাদের তথ্য গুলো যদি ভালো লেগে থাকে তো অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন । আপনাদের ভাল লাগাই আমাদের লিখার অনুপ্রেরণা । ভুল ত্রুটি হলে সেটাও শুধরিয়ে দিবেন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url