জমজম কূপের পানি পান করার দোয়া ও জমজম কূপের পানি পান করার নিয়ম
Laila Ismat
১৯ ফেব, ২০২৪
জমজম কূপের পানি মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র ও বরকতময় পানি। মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত জমজম কূপ। সৌদি আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবা শরীফ থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে অবস্থিত এ জমজম কূপ। কূপের পানিকে সর্ব রোগের ওষুধ বলে মনে করেন মুসলিমরা এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সেরা পানি। শুধু তাই নয় এর সমমান সম্পন্ন পানি পৃথিবীতে আর কোন জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জমজমের পানি পান করার দোয়া, জমজম কূপের রহস্যজনক তথ্য ও জমজমের পানি পান করার নিয়ম সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো । তাহলে চলুন এসব বিষয় জেনে নিন ।
আপনি অবশ্যই জানেন যে, পৃথিবীতে যতগুলো কূপ আছে তার পানি একদিন না একদিন শুকিয়ে যাবে। কুপের পানির স্তর নিচে নেমে সেটা শুকিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনি এখন পর্যন্ত হয়তো অনেক পুরনো কূপ দেখেছেন যেগুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। ঐ কূপে যত পানি ছিলো সব পানি তুলে নেয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে কূপের পানি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটা কূপ রয়েছে যার পানির লেয়ার ও গুণগত মান প্রায় ৫০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই রকম আছে। সেটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও বরকতময় পানি জমজম কূপের পানি । মহান আল্লাহ তাআলার কুদরতের বাস্তব নিদর্শন হচ্ছে এই জমজম কূপের পানি।
বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম হজ করতে গিয়ে এ জমজম কূপের পানি পান করে এবং সঙ্গে করে কিছু নিয়ে আসুক আর না নিয়ে আসুক জমজম কূপের পানি নিয়ে আসেই । বিশ্বের সকল মুসলিমদের কাছে এই পানি এতটা বিশুদ্ধ পবিত্র যে, তারা মনে করে এই পানি পান করলে কোন দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া কবুল করেন।
জমজম কূপের পানি পান করার জন্য নবী কারীম (সা) থেকে বিশেষ কোন দোয়া বর্ণিত হয়নি। এমন কোন দোয়ার নবী কারীম (সা) বলে দেননি বা বেধে দেননি যেটা না বললে জমজম কূপের পানি পান করা যাবে না । তবে একটি বর্ণনায় আসছে যে, ইবনে আব্বাস (রা) জমজম কূপের পানি পান করার সময় একটি দোয়া পড়তেন। সেই দোয়াটি হলঃ
অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার কাছে চাচ্ছি আমি ফলপ্রদ জ্ঞান, প্রসস্থ রিজিক আর সকল রোগ থেকে সুস্থতা বা আরোগ্য।
জমজম কূপের পানির অজানা সব রহস্যজনক তথ্য। জমজম কূপের পানি পান করার দোয়া ও জমজম কূপের পানি পান করার নিয়ম।
জমজম কূপকে বলা হয় পৃথিবীর সবথেকে আশ্চর্যজনক একটি পানির উৎস। প্রতিদিন এই জমকম কূপ থেকে সাড়ে চার লক্ষ লিটার পানি বের হয়ে থাকে। সারারণত কোনো কূয়া থেকে পানি তুললে পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে। কিন্তু জমজম কূপের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। ইব্রাহীম (আঃ) থেকে এখন পর্যন্ত এই জমজম কূপের পানি পান করা হচ্ছে। তারপরেও জমজম কূপের পানির স্তর একই রকম আছে। জমজম কূপের পানিকে একটি রহস্যময় পানি বলা হয়ে থাকে ।
ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে জমজমের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র পানি এবং এই পানিতে সব ধরনের রোগে নিরাময় রয়েছে । এই পানিতে এমন কিছু পার্টিকেল রয়েছে যা শুনলে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না । ইসলাম ধর্মে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যা সাধারণ বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা একেবারে অসম্ভব । এই অসম্ভব ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে জমজম কুপের পানি ।মক্কা মদিনায় যত হাজিরা যায় তারা জমজম কূপের পানি পান করে এবং এগুলো বোতল জাত করে নিজের দেশে নিয়ে যায় । কারণ মুসলিমরা মনে করে এটি সবথেকে পবিত্র পানি ।
জমজম কূপ নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক গবেষণা করা হয়েছে । একেকজন বিজ্ঞানী একেক রকম মতামত দিয়েছে । তবে বর্তমানের বিজ্ঞানীরা জমজম কূপকে দেখে সত্যি অবাক হয়ে গেছে । জমজমের পানিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও মিনারেল যুক্ত পানি বলা হয় । এর কারণ জানতে এখন পর্যন্ত অনেক বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে এটা নিয়ে রিসার্চ করেছে । আর এই সকল বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন ছিলেন 'মাসারু ঈমেটো' । তিনি এ জমজমের পানি নিয়ে অনেক বছর ধরে রিসার্চ করেছেন এবং তিনি যে ফলাফল দিয়েছেন তা মানুষের চোখে কপালে তুলে দিয়েছিল ।
'মাসারু ঈমেটো' এমন একজন বিজ্ঞানী যিনি পৃথিবীর বিভিন্ন পানি নিয়ে গবেষণা করে থাকেন । আর জমজমের পানির উপর রিসার্চ করার জন্য তার থেকে ভালো বিজ্ঞানের হতে পারে না । এই গবেষণা অনেক বছর ধরে চলছিল কারণ এই বিজ্ঞানী বুঝতে পারছিলেন না যে এই পানির ভিতরে আসলে কি এমন আছে । এই ধরনের পানি তিনি এর আগে আর কখনোই দেখেননি বলে তিনি মতামত প্রকাশ করেছিলেন ।
তিনি বলেছিলেন জমজমের পানির পার্টিকেলকে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা যেত না। জমজমের পানির কণা অনেক ছোট । পরবর্তীতে তিনি রিসার্চ বলে জানতে পারলেন এ জমজমের পানির একটি ক্রিস্টাল সাধারণ পানির একশ ক্রিস্টালের সমান। দীর্ঘদিন গবেষণা করার পর তিনি এই মতামত দিন যে জমজমের এক ফোঁটা পানিতে যে শক্তি রয়েছে সাধারণ পানির হাজার ফোঁটা পানিতে শক্তি রয়েছে । জাপানি এই বিজ্ঞানীর কথা অনুযায়ী জমজমের পানি কোন চমৎকারের চেয়ে কম নয়।
সাধারণ পানির ক্রিস্টাল গুলোর ছবি তুললে সেটি একটি থেকে আরেকটি আলাদা হয়ে থাকে কিন্তু জমজমের পানির প্রত্যেকটি খ্রিস্টান একই রকম হয়ে থাকে । এই পানি ক্রিস্টাল গুলো একই আকারের এবং একই গুণের হয়ে থাকে । জমজমের পানির যে ক্রিস্টাল গুলো থাকে সে ক্রিস্টালগুলো সাধারণ পানির ক্রিস্টাল গ্রুপ থেকে অনেক সুন্দর হয় ।
এছাড়া জমজমের পানি পৃথিবীর একমাত্র পানি যে পানি কখনো নষ্ট হয় না । এ পানি আপনি যতদিন রেখে দেন এই পানিতে কোন জীবানু জমবে না । মজার ব্যাপারটি হচ্ছে এই পানিতে আপনি কোন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাবেন না । জমজম কূপ বিশ্বের একমাত্র কুয়া যে কুয়ার পানিতে কোন জীবাণু নেই এবং এই পানিতে কোন গন্ধ নেই ।
অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যদি জমজম কূপের পানি পান করে থাকে তাহলে তার ক্ষুধা মিটে যায়, তাছাড়া জমজমের পানিতে অনেক শক্তি থাকে , আপনি যদি ক্লান্ত অনুভব করেন তাহলে জমজমের পানি খেলে আপনার ক্লান্তি দূর হবে ।জমজমের পানিতে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ অনেক বেশি সাধারণ পানির তুলনায় । তাই হাজিরা যখন অনেক ক্লান্ত অবস্থায় জমজম কূপের পানি পান করেন তখন তাদের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
তাছাড়া জমজমের পানিতে ফ্লোরাইট থাকে এ ফ্লোরাইড আসলে একটি জীবাণুন নাশক হয়ে থাকে। এই পানির স্বাদ আগে যেমন ছিল এখনো তেমন আছে । এই পানের ক্রিস্টালে যেমন পরিবর্তন হয়নি তেমনি এই পানির স্বাদেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি । এই পানিকে রাসায়নিক পদার্থদিয়ে পিউরিফাই করার প্রয়োজন নেই কারণ কারণ এই পানির মতো পিউরিফাই পানি পৃথিবীতে আর নেই । সাধারণ কূয়ার মধ্যে অনেক জৈবাল আবর্জনা জন্ম নেই কিন্তু জমজম কূপের মধ্যে কোন জৈবাল আবর্জনা বা প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কাজে বোঝাই যাচ্ছে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও পবিত্র পানি।
জমজম কূপের পানি পান করার নিয়ম। জমজম কূপের পানি পান করার দোয়া
জমজম কূপের পানি আল্লাহ তায়ালার এক বিস্ময়কর নিদর্শন। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আঃ) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) কে মক্কায় রেখে আসেন। তখন মক্কায় ঘর বাড়ি গাছপালা কিছুই ছিলো না, ছিলো শুধু বালি আর বালি। কিছুদিন পর হাজেরা (আঃ) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) এর কাছে খাবার ও পানি শেষ হয়ে যায়। ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত কান্নারত শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) এর জন্য হাজেরা (আঃ) খাবার ও পানির খোঁজে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন ইসমাইল (আঃ) একা মরুভূমির উপর শুইয়ে রেখে। তখন ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত শিশু ইসমাইল (আঃ) হাত পা ছোড়াছড়ি করে কাঁদতে থাকলে তাঁর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানি বের হয়। এই পানিই হচ্ছে পবিত্র জমজম কূপের পানি।
কোনো ব্যাক্তি যদি তাঁর কোনো নেক আশা পূরণের নিয়তে যদি জমজম কূপের পানি পান করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার সেই নেক আশা পূরণ করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) জমজম কূপের পানিকে ক্ষুধার্তদের জন্য ক্ষুধা নিবারক, রোগীদের জন্য রোগ নিরাময়ক বলে উল্লেখ করেছেন। জমজম কূপের পানি হচ্ছে কুদরতি পানি। এই পানি পান করার কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়মগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
অন্য যেকোনো পানির মতো জমজম কূপের পানি পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলতে হয়।
আমরা অনেক সময় বেশি পিপাসার্ত অবস্থায় থাকলে ১ নিঃশ্বাসে গ্লাসের সব পানি শেষ করি। কিন্তু মহানবী (সা) ৩ ঢোকে পানি পান করতে বলেছেন। আর বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমানিত হয়েছে যে, এক নিঃশ্বাসে পানি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অন্য পানির মতো জমজম কূপের পানিও ৩ ঢোকে পান করতে হয়।
প্রিয় নবী (সাঃ) বিশ্বের সকল পানি ও খাবার বসে খেতে বলেছেন। আবার বিজ্ঞানও প্রমান করেছে যে, দাঁড়িয়ে পানি পান করা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু শুধু মাত্র জমজম কূপের পানি মহানবী (সাঃ) দাঁড়িয়ে পান করতেন। তাই নবীজী (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমাদেরও জমজম কূপের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হবে।
পরিশেষে। জমজম কূপের পানি পান করার দোয়া ও জমজম কূপের পানি পান করার নিয়ম।
জমজম কূপের পানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। দুনিয়ার কোনো পানির সাথে জমজম কূপের পানির কোনো তুলনা হবে না। জমজম কূপের পানিতে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত ও বরকত। এজন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে জমজম কূপের পানি পান করা সৌভাগ্যের ব্যাপার।
আশা করছি উপরের লেখাগুলো খুব ভালোভাবে পড়েছেন। লেখাগুলো পড়ে জমজম কূপের পানি সম্পর্কে বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন, জমজমের কূপের পানি পান করার দোয়া ও পানি পান করার নিয়ম, যা আপনাকে উপকৃত করবে। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
ট্রাসটেডএয়ার্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url