মধু খাওয়ার ৩৩টি উপকারিতা , কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
মধু মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অপূর্ব নেয়ামত। মহানবী (সাঃ) নিজে মধু খেতেন এবং অন্যদের খেতে উৎসাহিত করতেন । পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা মধুকে সেফা ও রোগ নিরাময়ের উপায় বলে উল্লেখ করেছেন। আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে মধুকে মহাঔষধ বলা হয়েছে। মধুতে প্রায় ৪৫টি উপাদান রয়েছে । মধুর প্রধান উপাদান হচ্ছে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ।
মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা সকলের উচিত । এ ব্যাপারে আজকে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে । আজকে আপনারা মধু খাওয়ার ৩৩ টি উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পোস্ট সুচীপত্রঃ
মধুতে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টিউপাদান ও ভিটামিনসমূহ। মধু(Honey) খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
- গ্লূকোজ ও ফ্রুকটোজ নামে এমন ২টি উপাদান মধুতে রয়েছে যা সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং শরীরে কোনো ফ্যাট জমা হতে পারে না।
- মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, মধুতে আছে টিন,লেড, অ্যালুমিনিয়াম,কপার,জিংক,ক্রোমিয়াম,ক্যালসিয়াম প্রভৃতি।
- বিভিন্ন ভিটামিন মধুতে বিদ্যমান রয়েছে যেমন- ভিটামিন-ই,ভিটামিন-সি বা অ্যাসকরবিক এসিড,ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ বা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-১,বি-২,বি-৩, বি-৪,বি-৫,বি-৬ ইত্যাদি।
- মধুতে বিভিন্ন জৈবিক এসিড আছে যেমন- টারটারিক এসিড,ম্যালিক এসিড,সাইট্রিক এসিড এবং অক্সালিক এসিড।
- মধুতে আরো বিদ্যমান এন্টিবায়োটিকস, প্রোটিন,সাইস্টোস্ট্যাটিক্স,হরমোনস,পানি,এসিটাইল কোলিন, ফাইটোনসাইডস প্রভৃতি।
মধু(Modhu) খাওয়ার উপকারিতা সমূহ। মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
১০০ গ্রাম মধুতে রয়েছে ২২৮ ক্যালোরি । অসংখ্য পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণের ভরপুর মধু শরীরের তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে, শরীরকে শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করে তোলে। মধু শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,শরীরকে সুস্থ রাখে এবং বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করে। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে মধুর জুড়ি মেলা ভার। এই সর্বগুণ সম্পন্ন মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
মধু যেহেতু মহা ওষুধ তাই এর উপকারিতা সীমাহীন। সকল দেশের, সকল পর্যায়ের, বিভিন্ন বয়সের মানুষ মধুকে পুষ্টকর,ঔষধিগুন সম্পন্ন ও শক্তিবর্ধক পানীয় হিসেবে অতি আগ্রহ সহকারে সেবন করে আসছে। মধু হলো মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। চলুন তাহলে এবার জেনে নিই মধু খাওয়ার উপকারিতা।
- মধুতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে এবং কোষকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে ।
- দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
- মধু কোলেস্টেরলবিরোধী হওয়ায় হাই ব্লাড প্রেসার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- যাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম,,,রক্ত স্বল্পতায় ভোগেন যারা যেমন- বৃদ্ধ মানুষ, মেয়ে মানুষ তাদের নিয়মিত ও পরিমিত মধু সেবন করলে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা দূর হবে।
- মধু হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালি প্রসারনের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে যার ফলে হৃদপেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যের জন্য মধু বেশ উপকারী, এটা দাঁতের উপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে ও দাঁতে পাথর জমাটবাধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
- শীতের সময় মধু খেলে শরীরে তাপ বাড়ে ফলে শরীর গরম থাকে।
- মধু (Honey) মাধা ব্যাথা দুর করে, বাতের ব্যাথার উপশম করে।
- মধু খেলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে বিভিন্ন রোগ বালায় আমাদের থেকে দুরে থাকে।
- মধু এন্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে। মধুতে থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল ধর্ম,শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে ফেলে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- মধুতে আছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
- মুখের দুর্গন্ধ দুর করে, মুখকে ফ্রেশ রাখে।
- মধু খেলে ত্বক ও চুল সুন্দর হয়। তাছাড়া মেয়েরা মধু দিয়ে বিভিন্ন মাস্ক বানিয়ে মুখের ত্বকে ও চুলে ব্যবহার করতে পারে।
- মধু খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দুরীভুত হয়। ফলে পাকস্থলীতে আলসার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- ঠান্ডা লাগা, হাঁপানি ও অ্যাজমার মতো রোগ থেকে মুক্তি দেয় এই মধু।
- ৬ মাস বয়সের বেশি শিশুদের নিয়মিত ২/৩ ফোটা করে মধু খাওয়ালে শিশুদের শরীরের গঠন শক্তিশালী ও দৃঢ় হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
- মধু রক্ত পরিশোধন করে,,, ফলে শরীর শক্তিশালী ও কর্মক্ষম হয়।
- মধু ফুসফুসের যাবতীয় রোগ নিরাময় করে। হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রোধে সহায়তাকারী।
- একটি গবেষণায় দেখা যায় যে চল্লিশোর্ধ নারীদের মধু খাওয়ার ফলে হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমে।
- মধু অনিদ্রা দূর করে।রাতে মধুর খাওয়ার পর ঘুমালে ঘুম ভালো হয়।হাতের তালুতে ১থেকে২ চামচ মধু নিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত এভাবে খেলে ঘুমের সমস্যা দূর হবে এবং শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে।
- সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানিতে ১থেকে২ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে মেদ ঝরে এবং শরীরের ওজন কমে। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, শরীরের ওজন কমাতে চান, শরীর ফিট রাখতে চান তারা এভাবে মধু খেতে পারেন।
- মধু আমাদের দেহকে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করে কেননা মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা।
- মধুতে রয়েছে বি কমপ্লেক্স ফলে মুখের ঘা এর জন্য মধু ভীষণ উপকারী।
- মধু খেলে বার্ধক্য দেরিতে আসে।
- যারা ব্যায়াম করেন তারা ব্যায়াম করার পর মধু খেতে পারেন, এতে তৎক্ষণাৎ শরীর শক্তি ফিরে পায় এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
- তাপ শক্তি যোগিয়ে, শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে এই মধু।
- যাদের পাকস্থলীর সমস্যা রয়েছে তারাও মধু খেতে পারেন। মধু পাকস্থলীর কাজকে বৃদ্ধি করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে।
- মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
- যাদের পানির শূন্যতা সমস্যা রয়েছে বা ভেঙ্গে যায় ডায়রিয়া হলে ১ লিটার পানিতে ৫০ মিলি মধু মিশিয়ে খেলে পানি শূন্যতা দূর হয়।
- তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিসীম, এটি ত্বকের ভাঁজ পড়া ও ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
- নিয়মিত মধু খেলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে রক্তস্বল্পতা রোধ করা যায়।
- মধু এন্টিসেপটিক হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। কোনো ক্ষত স্থানে মধু লাগালে সেটা এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করবে। অনেক সভ্যতাই মধুকে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
মধু (Honey)খাওয়ার অপকারিতা। মধু(Honey) খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
অসংখ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মধু খাওয়ার উপকারিতার কথা তো বলে শেষ করা যাবেনা, তবে মধু খাওয়ার কিছু অপকারিতাও আছে।
সেগুলো আপনাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আলোচনা করা হলো।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকে প্রতিদিন মধু খেয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত মধু খেলে পেটে ব্যাথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে।
- যারা ডায়াবেটিস এর রুগী আছেন তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাওয়া উচিত। কেননা মধুতে ন্যাচরাল কার্বহাইড্রেট বিদ্যমান। বেশি পরিমানে মধু খেলে রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়। যা ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য বড় ক্ষতির কারন হতে পারে।
- মধু খাওয়া অনেক সময় গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি করে। ফলে পেট ব্যাথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ফলে অধিক পরিমানে মধু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মধু যদি গ্যাসের সমস্যা হয় তাহলে মধু না খাওয়ায় ভালো।
- অতিরিক্ত মধু খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়, দাঁত ও ভঙ্গুর বিবর্ণ হয়ে যায়।
- মেয়েরা রুপচর্চায় মধু ব্যবহার করেন। কিন্তু কারো যদি মধুতে অ্যালার্জির সমস্যা হয়, ত্বক যদি চুলকায় বা মুখের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায় তাহলে আপনার ত্বকে মধু ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
উপসংহার ।মধু খাওয়ার ৩৩টি উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা
পরিশেষে আপনাদের বলি, মধু খাওয়ার কিছু অপকারিতা থাকা সত্ত্বেও মধু খাওয়ার উপকারিতার কোনো শেষ নেই। বিভিন্ন ভিটামিন, পুষ্টিগুন ও ঔষধিগুনে পরিপূর্ণ মধু আমাদের শরীরে নানা রকম সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। মধুতে রয়েছে ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ধর্ম যা আপনার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আবার মধু সহজে নষ্ট হয় না, যার ফলে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে আপনি মধু খেতে পারবেন। তাই যদি মধু খেলে আপনাদের কোনো শারিরীক সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বা ডায়েট চার্টে মধু রাখা বাঞ্ছনীয় বলে আমি মনে করি।
আমার সংগ্রহ করা তথ্যগুলো যদি আপনাদের উপকৃত করে থাকে তাহলে আমার লেখা সার্থক। এ বিষয়ে কোন কথা বলার থাকলেই বা কোন ভুল ত্রুটি মনে হলে মন্তব্যের বক্সে এসে মন্তব্য করুন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url